আরজি করের নিরাপত্তায় মোতায়েন হবে CISF: সুপ্রিম কোর্ট: আরজি কর মামলার শুনানিতে বড় নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই মুহূর্ত থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আরজি করে মোতায়েন হবে সিআইএসএফ।
দেশের সময় : মঙ্গলবার সকালেও ফের সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। রোজকার মতোই এদিনও সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে এড়িয়ে গেলেন সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ। এই নিয়ে পঞ্চম বার কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে গেলেন তিনি। গত চার দিন ধরে সন্দীপকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন দিকে এগোচ্ছে তদন্ত? নানা মহলে ক্রমশ ঘনিয়ে উঠছে জল্পনা। দেখুন ভিডিও
নানামহলে নানা গুঞ্জন। শহরের নাম করা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে থাকলেও, ‘স্যর’-এর নামে গুচ্ছের দুর্নীতির অভিযোগ। সিবিআই যদি সেই অভিযোগের শিঁকড়ে পৌঁছতে চায় তাতে সন্দীপের চাপ হতে পারে বলেই মত একটা বড় অংশের। এরইমধ্যে নয়া মোড়। আরজি কর হাসপাতালে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা শুরু কলকাতা পুলিশের।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জুন মাসে টালা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। এক আইএএস আধিকারিক এই অভিযোগ করেন। প্রায় তিন মাস পর সেই অভিযোগকে সামনে রেখে সন্দীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা রুজু করা হল। ‘প্রিভেনশন অব কোরাপশন’ আইনের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যেহেতু ১ জুলাই-এর আগে টালা থানায় এক আধিকারিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সেই কারণেই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হল, সোমবারই সন্দীপের বিরুদ্ধে এসআইটি বা সিট গঠন করেছে রাজ্য। আইজি প্রণব কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আর মঙ্গলবার সামনে এল কলকাতা পুলিশের পদক্ষেপের বিষয়টি।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, সন্দীপের বিরুদ্ধে রাজ্য মনে করেছে তদন্ত দরকার। তাই এই পদক্ষেপ। কিন্তু এই তদন্তের প্রয়োজনীয়তা কি চারদিনেই অনুভূত হল? যদি হয় কেন আগে হল না? আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের মামলা রুজুকে সামনে রেখে। সিবিআইয়ের কোনও কড়া পদক্ষেপের আগেই কি কলকাতা পুলিশ নিজেদের হেফাজে নিয়ে নিতে পারে সন্দীপ ঘোষকে?
আর জি কর মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত চিকিৎসক ডক্টর অনিকেত মাহাতো জানান প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কে নিয়ে নবান্নের তরফ থেকে একটি সিট গঠন করা হয়েছে আমাদের এই চার সদস্যের সিটের প্রতি কোনো রকম ভাবে ভরসা নেই। এতদিন মুখ্যমন্ত্রী কেন ভাবেননি বলে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা ।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে সিজিওএ কমপ্লেক্সে ঢুকলেন আরজি করের বিতর্কিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ। আজকেও দিনভর চলতে পারে জেরা। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালেও সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন সন্দীপ। বেরিয়েছেন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা নাগাদ। তবে কেন বার বার সন্দীপকে তলব করা হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রথম থেকেই সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আরজি করে অত্যন্ত ‘প্রভাবশালী’ ছিলেন তিনি। মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে সেখানে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া— সকলের অন্যতম দাবি ছিল সন্দীপের অপসারণ কিংবা পদত্যাগ। আন্দোলনের চাপে পড়ে সোমবার, ১২ অগস্ট পদত্যাগ করেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমাও দেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দীপকে কলকাতার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেও তাঁর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এর মাঝে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় সন্দীপকে লম্বা ছুটিতে যেতে। সেই থেকে ছুটিতেই ছিলেন সন্দীপ।
হাই কোর্টের নির্দেশেই আরজি করের ঘটনার তদন্তভার কাঁধে তুলে নেয় সিবিআই। ইতিমধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসক, পড়ুয়া এবং একাধিক আধিকারিককে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রেকর্ড করা হয়েছে প্রত্যেকের বয়ান।
এদিকে আজ মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানিতে বড় নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই মুহূর্ত থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আরজি করে মোতায়েন হবে সিআইএসএফ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করছি।’’ চিকিৎসকেরা যাতে আবার কাজে ফিরতে পারেন, তাই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানায় শীর্ষ আদালত।