লোকসভা নির্বাচনের আবহে কোচবিহারের ময়দানে মাত্র ৩০ কিলোমিটার ব্যবধানে হাইভোল্টেজ সভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাথাভাঙার জনসভায় বক্তব্যের শুরুতেই কেন্দ্রের সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন মমতা। তাঁর কথায়, “নির্বাচন এলেই ভাঁওতা দেওয়া বেড়ে যায়। আজকে আসবেন। দেখবেন, কত কুমিরের অশ্রু ঝরবে, কত কাঁদবেন।
এর আগে কোচবিহারে কোনও দলের রাজনৈতিক নেতারা আসতেন না। আমি সরকারে আসার পর বারবার এসেছি। যেদিন থেকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, সেদিন থেকে বাংলার উপর অত্যাচার করছে। বাংলার সব প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। এদের লক্ষ্য, বিজেপিকে ভোট দাও, এজেন্সি থেকে মুক্তি পাও। আপনাদের বলছি, এজেন্সির সামনে মাথা নোয়াবেন না। কেউটে সাপকে বিশ্বাস করতে পারেন, বিজেপিকে করবেন না।”
জনসভায় শীতলকুচির প্রসঙ্গেও সরব হন তিনি। মমতার অভিযোগ, “শীতলকুচিতে ৫ জনকে গুলি করে খুন করেছিল। রাজবংশী আর সংখ্যালঘু ভাইদের খুন করেছিল। কোচবিহারের তৎকালীন এসপিকে বিজেপি বীরভূমের প্রার্থী করেছে। পার্টির দালালি করে মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে, এর অধিকার কারও নেই।”
এই সভা থেকেই নিশীথ প্রামাণিককেও কটাক্ষ করেছেন মমতা। নাম না করে নিশীথের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আমি ওকে দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের দলের আপদ আজ বিজেপির সম্পদ। ২০-৩০টা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের উদয়নের উপর হামলা করেছিল। ওর বিরুদ্ধে মামলাগুলো এবার ফাঁস করব। যার বিরুদ্ধে হাজার মামলা, সেই বিজেপির মন্ত্রী! এটা লজ্জার।” সেই সঙ্গে নিশীথের প্রতিপক্ষ তৃণমূলের প্রার্থী জগদীশ বাসুনিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করে মমতা বলেন, “ও হিরের টুকরো ছেলে। কথা কম বলে, কাজ বেশি করে। রাজবংশী সম্প্রদায়ের জন্য বহু কাজ করেছে।”
ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘটনার রাতেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পৌঁছে যান নিহতদের বাড়িতেও। সকলের পাশে থাকার বার্তা আগেই দিয়েছিলেন। আজকের সভায় ফের দুর্গতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “সেদিন পৌঁছে রাত ৪টে পর্যন্ত জেগে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ঘুরে দেখেছি। বার্নিশে ৭০০ বাড়ির কোনও চিহ্ন নেই। ৫০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বাড়িগুলো তৈরি করে দেব। কমিশনকে অনুরোধ, প্রশাসনকে কাজে বাধা দেবেন না।”
বিজেপি প্রার্থী ভয় দেখালেই থানায় ডায়েরি করার পরামর্শ দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারের মাথাভাঙার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এবারেও দেখবেন বিএসএফ নিয়ে বিজেপি প্রার্থী আপনাদের এলাকায় গিয়ে ভয় দেখাবে। ভয় দেখালেই মেয়েরা ডায়েরি করবেন থানায়। নিশ্চিন্তে থাকবেন, আমি দেখে নেব।
ভয় দেখালেই ডায়রি করবেন, বলা থাকল। আর যদি কোনও থানা ডায়েরি নিতে অগ্রাহ্য করে সরাসরি আমায় লিখে পাঠাবেন। উত্তরবঙ্গেও আমার একটা সচিবালয় আছে. অভিযোগ যে কোনও সময় যে কোনও কারও মাধ্যমে নেওযা যেতে পারে।’ মমতা আরও বলেন, ‘আজকাল তো ইমেলেও অভিযোগ করে দেয়। নানারকম পদ্ধতি আছে। পোস্টকার্ডেও করতে পারেন, গিয়েও করতে পারেন। আমি তো ঘুরব রোজই, আজই কোচবিহার এসেছি তা হয়, ৩ দিন আরও আসব।’
অন্যদিকে এদিন ভোটবাক্স পাহারা দেওয়ারও পরামর্শ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্রথম দফা – দ্বিতায় দফার পর যখন আমরা বাক্স রেখে দিই, ওরা কিন্তু চিপ লাগায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে। আমাদের যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়েন, সেই সময় লোডশেডিং করে দিয়ে করে। এই এক মাস, দেড় মাস লোকে যে ভোটটা দেবে…, বাক্সগুলোকে পাহারা দিতে হবে, যতদিন না রেজাল্ট বের হয়, বাক্স পাহারা দিতে হবে, এটা নাগরিকের অধিকার।’