দেশের সময় : তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ১৯৫৫ সালে ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বনগাঁয় উত্তর২৪পরগনা জেলা গ্রন্থমেলার অনুষ্ঠান মঞ্চে অসংখ্য শিশুদেরকে নিয়ে তাঁরই প্রতীকী ছবি আঁকা কেক কেটে বনগাঁবাসীর সঙ্গে আনন্দভাগ করে নিলেন পুর প্রধান গোপাল শেঠ। দিদির ছবি আঁকা কেক পেয়ে খুশিতে মাতল ক্ষুদেরা৷ মঞ্চে তখন কচিকাঁচাদের কন্ঠে একটাই শ্লোগান হ্যাপীবার্থডে দিদি… ৷
রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, একে অপরের প্রতি সৌজন্য দেখাতে কখনও ভোলেন না নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁকে এদিন শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতি বছরের মতো এবারও একটি টুইট করে নরেন্দ্র মোদী মমতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মমতা দিদিকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। তাঁর দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কামনা করি।”
এ বছর ৬৮-তে পা দিলেন সকলের প্রিয় দিদি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশিই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য টুইটে শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যায়। একে একে তাঁকে জন্মদিনের উইশ করেন, বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, NCP নেতা শরদ পাওয়ার সহ একাধিক রাজনীতিবিদ এবং মুখ্যমন্ত্রীরা। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও দলের সুপ্রিমোর জন্মদিনে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁর মঙ্গলকামনায় বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়েছেন অনুগামীরা। আলাদাভাবে নিজের জন্মদিন সাড়ম্বরে পালন করায় বিশ্বাসী নন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তিনি মানুষের মধ্যে মিশে যেতেই পছন্দ করেন। ফলে জন্মদিনে নিজের জন্য কোনও আড়ম্বর নয়, রাজ্যের মানুষের জন্যই নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সম্প্রতি দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সৌজন্যতা দেখাতে। উল্লেখ্য, সম্প্রতিই মাতৃবিয়োগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মায়ের শেষকৃত্যের পরই ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাংলার দু’টি রেল প্রকল্প বন্দে ভারত এবং জোকা-তারাতলা রুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।
Birthday greetings to Mamata Didi. Praying for her long and healthy life. @MamataOfficial
— Narendra Modi (@narendramodi) January 5, 2023
মাতৃবিয়োগের পরও প্রধানমন্ত্রীকে কর্তব্যে অবিচল দেখে সাধুবাদ জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্যক্তিগত জীবনে আপনার এতবড় ক্ষতি সত্ত্বেও আপনি বাংলার জন্য ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি সবেমাত্র মায়ের শেষকৃত্য সেরে এসেছেন। একটু বিশ্রাম নিন।” একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন ছিল, “আপনার পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই আমার। মায়ের কোনও বিকল্প হতে পারে না। আপনার মা, আমারও মা। এটা আপনার জন্য খুবই দুঃখের দিন। ঈশ্বর আপনাকে শক্তি দিক এই শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য।”
জানুন তৃণমূল গঠনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে:
যোগামায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কলেজে পড়ার সময়েই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১৯৭৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়প্রকাশ নারায়ণের গাড়ির সামনে প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই সময়ের সংবাদমাধ্যমের মূল নজরে আসেন তিনি।
এর পরে তিনি কংগ্রেসের মহিলা শাখার জেনারেল সেক্রেটারি হন। ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের যুব শাখার জেনারেল সেক্রেটারি হন তিনি।
১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বাম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৯১ সালে কেন্দ্রের নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানব সম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত হন।
কিন্তু সরকারের সঙ্গেই পরে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। মন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসেন তিনি।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস বাংলার সেই সময়ের বাম সরকারকে সাহায্য করছে।
পরে কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।