দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বললেন, ভারতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই। বিরোধীদের মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ভয় দেখিয়ে।
সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক মামলায় ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তৎপরতা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে ইডি। আবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সবমিলিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাত পোহালেই স্বাধীনতা দিবস। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন চলছে দেশজুড়ে। তার ঠিক আগের দিন বেহালা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, বই লিখে, সেই বই বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি নিজের খরচ চালান। তাঁর এক-একটি বইয়ের রয়্যালটি ১০ টাকা। এমন ১২০টি বই বেরিয়েছে। তার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫ লক্ষ টাকা ইনকাম ট্যাক্স এবং ৩ লক্ষ টাকা টিডিএস হিসেবে দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর হার সুনিশ্চিত, সেই কারণেই তারা বাংলাকে দুর্বল করে দিতে চাইছে। শুধু বাংলা নয়, অন্যান্য রাজ্যের সরকারও বিজেপি ভাঙতে চাইছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, মহারাষ্ট্রের সরকার ইতিমধ্যে ওরা ভেঙে দিয়েছে। এভাবে বিজেপি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে।
মমতা কর্মী-সমর্থদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘কাল যদি আমার বাড়িতে যায়, কী করবেন? রাস্তায় নামবেন তো!’’ মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে কারা আসতে পারে তা তিনি স্পষ্ট করে না বললেও কর্মী, সমর্থকরা সমস্বরে আন্দোলনে নামার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করবেন তো? আমারটা আমি একাই লড়ে নেব। কিন্তু আপনাদেরটা আপনাদের লড়ে নিতে হবে তো!’’
এদিন অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রবিবার সন্ধ্যায় বেহালার দলীয় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেষ্টকে (অনুব্রত’র ডাক নাম) কেন গ্রেফতার করা হল? ওঁর দোষ কী? ওঁকে জেলে রেখে কী হবে?
বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে। গরু চুরির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিষয়টি বিচারাধীন। দল আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। সেই সঙ্গে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল দলের তরফে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনুব্রত’র ক্ষেত্রেও কি দল দূরে থাকবে?
আজ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট পার্থ আর অনুব্রতকে তৃণমূল এক দৃষ্টিতে দেখছে না। সরাসরি গ্রেফতারি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত সম্পর্কে মু্খ্যমন্ত্রী বলেন, ছেলেটা গত দু’বছর কষ্ট পেয়েছে। ওঁর স্ত্রী ক্যান্সারে কষ্ট পেত। কেষ্ট বলল, জানতো তোমার বৌমা। বলল, তুমি ভোটের কাজ করো।
মমতা বলেন, অনুব্রতকে অনেকবার এমপি, এমএলএ হতে বলছি। হয়নি। রাজ্যসভায় পাঠাতে চেয়েছি। যায়নি। তৃণমূল নেত্রী বলেন, সব খবর সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে। হোয়াট ইজ সূত্র। সূত্র কী মলমূত্র?
এরপরই বিজেপির দিকে কামান দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪-এ মোদী জিতবেন না। তাই খেলা শুরু করেছে। বাংলাকে দুর্বল করে দিতে চাইছে। যাতে তৃণমূল কেউ না করে। কিন্তু পারবে না। আগেও তো হাতেনাতে ধরলাম। ঝাড়খণ্ডের তিনজন এমএলএ গ্রেফতার হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও ভেঙেছে।
তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘ফেডারেল স্ট্রাকচারকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তোমার কেন ইডি হবে না? তোমার কেন সিবিআই হবে না? তুমি মহারাজ সাধু হলে আর আমি চোর হলাম।’ অন্য বিরোধীদেরও নিশানা করেন মমতা। বলেন, সিপিএম জগাই-মাধাই। এই কেসগুলো সব সিপিএমের আমলের কেস। আমি অশান্তি চাইনি বলে গায়ে হাত দিইনি। কুজনবাবু, মিস্টার চৌধুরী, কতগুলো খুন, কত গরু, কত কয়লা, গায়ে কত ময়লা, বের করব একটু?