দেশের সময় ,কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তবে তোড়জোড় চলছে জোরকদমে। কোন রাজ্যে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে কমিশন, সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ এক দফার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ৮০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল।
লোকসভা ভোটের জন্য সমর সজ্জায় সেই সংখ্যাকেও অনেক পিছনে ফেলে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বাংলায় সর্বোচ্চ ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন সদন। সবচেয়ে বড় কথা হল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এই মর্মে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনও একটি দফায় প্রয়োজন পড়লে সর্বোচ্চ ৯২০ কোম্পানি পর্যন্ত সেন্ট্রাল ফোর্স মোতায়েন করা যাবে।
লোকসভা ভোটে দেশে আর কোনও রাজ্যের জন্য এত বিপুল বাহিনী চায়নি নির্বাচন কমিশন। সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতার ঝুঁকি নিয়ে চলা জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ৬৩৫ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে। যা বাংলার থেকে অনেক কম। মাওবাদী সমস্যা কবলিত ছত্তীসগড়ের জন্য চাওয়া হয়েছে ৩৬০ কোম্পানি। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসন রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে লোকসভার আসন সংখ্যা ৮০। অর্থাৎ বাংলার প্রায় দ্বিগুণ। অথচ সেই উত্তরপ্রদেশের জন্য মাত্র আড়াইশ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের যা পরিকল্পনা, তাতে লোকসভা ভোটে বাংলার জন্যই সবথেকে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান প্রস্তুত রাখতে চাইছে তারা। এখনও পর্যন্ত কমিশনের যা ভাবনা, তাতে বাংলায় ৯২০ কোম্পানি সিএপিএফ বাহিনী মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর মধ্যে স্ট্রং রুম ও ইভিএমের নিরাপত্তার জন্য কনমিশন রাখতে চাইছে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিবকে চিঠি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। তাতে তিনি বলেছেন, সব মিলিয়ে ৩৪০০ কোম্পানি বাহিনী লাগবে লোকসভা ভোটের জন্য। তার অর্থাৎ হল মোট বাহিনীর এক চতুর্থাংশই মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও হিংসার ইতিহাস বহুদিনের। অনেকের মতে, এবার পঞ্চায়েত ভোটে গত পঞ্চায়েতের তুলনায় হিংসা কম হয়েছে। কিন্তু রাজনীতি ও ভোট ধারনায় চলে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিজেপি এই ধারনা তৈরি করতে হয়তো সফল হয়েছে যে বাংলায় ভোট মানেই সন্ত্রাস। বিপুল আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন না করলে ভোট অবাধ হবে না। তা ছাড়া কেন্দ্রে তাদের সরকারই রয়েছে।
কমিশনের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের মুখপাত্র সজল ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে বাংলায় কী ঘটেছে গোটা দেশ দেখেছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনও দেখেছে। তবে এই বাহিনী শুধু মোতায়েন করলেই হবে না, বাহিনী যেন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে”।
অন্যদিকে শাসক দলের মুখপাত্র বলেন, বিজেপি ভাবছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে গ্রামের মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট করাবে। একুশের ভোটে এই এক রকম ছক করেছিল। ওরা তাতে সফল হয়নি। এবারও হবে না।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, বাকি রাজ্যগুলির জন্য কত কোম্পানি বাহিনী তৈরি রাখতে চাইছে কমিশন? উত্তর প্রদেশের জন্য চাইছে ২৫০ কোম্পানি, গুজরাটের জন্য চাইছে ২০০ কোম্পানি, বিহারের জন্য ২৯৫ কোম্পানি। অন্ধ্র প্রদেশের জন্য চাওয়া হচ্ছে ২৫০ কোম্পানি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের থেকে সব মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৪০০ কোম্পানি সিএপিএফ বাহিনী চেয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।