দেশের সময়: শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। তখন নাম ছিল কলিকাতা পুস্তক মেলা। ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে সেই মেলা। ১৪ দিন ধরে চলা কলকাতা বইমেলা যেন আক্ষরিক অর্থেই বইপ্রেমীদের দুর্গাপুজো। কিংবা বলা যেতে পারে বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ। এবারের ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে ৩০ জানুয়ারি। চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে খুলে যাচ্ছে মেলা প্রাঙ্গনের গেট। রাত আটটা পর্যন্ত বিশাল বইমেলা প্রাঙ্গন জুড়ে থিকথিকে ভিড়। শনি ও রবিবার মেলা খোলা থাকছে রাত ন’টা পর্যন্ত।

প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের পাশাপাশি হাজার হাজার নতুন কবি, সাহিত্যিকদের বইয়ের ভিড়ে বুঁদ আট থেকে আশি। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার গিল্ডের আয়োজনে কলকাতা বইমেলার এবারের থিম কান্ট্রি স্পেন। ফলে সে দেশের অনেক লেখক, সাহিত্যিক হাজির থাকছেন মেলায়। বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় এক হাজার স্টল রয়েছে এবারের মেলায়। অংশ নিয়েছে ২১টি দেশ। লিটল ম্যাগাজিনের জন্য রয়েছে আলাদা প্যাভিলিয়ন। আবোল তাবোলের এবার ১০০ বছর।

বইমেলায় আসা বিশেষভাবে সক্ষম ও বয়স্কদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে সুকুমার রায়ের বই। রাখা হয়েছে লটারি। সেই লটারিতে জিতলে উপহার পাওয়া যাবে ১৫ হাজার টাকার বই। রোজই ওই লটারি করা হচ্ছে। গিল্ডের সভাপতি জানিয়েছেন, এ বছরের শেষেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে কলকাতা বইমেলার ক্ষুদ্র সংস্করণ। তবে শুধু দেশে নয়, কলকাতা বইমেলার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। এবার স্পেনে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে কলকাতা বইমেলা। গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালে মাদ্রিদে যে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে থিম কান্ট্রি হচ্ছে ভারত। ফলে ওই মেলায় যাবে কলকাতা বইমেলা। পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে কলকাতা বইমেলা থেকে। ফলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ।

বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলি কাগজ বা চটের ব্যাগে বই দিচ্ছে। কোথাও আবার দেওয়া হচ্ছে পুনর্ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক। কোনও কোনও বইপ্রেমী আবার বাড়ি থেকেই কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে ঢুকছেন বই মেলায়। এরইমধ্যে লুকিয়ে কোনও প্রকাশনা সংস্থা ক্যারিব্যাগ রেখেছে কি না তা দেখতে চলছে সারপ্রাইজ ভিজিট। বিধাননগর পুরনিগমের পরিবেশ বিভাগের তরফে ওই পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক পাউচে জল বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্র্যাঙ্কফুট বইমেলার আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়েই ১৯৭৬ সালে বিড়লা প্লানেটরিয়ামের সামনের মাঠে কয়েকটা স্টল আর প্রদর্শনী দিয়ে শুরু হয় কলকাতা বইমেলা। কলকাতার ময়দানে বার কয়েক জায়গা বদলের পর কয়েক বছরের জন্য সল্টলেক স্টেডিয়াম হয়ে এই মেলা থিতু হয়েছিল বাইপাসের ধারে মিলনমেলায়। তারপর ফের সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে।

প্রথম দিকে বইমেলার জন্য এমন একটি জায়গা নিয়ে বইপ্রেমীদের অনেকের মনে আক্ষেপ থাকলেও এবার বাড়তি পাওনা ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে মেট্রো ধরে সোজা পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে করুণাময়ী স্টেশনের পাশে মেলা প্রাঙ্গনে। ১৪ দিনের এই বই উৎসবে যোগ দেবেন লাখ লাখ পাঠক।


বিভিন্ন সময়েই অভিযোগ উঠেছে, বইমেলা প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টলের চেয়ে খাবারদাবার, জুয়েলারি ও নানারকম জিনিসপত্রের দোকানে বেশি ভিড়। তা সত্ত্বেও বইমেলা আছে বইমেলাতেই। রান্নার বই, ভূতের গল্প থেকে ছড়া, কার্টুন, কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস, কৃষি, পশুপালন, মাছচাষ, ডাক্তারি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, আঞ্চলিক ইতিহাস, বিজ্ঞান, কী বই না নেই! হাত বাড়ালেই হল। কিন্তু এবার মেলার প্রথম কয়েকটা দিন পছন্দের বই কিনে ডিজিটাল পেমেন্ট করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বইপ্রেমীদের। কিউআর কোড স্ক্যান করে বইয়ের দাম মেটাতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারণ, বইমেলা চত্বরে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রায় মৃতপ্রায়। মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থাও তথৈবচ। ফোনে কথা বলতে গিয়ে বারবার কেটে যাচ্ছে। কখনও অবার ফোনে সংযোগ করাই যাচ্ছে না। বইমেলা প্রাঙ্গনে অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও রয়ে গিয়েছে সমস্যা।


ফুটবলে এবার বিশ্বকাপ উঠেছে মেসির হাতে। এখনও সেই জ্বর রয়ে গিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। ফলে কলকাতা বইমেলায় আর্জেন্তিনার স্টল দেখেই সেখানে ঢুঁ মারছেন অনেকেই। কিন্তু সেই স্টলে মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের কোনও ছবি দেখতে না পেরে হতাশ ফ্যানেদের একটা বড় অংশ। স্টলে মেসির একটি ছবি রয়েছে বটে। কিন্তু সেটি অনেক পুরনো। বইমেলায় এফ ১৩ নম্বর স্টলে রয়েছে লাতিন আমেরিকান কান্ট্রিস। এই স্টলের মধ্যে রয়েছে কোস্টারিকা, কলম্বিয়া, গুয়েতামালা, আর্জেন্তিনার বিভিন্ন দেশের শিল্প ও সংস্কৃতির ছবি। সাহিত্য ও সংস্কৃতির কিছু বইও রয়েছে সেখানে। কিন্তু অনেকেই খুঁজছেন বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্তিনাকে। সেখানেই তাঁরা কিছুটা হতাশ। তাঁদের কথায়, আর্জেন্তিনার স্টলে বিশ্বকাপে চুমু খাওয়া মেসির ছবি দেখতে পাব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা হল না।

থিম কান্ট্রি স্পেনের স্টলেও উপচে পড়ছে ভিড়। বাংলাদেশ, জাপান, আমেরিকা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্টলেও ভিড় নজরে পড়েছে। ফ্রান্সও ভিড় টানছে সমানমাত্রায়।


বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর বই। বাণী প্রকাশনী গ্রুপের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে অটলবিহারী চয়ন সমগ্র। দাম সাড়ে চার হাজার টাকা। যোগী আদিত্যনাথের বইও মিলবে এখানে। মিত্র ও ঘোষের নতুন বইয়ের তালিকায় রয়েছে সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষালের লেখা ‘বরুণ সেনগুপ্ত ও বর্তমানের কাহিনী’। তিলোত্তমা মজুমদারের ‘অভ্রমেঘের জল’। প্রচেত গুপ্তর ‘একটি সংক্ষিপ্ত হত্যা রহস্য’। সমরেশ মজুমদারের ‘উল্টো পথ’। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অলৌকিক সমগ্র’।

কথা ও কাহিনীর সদ্য প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে পল্লব মিত্রের ‘কলকাতায় মনীষীদের ভবন’। চঞ্চলকুমার ঘোষের ‘ভাগীরথীর চরণতলে’। ড. পরেশচন্দ্র দাস ও ড. পায়েল মুখার্জির ‘চরিতাভিধান’। সাংবাদিক শম্ভু সেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘বরণীয় বঙ্গনারী’। পাওয়া যাচ্ছে ক্যালকাটা জার্নালিস্ট ক্লাবের ৪০০ নম্বর স্টলে। দিল্লির বিশিষ্ট সাংবাদিক সমৃদ্ধ দত্তের ২০তম বই প্রকাশ হল এবারের বইমেলায়। করুণা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অলীক পর্যটন বইটি। দলিত সভ্যতা গুপ্ত রূপকথা বইটি প্রকাশ করেছে গাঙচিল। দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে সমৃদ্ধ দত্তের ‘অপারেশন ’৭১’ বইটি। পত্রভারতী প্রকাশ করেছে তাঁর ‘স্বাধীনতা: রুদ্ধশ্বাস এক বছর’ বইটি। সাংবাদিক স্বস্তিনাথ শাস্ত্রীর ‘কয়েক ঘণ্টার আপনজন’ বইটিও পাওয়া যাচ্ছে কলকাতা বইমেলায়। বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্বদের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার রয়েছে বইটিতে।

নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাড়া জাগানো সাহিত্যিক দেবারতী মুখোপাধ্যায়ের বইগুলি এবারের বইমেলায় খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। শনিবার লেখিকা নিজে হাজির ছিলেন বইমেলায়। পত্রভারতী ও দীপ প্রকাশনীর স্টলে বসে নিজের বইয়ে সই করেছেন। কথা বলেছেন পাঠকদের সঙ্গে। ছবি তোলার আবদার মিটিয়েছেন। গতবার বইমেলায় ভিড় সামলানোর জন্য তাঁর সঙ্গে বাউন্সার রেখেছিল প্রকাশক সংস্থা। এনিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। এবার অবশ্য লেখিকা আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এমন কোনও কোনও ব্যবস্থা থাকলে তিনি বইমেলার মাঠে পা দেবেন না। দেবারতীর ‘নারাচ’ উপন্যাসটির চাহিদা ছিল ভালই। এবার সরস্বতী পুজোয় হুগলির একটি পুজো কমিটি এই উপন্যাসকেই থিম করে মণ্ডপ সাজিয়েছিল।

দেবারতীর রুদ্র প্রিয়ম সিরিজের পাঁচটি উপন্যাস একসঙ্গে বক্স সেট করে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে দীপ প্রকাশন। বইমেলার স্মৃতি মনে করতে গিয়ে লেখিকা বলেছেন, ছ’সাত বছর বয়সে বাবার হাত ধরে কলকাতা বইমেলায় আসা শুরু। তখন মেলা হত ময়দানে। মেলাশেষে দু’হাত ভর্তি বই নিয়ে মেট্রো ধরে বাড়ি ফিরতাম। বড় হয়ে কলেজ ফেরত একাই চলে আসতাম বইমেলায়। ঘুরতাম। এখন অবশ্য সেই ঘোরাটাকে মিস করি। নিজের মনে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে আনমনে ঘোরা, বই খোঁজা, এর মাদকতায় আলাদা। এবার প্রকাশিত হয়েছে দেবারতীর হারিয়ে যাওয়া খুনিরা সিরিজের চতুর্থ বই ‘জন্তু’। ধরা পড়া এক সিরিয়াল কিলারের বয়স মাত্র আটক। এরমধ্যেই হাসতে হাসতে সেই তিন তিনটে খুন করে ফেলেছে। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলারের সেই শিহরণ জাগানো হত্যামামলা নিয়েই এই বইটি।

কিশোরদের জন্য দেবারতীর বই ‘লেজ’-এর চাহিদাও ভাল। এবার প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যর বই ‘অফ স্ট্যাম্পের বাইরে’। দীপ প্রকাশনের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। শনিবার গৌতমবাবু হাজির ছিলেন মেলায়। ৪৬৮ নম্বর স্টলে পাঠকদের সঙ্গে জমে ওঠে ক্রিকেট আড্ডা। দিল্লির বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ির ‘প্রণব মুখার্জি: রাজনীতির ভেতর বাহির’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা টাউন লাইব্রেরি, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ৪০ নম্বর স্টলে। এছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে খড়ি প্রকাশনীর ৫০৪ নম্বর স্টলে। পাওয়া যাচ্ছে ধ্যানবিন্দুর ৫৪৮ নম্বর স্টলে। দিল্লি প্রেস ক্লাবের প্রথম বাঙালি সম্পাদক ও প্রণব মুখার্জির বহু সফরের সঙ্গী গৌতমবাবুর এই বইটির চাহিদা ভালই।

এবারের বইমেলায় ১০০ জন শিল্পীর ছবি নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

উদ্যোক্তা আর্টিস্ট ফোরাম অব বেঙ্গল। স্টল নম্বর ৫৬৯। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পী যোগেন চৌধুরী। এখানে বই, ছবির পাশাপাশি রয়েছে ভাস্কর্যও। এই প্যাভিলিয়নে স্থান পেয়েছে শিল্পী দীপঙ্কর বিশ্বাসের চারটি ছবি।

শালিধান প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুকন্যা, দেবলীনা ও বর্ণালী তিন লেখিকার যৌথ বই ‘তবুও কি সত্যি’? পাওয়া যাচ্ছে ৩৭১ নম্বর স্টলে। আমাদের খুব চেনা পৃথিবীর বুকে যেসব ঘটনা, মিথ, বিশ্বাস ধূসর রঙে লেখা আছে, সেগুলিই যত্ন করে গল্প সংকলনে সাজিয়েছেন তিন লেখিকা।

এই প্রকাশনীতেই মিলছে সাংবাদিক অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই ‘লাল হলুদের ডায়েরি’। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে বইটির উদ্বোধন হয়েছে। এর আগে অর্ঘ্যর লেখা ‘সবুজ ঘাসের মেরুন গল্প’ বইটিরও প্রকাশক শালিধান। এখানেই মিলছে সাংবাদিক-লেখক ব্রতীন দাসের ‘বিশ্বম্ভর চৈতন্যের নিত্যানন্দ’ বইটির নয়া সংস্করণ। বাংলার সহজিয়া বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ নিতাই অর্থাৎ নিত্যানন্দের জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখা বইটি ইতিমধ্যেই পাঠকদের কাছে সমাদৃত। বইটির ভূমিকা লিখেছেন প্রভু নিত্যানন্দের চতুর্দশ বংশোধর সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী। বুক ফার্মের ১৫৫ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে সাংবাদিক চিত্রদীপ চক্রবর্তীর লেখা বই ‘২৫ এখনও পর্যন্ত’। এক ক্রাইম রিপোর্টারের ডায়েরি এই বইটিরও ভাল চাহিদা। লেখক জানিয়েছেন, সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব কোনও সাংবাদিকের স্কোর বোর্ড হতে পারে। কিন্তু রক্ত-ঘাম ঝরানোর মাপকাঠি কখনওই নয়। যে পরিমাণ হতাশা, ক্ষোভ ও অফিস রাজনীতির বৃত্তে তাঁকে চরকিপাক খেতে হয়, সেটা অন্য যে কোনও পেশাদারের থেকে কম নয়, বরং অনেক অনেক বেশি।

আনন্দ ও দুঃখের অনুভূতিগুলো বুকে চেপে রোজকার এই রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনাগুলো কখনও খবর হয় না। খবরের ভিতরের সেই গল্পগুলোই এই বইয়ের বিষয়বস্তু। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ, নন্দীগ্রাম আন্দোলন, লালগড়ে কিষেণজি, বিমল গুরুংকে শায়েস্তা করা, আমেরিকান সেন্টারে হামলা, খাদিম কর্তা অপহরণ, সুটিয়ার গণধর্ষণ, হাওড়ার ক্র্যাপ আয়রন গ্যাং, জালনোট চক্র, মুম্বই বিস্ফোরণের মতো ২৫টি ঘটনার ভিতরের গল্প রয়েছে বইটিতে। ১৫৫ নম্বর স্টলেই পাওয়া যাচ্ছে সাংবাদিক আর্যভট্ট খানের বই ‘পশ্চিমের হারানো অ্যালবাম’।

একজন সাংবাদিকের চোখে দেখা, এককালের বাঙালির প্রিয় পশ্চিম, হাওয়া বদলের ঠিকানা, হাজারিবাগ, মিনি ইংল্যন্ড ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, রাঁচি, পালামু। খবরের কাগজে কাজের সূত্রে নিত্যদিনের সংবাদ সংগ্রহ ছাপিয়ে থাকে দেখা ও জানার যে চোখ ও মন, তারাই লিখিয়ে নিয়েছিল একগুচ্ছ লেখা। দু’মলাটে যাদের গেঁথেছে এই বই।
পাতা উল্টে যায়, মেঘ ভাঙা রোদের মতো নতুন দিন হাত বাড়ায় আগামীর দিকে। প্রতিটি দিন এক নতুন সূচনাকে সম্মুখীন করে জীবনের। আমরা আন্দোলিত হই সেই নব সূচনার ছন্দে। প্রকাশিত হল কবি মৌসুমী মুখার্জির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মন বলে’, কবি ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘপাখির ডানা’, কবি সঞ্জীব সিনহার কাব্যগ্রন্থ ‘চলো যাই’, কবি কাজল রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘপর পালক’, কবি ধ্রুবদেব ক্যাওড়ার কাব্যগ্রন্থ ‘এখনও খুঁজছি তাকে’, কবি ও গল্পকার মিতা দাস বিশ্বাসের দুই বই ‘আমি সেই মেয়ে’ ও ‘সেতুবন্ধন’।

নলিনী বেরার ‘আমফুল জামফুলের দেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে নৈঋত প্রকাশন। তাদেরই বই কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই ‘এই গল্প, এ সময়’। এই সময়ের ২০টি প্রাপ্তমনস্ক গল্প রয়েছে বইটিতে। পাওয়া যাচ্ছে ৪১৯ নম্বর স্টলে। এখানেই পাওয়া যাচ্ছে সাংবাদিক গোপাল মিস্ত্রির গল্পের বই ‘ভাসান শেষে দাহন’। নৈঋতের স্টলে মিলছে শান্তনু বসুর ‘পানাগড়ের জঙ্গলে’ বইটি। এখানে রয়েছে রামতনু ঘটীর বই ‘আমার ভাললাগা ছড়া কবিতা’ এবং ‘রাজামশাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর’। ইমদাদুল হক মিলনের ‘ভূতুড়ে’ বইটিও ছেপেছে নৈঋত। বইমেলায় মিলছে সাংবাদিক মৃণালকান্তি দাসের লেখা ‘পেলে’। ফুটবল সম্রাটের জীবনের নানা অজানা দিক ধরা পড়েছে বইটিতে। প্রকাশক সেন ব্রাদার্স। নোটবন্দির ছ’বছরে কী পেলাম আমরা? নোটবন্দির আড়ালে আসলে কী খেলা ছিল? তা নিয়েই বই লিখেছেন মৃণালকান্তি দাস। বইমেলায় রয়েছে তাঁর লেখা বই মোসাদ, মালালা, র, নাদিয়ার আতঙ্ক, পটভূমি আমেরিকা ছাড়াও আরও বেশকিছু বই।

অন্য ধারার এগারোটি জমজমাট গল্পের সংকলন পাওয়া যাচ্ছে দে’জ পাবলিশিং, অরণ্যমন প্রকাশনী ও শব্দ প্রকাশনের স্টলে। লিখেছেন ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, এমিলি বিশ্বাস, বাসুদেব মালাকার, বিনোদ ঘোষাল, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দু সামন্ত, অনিন্দিতা পাত্র, শাশ্বতী নন্দী, সুবর্ণা মান্না ও জয়দীপ চক্রবর্তী। শনিবার এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানির উদ্যোগে ‘ভারতবর্ষ’ গ্রন্ধমালা প্রকাশ হয়েছে। চন্দ্রাণী মজুমদারের একক গ্রন্থ ‘শ্যাওলা জমেছে বুকে’ পাওয়া যাচ্ রংমিলান্তি প্রকাশনীর স্টলে। প্রকাশিত হয়েছে সোমেনচন্দ বাংলা অ্যাকাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত সুকান্তি দত্তের প্রথম থ্রিলার ‘হননসন্ধ্যা’।

প্রকাশক অভিযান পাবলিসার্স। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প অবলম্বনে বাংলা গ্রাফিক নভেল ‘খগম’ পাওয়া যাচ্ছে রিড বেঙ্গলি বুক স্টোরে। মহাভারতের কাহিনির নবনির্মাণ পঞ্চকথা প্রকাশিত হয়েছে পঞ্চালিকা প্রকাশনী থেকে। সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্যের ‘ফুড পদাবলী’ এবং ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ’ বইটিও দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। অভিযান প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে শান্তনু বসুর ‘রবীন্দ্রনাথ জীবন ও কর্মকাণ্ড’ ও ‘রবিবাবুর গান থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত’। ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাস মার্ডার মিস্ট্রি ‘দ্য সিক্রেট উন্ড’ পাওয়া যাচ্ছে শপিজেন প্রকাশন স্বপ্নের বইঘরে। সুস্মিতা সাহার ‘কাফনের ঘ্রাণ’ ও যার প্রিক্যুয়েল ‘দেবীরক্ত’ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, এটি নভেলা সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে অভিযানে।

ভাল বিকোচ্ছে সঞ্চারী চ্যাটার্জির ‘পিঞ্জর’। জনপ্রিয় হয়েছে কুঞ্চের লামার করোটি, এবং ঊর্ণনাভ, সোনালী ত্রিভূজের বন্দি, শ্যামল ঘোষের লেখা থ্রিলার। খোয়াই পাবলিশিং হাউসের বই মধুরিমা কুমারের লেখা ভৌতিক রহস্য উপন্যাস ‘লালীবাঈ এর অভিশপ্ত আংটি’। রূপক সাহার কলমে পড়ে দেখতে পারেন ‘ঘটসুতলি’। উত্তরবঙ্গের লেখিকা হিমি মিত্র রায়ের বই ‘ঘূর্ণাবর্তের পরে’ প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। লেখিকা জানালেন, বইটির উপজীব্য বিকৃতমনস্ক এবং স্যাডিস্ট, অন্যকে কষ্ট দিয়ে যে আনন্দ পায় এমন একজন মানুষের সংস্পর্শে আসে আধা সামরিক স্কুলের সাধারণ কর্মী অনুপমা। কলেজে জীবনের হঠাৎ প্রেমের বিয়ে তাকে নিয়ে যায় এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। চাকরি এবং ব্যক্তিগত নানান দুর্দশায় জর্জরিত এবং ক্লান্ত বিধ্বস্ত সিঙ্গল মাদার অনুপমা লড়াই করে চলে প্রতিনিয়ত। অন্যতম প্রিয় বান্ধবী তাকে আলোর পথ দেখায়, ছায়ার মতো সত্যিকারের পাশে থেকে, সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ‘পাশে আছি’ বলে দূরে চলে যায় না।

বইমেলায় ছবিগুলি তুলেছেন ধ্রুবহালদার৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here