দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরে একটা প্রবণতা শিল্প মহলে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই সরকারের থেকে ভর্তুকি মূল্যে বা সুবিধা সহ জমি নিতে যত আগ্রহ দেখাচ্ছে, ততটা আগ্রহ দ্রুত বিনিয়োগের ব্যাপারে দেখাচ্ছে না। গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেই জমি ফেলে রাখছে।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পষ্টাপষ্টি বুঝিয়ে দিলেন, শিল্পের জন্য নেওয়া জমি বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখলে, সরকার তা ফেরত নিয়ে নেবে। জমি ফেলে রেখ ঘাস গজানো বরদাস্ত করা হবে না।
বাংলায় সিলিকন ভ্যালি কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমি নিয়ে অনেক শিল্প সংস্থা তা বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। শিল্প গড়া বা বিনিয়োগের নাম গন্ধ নেই। ওই সব জমি চিহ্নিত করার ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। দ্য ওয়ালে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি আরও পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিলেন। বুধবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠক ছিল নবান্ন সভাঘরে। সেই বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প সচিব তথা শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বন্দনা যাদবকে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যারা এমন করছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। পরিস্কার করে জানিয়ে দিন সিলিকন ভ্যালিতে জমি দেওয়া হয়েছে শিল্প গড়ার জন্য, ঘাস গজানোর জন্য নয়। এমন হলে জমি ফেরত নিয়ে নেবে রাজ্য সরকার।
এর আগে রাজ্য সরকার ঠিক করেছিল শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে যদি শিল্পস্থাপন না হয়ে থাকে তাহলে তা মাটিসৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ সেই জমিকে চাষযোগ্য করার চেষ্টা করা হবে। তাছাড়া নবান্নের ভাবনার মধ্যে আরও একটা বিষয় রয়েছে। তা হল, ওইসব জমিতে পাট্টা বিলি করে গরিব মানুষের বাসস্থান করে দেওয়া। জমি চিহ্নিত করার কাজে একটি বেসরকারি এজেন্সিকেও কাজে লাগানো হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছিল।
নবান্ন কর্তাদের মতে, সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। শিল্পের জন্য যে জমি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ হবে সেটাই প্রত্যাশিত। তা না হলে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তাই কিছুটা কঠোর মনোভাব নেওয়া হচ্ছে।
এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্যের কর্মসংস্থান নিয়ে বড় দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি কেন্দ্রের তথ্য উদ্ধৃত করে দাবি করলেন, এ রাজ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ক্ষেত্রে মোট ৪১ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হতে চলেছে৷ ইতিমধ্যেই ১ কোটির বেশি লোক এই ক্ষেত্রে কাজ করছেন৷ আগামী দিনে সেটি বেড়ে আরও ৪১ লক্ষ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
মমতা এদিন আলোচনায় বলেন, কেবল মাত্র সরকারি চাকরির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না৷ বিভিন্ন বেসরকারি ক্ষেত্রেও চাকরিও তো চাকরি৷ সেই কাজে আরও বেশি পরিমাণ মানুষ যুক্ত হবেন৷ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান যে কেন্দ্রের তরফ থেকেই দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের সামনে এ কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এ ছাড়াও এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ইকোনমিক করিডোর তৈরির বিষয়েও উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ল্যান্ড-গুলো ইকোনমিক করিডর ও ইন্ডাস্ট্রি-এর জন্য হচ্ছে, এখন নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। তাই প্রতিটা জায়গায় তোমরা হোর্ডিং লাগাতে শুরু কর৷ কোথায় কোথায় ইকোনমিক করিডর আছে, সেটা উল্লেখ করতে হবে৷ এটা তোমাদের সিরিয়াসলি করতে হবে। লোক জানবে এখানে ইন্ডাস্ট্রি করিডোর হচ্ছে। এমন ফ্লেক্স টাঙাবে না যা ঝড়ে উড়ে যাবে না। রাজ্যের টাকাটা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।’’