হীনা রায় দুর্গাপুর সোমের পর মঙ্গল। আদালতের নির্দেশে চাকরি বাতিল নিয়ে ফের আরেকবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ভাষায়, “একতরফা রায়ে ২৬ হাজার লোকের চাকরি খাওয়া হয়েছে।” রায়ের সমালোচনার সঙ্গে বিজেপিকে বিঁধে মমতা বলেন, “আমরা চাকরি দিলে বিজেপি কোর্টকে দিয়ে চাকরি খেয়ে নেয়।” মমতার দাবি, ভুলটা যদি তাঁকে আগে বলা হত তবে তা সংশোধন করে নেওয়া হত।
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “সবটা কি আমি করি, আমি করি না। এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে, এসএসসি আলাদা আছে, প্রাইমারি বোর্ড আলাদা আছে, মাধ্যমিক বোর্ড আলাদা আছে, কলেজ কমিশন আলাদা আছে, এগুলো তাঁরা দেখেন”। এদিনও মমতার নিশানায় ছিল “গদ্দার”।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে নাম না করে তিনি শুভেন্দু অধিকারীকেই নিশানা করেছেন। এদিন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভাতারে জনসভা ছিল মমতার। সেখান থেকেই একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করেন তিনি। মমতার ভাষায়, কোর্ট কী রায় দেবে সেটা সে জানল কী করে?
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে শুভেন্দু বলেছিলেন চলতি সপ্তাহে “বোমা” ফাটবে। মঙ্গলবার ভাতারের সভা থেকে মমতা বলেন, “মানুষের চাকরি খেয়ে বোমা!” সবচেয়ে বড় যে কুকর্মটা করেছে তার নাম গদ্দার।” অভিযোগ করে মমতা বলেন, পুরুলিয়ার চাকরি কে বিক্রি করে দিয়েছিল?
এদিন রাজ্যের শস্য গোলা পূর্ব বর্ধমানে দাঁড়িয়ে রেশন ব্যবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ৩০,০০০ কোটি টাকা রাজ্য দেয় বলেই লোকে ফ্রিতে রেশন পায়। নরেন্দ্র মোদিকে “প্রচারবাবু” উল্লেখ করে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো অভিযোগ করেন, কেন্দ্র রেশন দিয়েছে শুধু করোনাকালে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা হয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্যদের কেন গুলিয়ে ফেলা হল, সিবিআই তাহলে বছরের পর বছর কী করছিল, মঙ্গলবার শহিদ মিনার থেকে সেই প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিহারাদের একাংশ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ভাতারের সভা থেকে এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ ধরা পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে। সোমবার আদালতের রায় সামনে আসার পরই নির্বাচনী সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কোর্টের অর্ডারে যাঁদের চাকরি গেল, কেউ ভেঙে পড়বেন না, সরকার আপনাদের পাশে আছে।”
এদিন ওই প্রসঙ্গেই বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ যদি কোনও ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা করেন, তার দায়িত্ব আপনারা নেবেন?”
এরপরই চাকরিহারা এবং তাদের পরিবারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাদের পাশে আছি।”
খানিক থেমে বিজেপির প্রতি আক্রমণ তীব্রতর করেছেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “কত লোককে চাকরি দিয়েছেন? বছরে ২ কোটি চাকরি দেবেন বলেছিলেন। ১টা লোককেও চাকরি দেননি। আর বাংলায় আমরা যখন চাকরি দিই, কোর্টকে দিয়ে চাকরিগুলো খেয়ে নেন।”
পরক্ষণেই মমতা মনে করিয়ে দেন, “আমি রায়দান সম্পর্কে বলছি, বিচারকের নাম নিয়ে আমার বলার প্রয়োজন পড়ে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যদি বলতো ভুল রয়েছে, তাহলে সংশোধন করে দিতাম। ভুল তো যে কারও হতে পারে। যারা এক তরফা রায় দিয়ে ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নেন, বলছে- ১ মাসের মধ্যে আট বছরের টাকা সুদ-সহ ফেরত দিতে হবে। যারা এতদিন স্কুলে পড়াল তাঁদের একটা সামাজিক সম্মান তৈরি হয়েছিল। এখন স্কুলের বাচ্চাগুলোকে কে পড়াবে? বিজেপির লোকজন?”
কটাক্ষের সুরে মমতা আরও বলেন, “সরকারি টাকায় চলবে, খাবে, সিকিউরিটি নেবে আর কলমের খোঁচায় অন্যের চাকরি খাবে। নিজের ছেলেমেয়ের চাকরিগুলো এভাবে গেলে কী করতে?”