কলকাতা বইমেলা একদিন বিশ্বে এক নম্বর হবে। বৃহস্পতিবার ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার মঞ্চ থেকে এমনটাই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন কলকাতা বইমেলা শুরু হয় তখন একটা স্টলের সঙ্গে আর একটা স্টল গায়ে লেগে থাকত। আর এখন বইমেলা নিজস্ব জায়গা খুঁজে পেয়েছে। এক একটা স্টল সুন্দর করে সাজানো, বিভাজন দেখে আমি অভিভূত।’
এই বইমেলাকে ঘিরেই তাঁর লেখালেখি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, ‘‘বইমেলাকে কেন্দ্র করেই লিখি আমি। তাড়াহুড়োয়, ক্যাজুয়ালি লেখা। প্রুফ দেখারও টাইম পাইনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর বই কথাঞ্জলি। তাঁর মন ও মুখের কথাই তাঁর প্রায় সব বইয়ের প্রতিপাদ্য।
এদিন বই মেলা নিয়ে নিজের লেখা পুরনো এক কবিতা পাঠ করে শোনান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বইমেলাকে উদ্দেশ করে লেখা সেই কবিতা পাঠ করেন-‘ব্যস্ততম বিকেলের দীর্ঘতম সন্ধ্যায় জমে উঠেছিল বইমেলা বইপ্রেমীদের পবিত্র ছোঁয়ায়/ ধুলা মন্দিরের দুর্লভ সন্ধ্যায় কত মানুষের কাঙ্খিত আনাগোনায়/কিছু মুহূর্ত দেখা হল বইপ্রেমী তোমার ও আমার’।
দেখুন ভিডিও
বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই ৪৭ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন হল। এবারের বইমেলায় তাঁর ৫টি বই প্রকাশিত হবে বলে জানা গিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আর মাত্র ৭টা বই হলেই তাঁর ১৫০ খানা বই লেখা হয়ে যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বই লেখায় শতক পার করবেন তা উনিশ সালের বইমেলার উদ্বোধনে জানিয়েছিলেন। চব্বিশের বইমেলায় তিনি বলেন, ”আমার কটা বই হয়েছে আজ পর্যন্ত আমি নিজেই জানি না। একশো তেতাল্লিশ হবে। সাতটা আগামী বছর করে দেব তাহলে দেড়শো হয়ে যাবে।” মমতা এও জানান, রাস্তায় যেতে যেতে কখনও লিখতে ভাল লাগে, কিন্তু বেশি সময় পান না।
২০২৩ সালের বইমেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ৬টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। সেবার ওই ৬টি বই মিলিয়ে তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৩। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে তা দেড়শো হয়ে যাবে বলেই মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি নিজেই বলেছিলেন তাঁর কয়েকটি বই বেস্টসেলার। এবারে যে বইগুলি প্রকাশিত হচ্ছে তার মধ্যে একটির বিষয় বাংলার ঐতিহ্য। বাংলার উপাচার নিয়েও একটি বই লিখেছেন তিনি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়েও তাঁর বই থাকছে এবারের বইমেলায়। তাছাড়া আরও দুটি বই প্রকাশিত হচ্ছে।
গতবার তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, লহ প্রণাম, স্যালুট, আমাদের দুর্গোৎসব ও আমাদের আওয়াজ। তার আগে বইমেলায় বেরিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘নামাঞ্জলি সমগ্র’, ছোটদের ছড়ার বই ‘শিশুদোলা’, কবিতার বই ‘আমি’, উর্দু শায়েরি ‘ইনসাফ’, ইংরেজি কবিতার বই ‘মাইসেল্ফ’, নিজের রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে একটি হিন্দি বই, এবং প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘বিপন্ন ভারত’।
এবার বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি ইউনাইটেড কিংডম। এদিন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালেক্স এলিস, ভারতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর অ্যালিসন ব্যারেট। তাঁদের ধন্যবাদ জানান মমতা। বলেন, ‘লন্ডন শুধু ওদের নয় আমাদেরও শহর। ইংল্যান্ড গিয়ে কোনোদিন গাড়ি ব্যবহার করিনি। হেঁটে হেঁটে ঘুরেছি। ওখানকার সব রাস্তার নাম জানি। সামনের জুন মাসে আবার যাওয়ার কথা রয়েছে। ইংল্যান্ড আমাদের দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। ওদের সাহিত্য, শিল্প আমাদের দেশকে অনেক উন্নত করেছে।’
এদিন বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন করেন জাগো বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্টলও। সাহিত্যিক বাণী বসুর হাতে সৃষ্টি সম্মান তুলে দেন তিনি। বৃহস্পতিবার বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে বেশ কয়েকটি বই উদ্বোধন হয় মুখ্যমন্ত্রীর। লহ প্রণাম ছড়ায় ছড়ায় দ্বিতীয় খণ্ড, তৃণমূল স্তরে তৃণমূলের জয়, ফেস্টিভ্যালস ফর অল, উৎসব সবার, কবিতাবিতানের ইংরাজি অনুবাদ, হেরিটেজ অফ বেঙ্গল, কবিতাবিতানের নতুন সংস্করণ। বইমেলার মঞ্চ থেকে ভার্চুয়ালি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স অন ডেটা এন্ড মেশিন লার্নিংয়ের উদ্বোধন করেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে নিজস্ব প্রাঙ্গণ পেয়েছে বইমেলা। সেই সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে এদিন গিল্ডের জন্য আর একটি জমি দেওয়ার অনুরোধ জানান সংস্থার সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ যদি গিল্ডের জন্য একটু জমি দেওয়া যায়। আমরা সেখানে লাইব্রেরি, আর্কাইভ গড়তে চাই।’ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে, বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সুখেন্দুশেখর রায়, মালা রায় প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্য সঙ্গীত এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল, হুগলির ছাত্রছাত্রীরা।