দীপাবলির রাতে বারাসতে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ল। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে জেলা সদরের প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশকে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হতে হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে যত রাত বেড়েছে ততই দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে।
১২ নম্বর জাতীয় সড়ক, যশোহর রোড, টাকি রোডের ধারের পুজো মণ্ডপেও ভিড় ছিল যথেষ্ট। জনস্রোতের ছবিটা একই রকম দেখা গিয়েছে পড়শি শহর মধ্যমগ্রামে। এ দিন বিকেল ৪টে থেকে বারাসতে প্রবেশের পাঁচ পয়েন্টে নো-এন্ট্রি করে দিয়েছিল পুলিশ।
বাইক, অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া ছোট, বড় সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ছটি এলইডি স্ক্রিন এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
পুলিশের নির্দেশে বুধবার জেলা সদরের সব পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন হয়ে গিয়েছিল। উদ্বোধনের পর থেকেই মণ্ডপগুলিতে ভিড় শুরু হয়। বারাসতের বাসিন্দারা তো বটেই, এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন দর্শনার্থীরা। রাত কিছুটা বাড়তেই ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক কার্যত দর্শনার্থীদের দখলে চলে যায়।
এ দিন বনগাঁ থেকে দুই বান্ধবী নীহারিকা এবং সায়নী এসেছিলেন। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তাঁদের ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা। কলোনি মোড়ে একটু বিশ্রাম নিয়েই ফের বেরিয়ে পড়লেন ঠাকুর দেখতে। তাঁদের কথায়, ‘কালীপুজোর দিন বারাসতে প্রত্যেকবারই আসি। না এলে মনে হয় কত কিছু মিস করে গেলাম। এ বার একদিন মধ্যমগ্রামেও যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’ দেখুন ভিডিও
বারাসত ডাকবাংলো মোড় থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ময়না পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথে শহরের অধিকাংশ বড় বাজেটের পুজো হয়। সন্ধানী ক্লাবের রাশিয়ান মনুমেন্ট দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। ১১ নম্বর রেলগেট পেরিয়ে তরুছায়ার মণ্ডপ থেকে আমরা সবাইয়ের কৈলাস ও মানস সরোবর দেখতে এ দিন ভিড় উপচে পড়েছিল। দেখুন ভিডিও
দর্শনার্থীদের ঢল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি মণ্ডপের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। তিব্বতের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যত হিমশিম খেতে হয়েছে পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের।
নবপল্লি অ্যাসোসিয়েশনের বৃন্দাবনের প্রেমমন্দির দেখতেও মানুষ ভিড় করেছিলেন। এই মণ্ডপের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে কলোনি মোড় এবং নবপল্লির রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে।
১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রেজিমেন্ট ক্লাবের ফ্রান্সের চার্চ দেখতে এসেছিলেন মানুষ। ব্যারাকপুর-বারাসত রোডের ছাত্রদলের দক্ষিণ ভারতের নারায়ণ মন্দির দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। কেএনসি রেজিমেন্টের পুজোয় ছিল থিকথিকে ভিড়। একই ভিড় ছিল টাকি এবং যশোহর রোডেও।
মধ্যমগ্রামের চৌমাথা সংলগ্ন ইয়ং রিক্রিয়েশন থেকে যশোহর রোডের ধারে পূর্বাশা যুব পরিষদের পুজো মণ্ডপে জনজোয়ারে ভেসেছিল। একই পরিস্থিতি মাইকেলনগরের নেতাজি সঙ্ঘ থেকে মধ্যমগ্রাম সুভাষপল্লি, চণ্ডীগড় অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজো মণ্ডপগুলিরও। এ দিন বিকেল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা সদরের জাতীয় এবং রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ।
পুলিশের নো এন্ট্রির জন্য শহরের অনেক বাসিন্দা গন্তব্যে পৌঁছতে নাকাল হয়েছেন। পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘দর্শনার্থীদের ভিড় নিশ্চিত বুঝেই এ দিন শহরে ঢোকার কয়েকটি রাস্তায় নো এন্ট্রি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের স্বার্থে দুর্ঘটনা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত।’