মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এবার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে পুজো উদ্বোধন নাও করতে পারেন তা দ্য ওয়ালে সবার আগে লেখা হয়েছিল। তার কারণ মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চোটের এখনও নিরাময় হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে কলকাতা ও জেলার কয়েকশো পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে সে কথাটাই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্লাব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, উদ্বোধনে তো আর দেখা হল না কার্নিভালে দেখা হবে।
এদিন শ্রীভূমি স্পোটিং সহ কলকাতার কয়েকটি ক্লাবের পুজো উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জেলার বহু পুজোরও উদ্বোধন করেছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তালিকায় ছিল উত্তর২৪পরগনার গোবরডাঙা গড়পাড়া বিধান স্মৃতি সংঘ ও ৷ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধন দেখতে ভিড় জমান স্থানীয় মানুষ ৷ দেখুন ভিডিও
ক্লাবগুলির উদ্দেশে তিনি বলেন, “এমনিতে আমি ঠিক আছি। কিন্তু পায়ে একটা চোট আছে। একটা ইনফেকশন হয়ে আছে। ওটা সারতে সময় লাগবে। তাই ডাক্তাররা বেশি হাঁটাহাটি করতে বারণ করেছেন। তাই যেতে পারলাম না”। মমতা তাঁদের বলেন, “যেতে পারলাম না তো কী হয়েছে, আমি মনে মনে তোমাদের সঙ্গেই আছি।”
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, শেষমেশ হয়তো দু-একটি মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন। যেমন ববি হাকিমের চেতলা অগ্রণীর পুজো বা অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সঙ্ঘের পুজো ইত্যাদি। তবে আগের মতো ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে পুজোর পর। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, পায়ের চোটের জন্য কার্নিভালের আগে তিনি খুব বেশি বেরোবেন না।
পুজো কমিটিগুলোকে এবারও ৭০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে রাজ্য সরকার। অনেকের মতে, ক্লাবগুলিকে সরকারের পাশে রাখার জন্যই এই অনুদান। বিরোধীরা অনেকেই আবার একে খয়রাত বলেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ ব্যাপারে একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। তাঁর মতে, ক্লাবগুলি প্রচুর সামাজিক কাজকর্ম করে। সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। তাদের উৎসাহ দিতেই এই অর্থ দেয় সরকার। দেখুন ভিডিও
গত ১২ সেপ্টেম্বর স্পেন ও দুবাই সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরেছিলেন ২৩ সেপ্টেম্বর। মাঝে স্পেনে তাঁর পুরনো চোটের জায়গায় নতুন করে আঘাত লাগে। কলকাতায় ফেরার পরের দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়। তার পর থেকে তিনি বাড়িতেই রয়েছেন।
মমতা জানিয়েছেন, স্পেনে আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও তিনি সেখানে চিকিৎসকদের দেখাননি। কারণ, তাতে আন্তর্জাতিক কর্মসূচি ব্যাহত হতে পারত। তাই কলকাতায় ফিরে চিকিৎসকদের দেখান। তাঁর একটি অস্ত্রোপচারও (প্রসিডিয়োর) হয়েছে বলে জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেরও বিভিন্ন জেলার পুজো উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কালিম্পঙে যে পরিবারগুলি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের রাজ্য সরকারের তরফে তিন লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
‘ইউনেস্কো’ বাংলার দুর্গাপুজোকে আবহমান ঐতিহ্যের তকমা দেওয়ার পর এ বারই প্রথম পুজো। পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার অনেক বিদেশি অতিথি আসবেন। তাঁরা কোথায়, কখন যাবেন আমরা জানি না। তবে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। তাঁরা গেলেই শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনিতে তাঁদের বরণ করে নেবেন।’’ পাশাপাশিই মমতার পরামর্শ, ‘‘মেয়েদের বলবেন শিশিতে গুড়ের নাড়ু বানিয়ে রাখতে। সেগুলি অতিথিদের হাতে তুলে দেবেন। ওটা আমাদের ট্র্যাডিশন।’’ প্রথম পর্বের উদ্বোধনের পর খানিক ক্ষণের বিরতি নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর ফের ভার্চুয়াল উদ্বোধন শুরু করেন।