দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ দেখা যায় দলীয় কর্মসূচিতে, দেখা যায় দলের একাধিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও। কিন্তু, সরকারি কর্মসূচিতে খুব একটা চোখে পড়ে না তাঁকে। কিন্তু, ছবিটা বদলাল এবার।
বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঞ্চে তুলে আনলেন ৷ এই ঘটনা নিছকই সাধারণ হলেও রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজতে নেমে পড়েছেন অনেকেই।
সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এদিন আলিপুরদুয়ারের সভার আয়োজন করা হয়েছিল। যা তৃণমূল জমানায় এতদিনে খুবই স্বাভাবিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণত এই ধরনের সভায় কখনওই দেখা যায় না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
এদিন তাঁর বক্তৃতার শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অভিষেক এই ধরনের অনুষ্ঠানে থাকে না। তবে এবার ও আমার সঙ্গে মেঘালয় সফরে গিয়েছিল। সেখান থেকে একসঙ্গে ফিরেছি। আমি বললাম, তুই মঞ্চে থাকিস। কিন্তু ও বলল না দিদি। সরকারি অনুষ্ঠান। আমি রাজনৈতিক কর্মী হয়ে মঞ্চে থাকব না”।
ভিড়ের দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, “কিন্তু আমি ওকে বলেছি, তুই তো লোকসভার সাংসদ। একজন সাংসদ হিসাবে তো মঞ্চে থাকতে পারিস”। এ কথা বলেই মুখ্যমন্ত্রী মাইকে ঘোষণা করেন, “নাও আই উড লাইক টু ইনভাইট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অন দ্য স্টেজ।”
ইষৎ বিস্কিট কালারের ফুল স্লিভ সোয়েটার আর ট্রাউজার পরেছিলেন অভিষেক। একেবারেই যা তথাকথিত নেতা সুলভ নয়। দেখা যায়, দিদি ঘোষণা করতেই মঞ্চে উঠে আসেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাঁকে বসার জন্য আসন ছেড়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন উদয়ন গুহর মতো মন্ত্রীরা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ও মঞ্চে বেশিক্ষণ থাকবে না। সবাইকে প্রণাম জানিয়ে নেমে যাবে। কারণ ও চায় না রাজনৈতিক নেতা হিসাবে প্রশাসনিক মঞ্চে থাকতে। আমিও এটা পছন্দ করি।
সামান্য এই ঘটনাই অনেকের কাছে লার্জ ক্যানভাস হয়ে এদিন ধরা পড়েছে। একটা সময় ছিল, রাজনৈতিক মঞ্চে অভিষেককে তুলে আনলেও দিদিকে ভারসাম্য রাখতে অনেক কিছু বলতে হতো। দিদি বলতেন, ‘আমার পরে শুভেন্দু, ববি, অরূপ, অভিষেকরা দল চালাবে।’ কিন্তু শুভেন্দু দল ছেড়েছেন। একুশের ভোটে পরীক্ষা দিয়ে অভিষেকও নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার অর্জন করে ফেলেছেন। বাকিদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যেন এখন আলোকবর্ষ।
অর্থাৎ এখন অভিষেকের সঙ্গে ইগো দেখিয়ে দিদির উপর চাপ তৈরিরও কেউ নেই। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে সংগঠনে উত্তরণ ঘটেছে অভিষেকের। কারও কারও মতে, বৃহস্পতিবারের দুপুরের ছবি আগামী দিনে অভিষেকের বৃহত্তর প্রশাসনিক দায়িত্বে উত্তরণের জন্যও ফ্রেম হয়ে থাকল।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিককালে দলে গুরুত্ব আগেই বেড়েছিল অভিষেকের। পেয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব। এবার সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে একেবাবের তৃণমূল সুপ্রিমোর ডাকে তাঁর গুরুত্ব অনেকটাই বাড়ল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
যদিও এ ঘটনার কড়া নিন্দা করতে দেখা গিয়েছে পদ্ম নেতাদের। মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “যে কোনও মূল্য পরিবার তন্ত্রকে কায়েম করতে হবে। সেটাই করা হচ্ছে। যদি অন্য সাংসদ হত তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠত সরকারি প্রোগ্রামে লোকাল সাংসদ বাদ দিয়ে অন্য সাংসদ কী করে এল? এই প্রশ্নটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার আগে তুলতেন। সেই অপরের ক্ষেত্রে এই জাতীয় বক্তব্য রাখেন নিজের ক্ষেত্রে তখন কোনও ব্যাপার নয়। সরকারটা মনে হয় ওনার পারিবারিক সম্পত্তি। সেভাবেই সরকারটা চালানোর চেষ্টা করছে। সরকারের মান-মর্যাদাকে নষ্ট করছে। সরকারের মধ্যে পরিবার তন্ত্রকে কায়েম করার চেষ্টা করছে। আমরা এটার তীব্র নিন্দা করছি।”