দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সপ্তাহ দুয়েক আগে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল একটি সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এবার ভোট হবে। মানুষ ভোট দেবেন। কোনও ঝামেলা করা যাবে না। কেষ্ট মণ্ডল এও বলেছিলেন, এর আগে যে ভাবে ভোট হয়েছিল তা ভয়ঙ্কর অন্যায় ছিল। সেইসময়ে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। অনুব্রতর হলটা কী!
শনিবার স্পষ্ট হল, ওটা অনুব্রত মণ্ডলের কথা নয়। কালীঘাটেরই বার্তা। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের ১৪৪ জন প্রার্থীকে ডেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট করতে হবে। কোনও রকমের অশান্তি করা যাবে না। যদি কোনও প্রার্থী বা ওই এলাকায় দল অশান্তি করে, মারপিট করে তাহলে দল তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেবে।
এদিন হাজরার মহারাষ্ট্র নিবাস হলে কলকাতার ১৪৪ জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানে একটাই কথা পইপই করে তৃণমূলের তরুণ নেতা বলেছেন, তা হল মহানগরের ভোট যেন শান্তিপূর্ণ হয়। তৃণমূলের এক প্রার্থী বলেন, অভিষেক নির্দেশ দিয়েছেন জোর করে ভোট করানো যাবে না। বিরোধীদের কাছেও ভোট ভিক্ষা করার কথা বলেছেন। কোনও তৃণমূল প্রার্থী যেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হন।
কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থীদের অভিষেক বলেন, ‘‘পথসভা বা বড় মিটিংয়ের চেয়ে জোর দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে। বার বার করে নিজেদের ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে প্রচার করুন। আমরা ১১ বছরে কী করেছি, তা তুলে ধরুন।’’ পুরভোটের রণকৌশল ঠিক করতে শনিবার দুপুরে কলকাতার ১৪৪ জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মহারাষ্ট্র নিবাস হলে আয়োজিত ওই বৈঠকে অভিষেকের পাশাপাশি হাজির ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং পুরসভার প্রাক্তন মেয়র, তথা পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতো নেতারা।
এমনিতে ভোট লুঠ, সন্ত্রাস ইত্যাদি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ বিস্তর। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার ভয়াবহ ছবি দেখেছিল বাংলা। বিরোধী প্রার্থীকে পুড়িয়ে মারা, ব্যালট বক্স ছিনতাই করে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া এমনকি গণনা কেন্দ্রেও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আবার এও ঠিক একুশের বিধানসভা ভোটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোট হয়েছিল বাংলায়। আট দফার ভোটে নজরদারিতে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেখানে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল।
অনেকের মতে, চব্বিশের লোকসভার আগে দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতেই কলকাতা পুরভোটে যাতে যথাযথ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে তার বার্তা দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
অতীতে কয়েকটি পুরসভার ভোটে এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ কয়েক জন নেতা প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি, ক্ষমাও চেয়েছেন।
ফিরহাদও তাঁর বক্তৃতায় শনিবার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘‘ভোটদানে বাধা দেওয়া হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুরভোটে দলের টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের কয়েকজন বিদায়ী কাউন্সিলর এবং নেতা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশে ফিরহাদ বলেন, ‘‘যাঁরা টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়েছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, ‘‘যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁরাও দলের সৈনিক।