
মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলায় দাঁড়িয়ে হিংসার বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহিরাগতরা এসে রাজ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করছে বলেও অভিযোগ করেন। নিশানা করেছেন বিরোধী দল বিজেপিকেও।
এ দিন সুতির ছাবঘাটি ক্ষুদিরাম দাস বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বক্তব্য রাখার সময়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন। মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে টেনে আনেন ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই দিন সারা বাংলায় অশান্তি হলেও মুর্শিদাবাদে কোনও অশান্তি হয়নি। জেলার মানুষের জন্যই সেই সময়ে অশান্তি এড়ানো গিয়েছিল বলে মত মমতার। বর্তমান সময়েও প্ররোচনা এড়ানোর বার্তা দিলেন তিনি।

মঙ্গলবার সুতির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘কথা শুনে প্ররোচিত হবেন না। ভাগাভাগি করবেন না। আমি আমার চোখের সামনে কোনও দাঙ্গা দেখতে চাই না। আমি দাঙ্গার বিরুদ্ধে। দাঙ্গাকারীদের বাইরে থেকে পরিকল্পনা করে নিয়ে আসা হয়। আপনারা প্ররোচনায় পা দিয়ে দেন কেউ কেউ।’ এর সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘যদি কথা দিতে পারেন আপনারা দাঙ্গা করবেন না, তাহলে দিদি আপনার সঙ্গে থাকবে, আর যদি কথা দিতে না পারেন, তাহলে বাকিরা থাকলেও দিদি আপনাদের সঙ্গে থাকবে না।’

এর সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘যদি কথা দিতে পারেন আপনারা এ সব করবেন না, তাহলে দিদি আপনার সঙ্গে থাকবে, আর যদি কথা দিতে না পারেন, তাহলে বাকিরা থাকলেও দিদি আপনাদের সঙ্গে থাকবে না।’
রাজ্যে ওই অশান্তির মূলে ছিল কেন্দ্রের আনা নতুন সংশোধিত ওয়াকফ আইন। এই আইন নিয়ে বিজেপির পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে বিরোধী দলগুলি, তাদের মধ্যে ছিল তৃণমূলও। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা এ দিন বলেন, ‘কেন্দ্র আইন করলে আমাদের হাতে থাকে না। ওদের করতে দিন। আমি যতদিন বাংলায় আছি, কারও গায়ে কোনও স্পর্শ করতে দেব না।’ ওয়াকফ নিয়ে আন্দোলন করতে হলে দিল্লি গিয়ে করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওয়াকফ আন্দোলনের নামে হিংসার ঘটনা হলে তা কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে বলেও, এ দিন মুর্শিদাবাদের সভা থেকে কার্যত ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘ওয়াকফ নিয়ে গুলোগুলি করবেন না, যদি করেন তাহলে আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু আমি হব। সিদ্ধান্ত আমায় নিতে দিন, আন্দোলনটা আমায় নিতে দিন। আপনারা একসঙ্গে থাকুন, মিলেমিশে থাকুন।’
মুর্শিবাদের ধুলিয়ানে হিংসার জেরে বহু সম্পত্তি নষ্ট হয়েছিল। এ দিন ফের সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধুলিয়ানে হিংসা কবলিত এলাকায় ৪০০টি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সুতির মঞ্চ থেকে ২৮০টি পরিবারকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার চেক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও, যাদের আরও ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য টার্ম লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসনিক স্তরে কাজের সুবিধার জন্য মঞ্চ থেকেই ফরাক্কা, ধুলিয়ান ও সুতিকে নিয়ে আলাদা সাব ডিভিশন তৈরির ঘোষণাও করেছেন মঙ্গলবার।
