
বছর ঘুরলেই ফের আরেকটা বিধানসভা ভোট। তার আগে, সোমবার ফুরফুরা শরিফে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছেন তা নিয়ে কম জল্পনা-কল্পনা হয়নি। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করার জন্যই সেখানে গিয়েছেন।

রমজান মাসে ফুরফুরা শরিফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী থেকে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ভোটের রাজনীতি করতে ফুরফুরায় গিয়েছেন। এদিন বিকেলে ফুরাফুরা শরিফের অনুষ্ঠান থেকে যার জবাব দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই নিয়েই এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন, ফুরফুরায় ইফতার পার্টিতে উপস্থিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে এ দিনের এই ইফতারের আয়োজন কী রাজনৈতিক? ভোটের সমীকরণ? আমি কিন্তু সব উৎসবে যাই। সম্প্রীতি, ঐক্য থাকুক এটাই চাই।” এরপরই মমতার প্রশ্ন, “আমি যখন দুর্গাপুজোয় যাই তখন তো এই প্রশ্ন করেন না? কালী পুজো করলে এই প্রশ্ন করেন না?

খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মনে রাখবেন আমি যেমন খ্রীশ্চানদের অনুষ্ঠানে যায় তেমনই ঈদ মুবারকেরও যায়। ইফতার নিজে করি, পাঞ্জাবিদের গুরর দোয়ারেও যায়, প্রতিটি ধর্মের অনুষ্ঠানেই আমি যায়। কারণ, আমি মনে করি বাংলার মাটি সম্প্রীতির মাটি। তাই যেমন দোলের শুভেচ্ছা জানিয়েছি তেমনই রমজানে সকলের দোয়া প্রার্থনা করেছি।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ফুরফুরায় যে পলিটেকনিক কলেজ এবং ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে তা আবু বকর সাহেবের নামেই নামকরণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওবিসি সংরক্ষণের বিলটার জন্য রিক্রুটমেন্ট আটকে রয়েছে। তৈরি করা জিনিস থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার, নার্সদের রিক্রুটমেন্ট করতে পারছি না। এগুলোর সমস্যা মিটে গেলে ওগুলো চালু হয়ে যাবে।
ফুরফুরার পীরজাদারাও মুখ্যমন্ত্রীর সম্প্রীতির বার্তার প্রশংসা করে বলেন, “এখানে হিন্দু মসুলমান সকলে একসঙ্গে বসবাস করি। কিছু অশুভশক্তি আমাদের এই ভালবাসার মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ভাবে নজর রেখেছেন।”

গত সোমবার নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ) নেতা নওসাদ সিদ্দিকি। এলাকার উন্নয়নের কাজে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। তার আট দিনের মাথায় ফুরফুরায় গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ নওসাদের এলাকায় পৌঁছন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ইফতারের পাশাপাশি শুরুতে প্রায় ৭০ জন পীরসাহেব ও পীরজাদার সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সংখ্যালঘুদের নিয়ে নানাবিধ হুংকার এবং সে সব নিয়ে তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর ও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মন্তব্য ঘিরে যে চর্চা শুরু হয়েছে সে ব্যাপারটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভাল চোখে দেখেননি। সূত্রের খবর, এই সব তো বটেই, পাশাপাশি ফুরফুরার যাঁরা পীর রয়েছেন তাঁদের মনোভাব, বক্তব্য তথা সেখানকার উন্নয়নের খোঁজখবর নিতেই এদিন সেখানে পৌঁছন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

এ দিনের ইফতার পার্টিতে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে দেখা যাবে কি না সেই নিয়েও কম জল্পনা হয়নি। তবে এ দিনের ইফতার পার্টিতে দেখা যায়নি তাঁকে। এ দিন, বেশ কয়েকটি বিষয় উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি আজ সবগুলো উদ্ধোধন করে দিলাম। আজ আবু বকর সিদ্দিকির মৃত্যুদিন। আমি আজ কয়েকটি জিনিসের উদ্ধোধন করে দেব। বাকি পলিটেকনিক কলেজের কথা বলেছেন। সেটি আমি পরে করে দেব। পলিটেকনিক কলেজ এবং হাসপাতাল আবু বকর সিদ্দিকির নামেই হবে।”