দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পাহাড়ের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে সোমবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে নজর ছিল, জিটিএ নির্বাচন এবং জিটিএ থেকে কালিম্পংকে পৃথক করার বিষয়টির দিকে।
গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠক শেষে সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “চারটি সংগঠনের সঙ্গে দেখা করলাম। প্রত্যেকটি দলের নেতারা এসেছিলেন। সকলেই চাইছেন নির্বাচন হোক। দিল্লিকে বলেছি ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে।” সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “আমি খুশি, সব দল বলেছে তারাও চায় দার্জিলিঙে শান্তি থাকুক।
হামরোর নেতা অজয়, দার্জিলিঙের চেয়ারম্যান এসেছেন। শুধু রোশনরা বলেছেন অন্য মত। আমি চাই মে নাগাদ নির্বাচন হোক। যদি দুই তিন মাসের মধ্যে জিটিএ নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কাজ করার দায়িত্ব নেবেন।”
দার্জিলিং প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” প্রচুর পর্যটক আসছেন। সব হোটেলগুলি জুন পর্যন্ত বুকিং। হোম স্টে গুলিও ভাল চলছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও ভালভাবে চলছে। দার্জিলিঙকে সহায়তা করব। ওরাও (হামরো পার্টি) চাইছে কাজ করতে। তারা আমার কাছে জেলা প্রাইমারি স্কুল বোর্ড নিয়ে জানিয়েছেন। আমি ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলেছি। হড়কা বাহাদুর ছেত্রী কালিম্পং জেলার ও রোহিত শর্মা দার্জিলিং জেলার প্রাইমারি স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।”
সোমবার পাহাড়ের এই বৈঠক প্রসঙ্গে হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ড অবশ্য জানিয়েছেন, “জিটিএ নির্বাচনে এবং সমস্ত নির্বাচনে অংশ নেব। তবে কারো কাঠপুতুল হতে চাই না। স্কুল পরিচালন সমিতি থেকে সব নির্বাচনেই অংশ নেব। জিটিএ নির্বাচন স্বাগত।”
এদিন বিধানসভা-র হাতাহাতির ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার দার্জিলিঙে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ”বিষয়টি স্পিকারের আওতায় পড়ে। যা বলার তিনি বলবেন।”
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে বেনজির কাণ্ডের সাক্ষী থাকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল এবং বিজেপির বিধায়করা। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারকে ঘুষি মেরে মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে আহত বিধায়ক এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তাঁর নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে খবর। যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। তবে তৃণমূল মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন। এরপরই তিনি এফআইআর-এর নির্দেশও দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, এদিন পাহাড় থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ধুন্ধুমার কাণ্ডের খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। গোটা ঘটনা শুনে ফিরহাদ হাকিমকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে এফআইআর -এর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনটাই জানা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’ সূত্রে।
এদিন বিধানসভায় হাতাহাতির ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে পাহাড় সফরে রয়েছেন মমতা। সেখান থেকেই গোটা ঘটনা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নেন মুখ্যমন্ত্রী। ফোনে কথা বলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে। তাঁর থেকে গোটা ঘটনা জানতে পেরেই এফআইআর-এর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছেন নেত্রীর নির্দেশ মতো এফআইআর করা হবে।
শাসক-বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে হাতাহাতির জেরে বিধানসভার অন্দরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধে সোমবার। রক্ত ঝরে, ছিঁড়ে যায় বিধায়কদের জামা, ভাঙে চশমা। শাসকদলের বিধায়ককে ঘুষি মারার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে। শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন আরও চার বিজেপি বিধায়ক।
এদিন অধিবেশন চলাকালীন গোলমাল বাঁধানো এবং চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারকে মারধর করার অভিযোগে শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এরপরই বিরোধী দলনেতা সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ডের নির্দেশ দেন। এই তালিকায় নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছাড়াও রয়েছেন মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা, পুরুলিয়ার বিধায়ক নরহরি মাহাতো, শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন।
উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবারই চারদিনের সফরে উত্তরবঙ্গ সফরে শিলিগুড়ি গিয়েছেন। চারদিনের সফরের মধ্যে তিনদিনই পাহাড়ে থাকার কথা রয়েছে তাঁর। উল্লেখ্য, তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম পাহাড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই তিনি জানিয়ে রেখেছিলেন, তিনি দ্রুত জিটিএ নির্বাচন চান। বলেছিলেন, “আমি চাই জিটিএ ভোটটাও মে – জুন মাসের মধ্যে হয়ে যাক। পাহাড়ে ইতিমধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে পুরভোট হয়েছে। আমি চাই জিটিএ ভোটটাও হোক।” সোমবারের বৈঠক শেষেও সেই কথাও আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন তিনি।