সন্দেশখালির সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মহিলাদের উদ্দেশে বড় বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘কোনও দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়বেন না’। একই সঙ্গে, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বেশি কথা না বললেও, স্বল্পভাষণেই বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি।
সরকারি পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই মূলত সন্দেশখালি গেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সন্দেশখালিতে গিয়ে সেখানকার বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে কথা বলবেন না, এটা হবে না। সন্দেশখালির মহিলাদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট বলেন, ”কোনও দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়বেন না। মেয়েরা, কেউ ডাকল আর চলে গেলেন, এমনটা করবেন না।” একই সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের টাকা কাউকে না দেওয়ার স্পষ্ট বার্তাও তিনি দেন। মমতা বলেন, ”আপনার টাকা, আপনার অধিকার। আমাদের প্রকল্পের জন্য টাকা লাগে না। কাউকে টাকা দেবেন না।”
এরপরই নিজের ভাষণে বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, ”আমি জানি এখানে টাকার অঙ্কের খেলা হয়েছে। পরে দেখলেন তো, সবটাই ভাঁওতা, মিথ্যে বেশিদিন চলে না।” তবে মমতা এও বলেন, যা হয়েছে, হয়েছে। তাঁর কিছু ‘মনে নেই’, তিনি ভুলে গেছেন!
সন্দেশখালির মঞ্চ থেকে বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও নিশানা করেন মমতা। বলেন, বিজেপির অনেক টাকা আছে, কিন্তু সেটা অন্যায়ের টাকা। ওই টাকায় যেন কেউ হাত না দেন। আর সিপিএমকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, সবথেকে বেশি মানুষকে অত্যাচার করত যারা, তারা এখন বড় বড় কথা বলছে। মমতার কথায়, ”ওটা নরকঙ্কাল, অত্যাচারীর দল। এদের মিথ্য কথায় ভুলবেন না। মনে রাখবেন, দিদিকে বললে দিদি কাজ করবে।”
মহিলাদের তো বটেই, সন্দেশখালির মানুষকে বার্তা দিয়ে মমতা এও বলেন, এখানে কিছু হলে তিনি ১ সেকেন্ডের মধ্যে জানতে পারবেন। হিঙ্গলগঞ্জ, বাদুরিয়া, বসিরহাটে কিছু হলেও তিনি কয়েক সেকেন্ডে জানতে পারবেন। তাই কেউ যেন কিছুতে ভয় না পান। শুধু সামনের দিকে কী করে এগিয়ে যেতে হবে সেটা যেন ভাবেন। মমতার কথায়, তিনি ২৪ ঘণ্টা পাহারাদারের কাজ করেন সাধারণ মানুষের জন্য।
দীপাঞ্চল সন্দেশখালিতে এমন বহু প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই উন্নত হয়। কিছুটা ভৌগোলিক কারণেও এই প্রতিকূলতা রয়েছে। সব দিক বিচার করে এরকম প্রত্যন্ত এলাকার জন্য ফের শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’। সোমবার সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এই শিবির। একইসঙ্গে তিনি জানান, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় নতুন মহকুমা হবে। মানুষকে আরও কাছাকাছি পরিষেবা দিতেই এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি। অর্থাৎ সরকারি কাজকর্মের জন্য দূরে যেতে হবে না।
এর আগে ২০২২ সালেই রাজ্যে সাত নতুন জেলার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে ছিল বসিরহাটও।এ বার ফের তিনি একবার সে কথা মনে করিয়ে দিলেন। লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। রাজ্য রাজনীতিতেও তার প্রভাব ছিল ততটাই। সেই ঘটনার পর এই প্রথম সন্দেশখালি গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সন্দেশখালির ঋষি অরবিন্দ মিশনের মাঠে সভা করেন তিনি। সেখান থেকেই মমতা জানান, ১৪-১৫-১৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলা চলবে। মানুষের বাড়ি ফিরতে ফিরতে ১৬-১৭-১৮। ২৩ তারিখ নেতাজির জন্মদিন। ২৬ তারিখ সাধারণতন্ত্র দিবস। এর পরই হবে দুয়ারে সরকারের শিবির
মমতার কথায়, ‘বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যাদের যাতায়াতের অনেক সমস্যা হয়, নদী পেরিয়ে যেতে হয়, সেখানে আরেকটা করে দুয়ারে সরকার করার জন্য আমি মুখ্যসচিবকে বলব। যাঁরা এখনও কাস্ট সার্টিফিকেট, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে নাম লেখাতে পারেননি, স্বাস্থ্যসাথী, পাট্টা পাননি, তাঁরা যাতে সুযোগ পান।’
তবে একই সঙ্গে এ দিন বারবার মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য উপভোক্তারা কাউকে যেন একটিও টাকা না দেন। মমতা বলেন, ‘এটা সরকারের টাকা, সরাসরি ব্যাঙ্কে যাবে। কেউ চাইলেও টাকা দেবেন না। আপনার অধিকারই আপনাকে ফেরানো হচ্ছে।’
এদিন নিজের ভাষণ ‘সন্দেশখালি জিন্দাবাদ’ বলে শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।