দেশের সময়: বিরোধী জোট গঠনের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল নবান্নের চোদ্দতলার ঘর থেকেই। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কথা বলতে এসেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ছিলেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। মমতার সঙ্গে আলোচনার পরই নীতীশ কুমার রাজ্যে রাজ্যে সফর শুরু করেন। কথা বলেন অ-বিজেপি দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সিদ্দারামাইয়ার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যখন ১৭টি বিরোধী দলের নেতানেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা হাজির, তখন আমন্ত্রণ পেয়েও গেলেন না মমতা।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি যেদিন ওই অনুষ্ঠান এড়ালেন, সেদিনই কলকাতায় সিবিআই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাড়ে ন’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করল। ফলে অনেকেই বিষয়টিকে একে একে দুই করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, তা হলে কি অভিষেককে সিবিআই ডাকতেই বিরোধী জোটের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা শুরু করে দিলেন মমতা?
সিদ্দার শপথ এড়িয়ে কি ঘুরিয়ে মোদিকে বার্তা দিতে চাইলেন তিনি? না হলে কেন গেলেন না কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে? পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে, সিবিআই কি অভিষেকের কাছ থেকে সব প্রশ্নের উত্তর পেল? তাঁকে কি আবারও ডাকা হতে পারে? সিবিআই তলব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক। সোমবার সেই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা। সেখানে কি আদৌও স্বস্তি পাবেন অভিষেক?
সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে যেভাবে অভিষেক শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেছেন, নারদা মামলায় কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে কি শুভেন্দুর উপর চাপ বাড়ছে? বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে কংগ্রেস শনিবার শক্তি প্রদর্শন করেছে। বিরোধী ঐক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। সেখানে এম কে স্টালিন, নীতীশ কুমার, হেমন্ত সোরেনদের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা ছিলেন। ছিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, তেজস্বী যাদব, ফারুক আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি।
শুধু উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিনিধি হয়ে যোগ দেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তিনি বাংলার কাঁথা স্টিচ নকশা করা শাল নিয়ে যান। বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় অল্প সময়ের নোটিশে আসতে পারেননি মমতা।
কিন্তু সূত্রের খবর, সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি সিদ্দারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমার দু’জনেই আলাদাভাবে ফোন করেছিলেন মমতাকে। তারপরও তিনি গেলেন না। কিন্তু কেন? বিরোধী জোটের মঞ্চে তিনি হাজির হলে কি অভিষেকের উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ আরও বাড়বে, এটাই কি ভেবে মমতা গেলেন না? এই প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস ও সিপিএম। অভিষেক অবশ্য সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। বিজেপির পোষা কুকুর হয়ে তিনি থাকবেন না বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, যতই চাপ দেওয়া হোক না কেন, দিল্লির বশ্যতা স্বীকার করবেন না তিনি।
এদিকে, শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বিরোধী ঐক্যের যে ছবি দেখা গেল, তা দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালে, কুমারস্বামীর নেতৃত্বে কংগ্রেস-জেডিএসের সরকার গঠনের অনুষ্ঠানে। কংগ্রেস অবশ্য শনিবার থেকেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানার ভোট প্রস্তুতি শুরু করে দিল। বিরোধী নেতারা জানিয়ে দিলেন, রাজ্য ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রয়োজন বুঝেই জোট হবে। শারদ পাওয়ার বললেন, বিরোধীদের একজোট করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। নীতীশ কুমার বললেন, যত দ্রুত সম্ভব সবাই মিলে বৈঠকে বসা দরকার। ১৮ মে জোটের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। কবে হবে, এখনও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। সেদিনও মমতা যোগ দেবেন তো বিরোধী জোটের বৈঠকে? নাকি সেদিনও প্রতিনিধি পাঠাবেন? প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।