মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগ। নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেই হাইকোর্টে সওয়াল করে সে। ২০০৭ সালে বনগাঁয় পেট্রাপোল সীমান্তে ধরা পড়ে শেখ আব্দুল নঈম

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১০ বছরের জেল, সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। লস্কর জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ খারিজ করে দিল হাইকোর্ট!

নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি শেখ আব্দুল নঈমের ফাঁসির সাজা রদ করল কলকাতা হাইকোর্ট । ২০১৮ সালে বনগাঁ আদালত তাঁকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডের সেই রায় বাতিল করে দশ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হল জঙ্গি নঈমের।তার সঙ্গী দুই পাকিস্তানিকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত।  আজ, সোমবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে এই রায় দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর থেকেই তিহার জেলে ছিল নঈম। সেখান থেকেই কলকাতা হাইকোর্টে ফাঁসির সাজার পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল নঈম। দীর্ঘ সময় ধরে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল, এতদিন স্থগিত ছিল রায়দান। আজ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে ফাঁসির সাজা খারিজ করল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।

নঈমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নাশকতা এবং স্লিপার সেল হিসেবে কাজ করার মতো মারাত্মক অভিযোগে তাকে হেফাজতে নিয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। দিল্লিতেও বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সদস্যর বিরুদ্ধে।

২০০৭ সালে পাকিস্তান হয়ে বেনাপোল দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল বেশ কয়েকজন লস্করি জঙ্গি, তাদের মধ্যেই ছিল শেখ আব্দুল নঈম। প্রথম বিএসএফের হাতে গ্রেফতার হয় তারা। বিএসএফ তাদের বেনাপোল পুলিশের হাতে তুলে দেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলা চলে বনগাঁ আদালতে। ২০১৮ সালে সেখানে নঈমের ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়।

এর পরেই এএনআই নঈম-সহ বাকি অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। কারণ দিল্লি, মহারাষ্ট্র-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। এই কারণেই এতদিন পর্যন্ত তিহার জেলে বন্দি ছিল লস্কর-ই-তইবার সদস্যরা।

২০১৮ সালে বনগাঁ আদালত ফাঁসির সাজাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিলেন শেখ আব্দুল নঈম। মামলার শুরুতে নঈম কোনও আইনজীবী নেয়নি। নিজেই নিজের সওয়াল করেছে। সে সময়েই তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা প্রমাণ করে দেয়, সে যথেষ্ট শিক্ষিত। কলকাতা হাইকোর্টের তাবড় আইনজীবী থেকে বিচারপতি– সকলেই নঈমের ইংরেজিতে করা আইনি সওয়ালের রীতিমতো প্রশংসা করতেন।

প্রথমে নঈম আদালতের কাছে দাবি করেছিল, সে তিহার জেলে থাকতে চায় না, তাকে রাখা হোক কলকাতার কোনও সংশোধনাগারে। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, একজন প্রমাণিত অপরাধী কখনওই নিজে ঠিক করে নিতে পারে না, তাকে কোন সংশোধনাগারে রাখা হবে। তার উপর নঈমের বিরুদ্ধে জেল থেকে দু-দু’বার পালিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে।

তবে পরে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী অভিযুক্তের পক্ষে রাজ্যের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী দেওয়ার কথা বলেন। তার পরে আরও কিছুদিন মামলা চলার পরে নিয়মিত শুনানির জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে তাকে রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি বাগচী। শেষমেশ আজ রায় ঘোষণা হল, ফাঁসির সাজামুক্ত হয়েছে নঈম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here