![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2024/01/1000361734-150x150.jpg)
টানা ১৭ বছর প্রচণ্ড পারিবারিক সমস্যা কার্যত ভেঙেচুরে দিয়েছিল হালিশহরের বাসিন্দা ঝরণা ভট্টাচার্যকে। জীবনে প্রাপ্তি হিসেবে ছিল শুধুই মেয়ে তিন্নি ওরফে স্নিগ্ধা। ২০২৩-এর অগস্টে মা-মেয়ের জীবনে আবির্ভাব হয় এমন একজনের, যাকে বাদ দিয়ে আজ আর একটা মুহূর্তও কাটানোর কথা ভাবতে পারেন না ওঁরা। ১৭ বছরের ট্রমা ওঁদের জীবনে যে ভয়াবহ রেখা ফেলেছে, সেটা ভুলে যাওয়ার নয়। তবে ছোট্ট চিকু এই কয়েক মাসেই ওঁদের অনেকটা ‘স্বাভাবিক’ করে তুলেছে।
ঝরণাদেবীর জীবনের সেই কঠিন সময়ে চিকুকে পেয়েছিলেন । পোষ্য চিকু তাঁর বিধ্বস্ত জীবনে এসেছিল আশীর্বাদ হয়ে। বইমেলায় নিজের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে লেখা বইয়ের উদ্বোধন তাই কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির হাতে নয়-চিকুর হাতেই করতে চান ।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2024/01/IMG-20240127-WA0067-1024x681.jpg)
বইমেলায় নিজের জীবনের নানা ঘটনাকে গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছিলেন ঝরনা। তবে বই প্রকাশ করলেই তো হলো না, কার হাত দিয়ে ওই শুভ কাজটি সম্পন্ন করবেন, সেটাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওঁরা। তারপরই মনে পড়ে চিকুর কথা। হ্যাঁ, ‘স্মৃতির অতলে’ বইটি এবছর বইমেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করতে হবে এবং ওঁদের প্রিয় কুকুর চিকুর হাত দিয়েই । সেই মতো বই ও সঙ্গে চিকুকে নিয়ে ঝর্ণাদেবী সোজা উপস্থিত হন বইমেলা প্রাঙ্গনে। প্রশ্ন ওঠে –
কোনও সেলিব্রিটির বদলে প্রিয় পোষ্যকে দিয়ে বই উদ্বোধনের এমন পরিকল্পনা কেন? সেই প্রশ্নের জবাবে ঝরর্ণা বলছেন, ‘টানা ১৭ বছর চরম অত্যাচার সহ্য করার পর শেষ পর্যন্ত স্বামীর ঘর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। একটা সময়ে মনে হয়েছিল হয়তো কোনও দিনই আর আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারব না। আমার মেয়ে খুবই শক্ত ধাতের। তবু, ওই স্মৃতি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না।’
এমনই পরিস্থিতিতে বাড়িতে আসে এই ছোট্ট চিকু। ঝরণার কথায় , ‘চিকুর বাড়িতে আসা যেন অনেকটা একটা শিশুর বাড়ি আসার মতো। পরের কয়েক মাস আমাদের গোটা পৃথিবীটাই চিকুর চারদিকে ঘুরেছে। আমার নতুন বইয়ের উৎসর্গপত্রেও তাই চিকুর নাম রয়েছে।’ ঝর্ণা বলেন, নতুন বই ছেপে আসার পর সেটা চিকুকে দেখানো হয়েছে। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
প্রিয় পোষ্যকে দিয়ে বই উদ্বোধন! শুনে রীতিমতো খুশি পষ্যপ্রেমীরা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর পেট লাভার শাখার সদস্য সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘পোষ্যরা স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে অতুলনীয়। বহু মানুষ ওদের সান্নিধ্য পেয়ে নানা ধরনের মানসিক চাপ সহজে কাটিয়ে উঠেছেন। ঝর্ণাদেবীর ঘটনাও ঠিকই। তবে উনি যে ভাবে চিকুকে দিয়ে বই উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-তেমন ঘটনা আমার জানা নেই। ওঁনাকে আমার শুভেচ্ছা।’
সল্টলেকে বইমেলায় এ হেন অভূতপূর্ব প্রস্তাব পেয়ে চমকে উঠেছিলেন পাবলিশার্স গিল্ড এর শীর্ষ কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।। কারণ এমন প্রস্তাব তিনি এর আগে কখনো পান নি। বইয়ের জগতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানুষটি থৈ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি এ নিয়ে কি বলবেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য পোষ্যচিকুর মালিক ঝর্ণা ভট্টাচার্য বই মেলার এক নম্বর গেটের সামনে তার বইয়ের উদ্বোধন করলেন। চিকু কে সাথে নিয়েই। তাকে নিয়ে তিনি এর পর সটান ঢুকলেন মেলার অন্দরে। ত্রিদিবের কথায়, ” কি বলব? বইমেলা তো আর পোষ্য মেলা নয়। যে আমার পোষা হাতি আছে, তাকে নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম! সব কিছুর তো একটা স্থান কাল পাত্র আছে।”
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2024/01/DESHER-SAMAY_20240127204503434.jpg)
তবে যে যাই বলুক তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই ঝর্ণা দেবীর তাঁর কথায় এর থেকে আমার কাছে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না ।