দেশের সময়, কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলীয় স্তরে বৈঠক শুরু করে দিল তৃণমূল। বুধবার এই বৈঠক করা হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের সঙ্গে। কালীঘাটে আয়োজিত এই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ছিলেন সুব্রত বক্সির মতো দলের সিনিয়র নেতারা।
এদিনের বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন কারুর যদি কিছু বলার থাকে তবে সেটা দলের মধ্যেই বলতে হবে। বাইরে নয়।
সম্প্রতি তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক নিয়ে যথেষ্টই চর্চা হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। দলের একাধিক নেতা এবিষয়ে তাঁদের মতামত জানাতে গিয়ে নানারকম মন্তব্য করেছেন বাইরে। যা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও হয়। কিন্তু বুধবার দলের সুপ্রিমোর এই নির্দেশের পর এটাই স্পষ্ট দলের একশ্রেণীর নেতার যত্রতত্র এই মন্তব্যের ওপর রাশ টানতে চান তিনি। তাই এই নির্দেশ।
এদিনের বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অভিষেকের উপস্থিতি। কারণ, সম্প্রতি নিজেকে শুধু ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার মধ্যে অভিষেকের “ইচ্ছা” প্রকাশ এবং তারপর সামাজিক মাধ্যমে “সেনাপতি” হিসেবে অভিষেককে চেয়ে তৃণমূল যুব নেতাদের ফেসবুক পোস্ট। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে কৌতুহল তৈরি হয় শেষপর্যন্ত অভিষেক কী করবেন? কিন্তু তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, এদিনের বৈঠকে অভিষেক জানিয়েছেন নেত্রী যা নির্দেশ দেবেন সেটাই পালন করবেন। ফলে এটাই মনে করা হচ্ছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অভিষেককে গোটা রাজ্য জুড়েই দলের হয়ে প্রচারে দেখা যাবে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, অভিষেককে এদিন মমতা একটি বিশেষ পুস্তিকা প্রকাশের দায়িত্ব দিয়েছেন। যেখানে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিষয়টির সঙ্গে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের মতো বিষয়গুলি রাখতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে থাকবে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান।
অন্যদিকে তৃণমূলের একটি সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, লোকসভার আগেই দলীয় মুখপাত্রে বদল আনা হবে। মুখপাত্র বাছাইয়ের এই কাজটি করবেন সুব্রত বক্সী এবং অভিষেক ব্যানার্জি। এইমুহুর্তে তৃণমূলে আছেন ২১ জন মুখপাত্র। ফলে নতুন মুখ হিসেবে কে বা কারা আসতে পারেন তাই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
বৈঠকে আর যা হয়েছে—
- পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু নেতা এবং রাজ্য নেতাদের একাংশের নাম না করে বকাঝকাও করেছেন দিদি।
- দিদি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলে গণতন্ত্র রয়েছে মানে যা নয় তাই করা যাবে, এমন চলবে না। কারও কিছু বলার থাকতেই পারে। তা দলের মধ্যেই বলতে হবে। বাইরে মিডিয়াকে ডেকে নয়।
- সবাই মুখপাত্র হয়ে উঠছে, এটা একেবারে না পসন্দ দিদির। মমতা বৈঠকে বলছেন, দলের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সামনে কিছু বলা যাবে না। সোশাল মিডিয়ায় দুমদাম পোস্ট করাও যাবে না।
- রাজ্যের মন্ত্রী ও সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুইঞাঁকে দুই মেদিনীপুর দেখতে বলা হয়েছে।
- মেদিনীপুর পুরসভায় শাসক দলের কাউন্সিলরদের ঝগড়া মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানস ভুইঞাঁ ও জেলা সভাপতিকে।
- জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিয়ে মানিয়ে গুনিয়ে চলতে হবে।
- কেশিয়ারি ব্লকের সভাপতি শ্রীনাথ হেমব্রমকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- বিজেপি যে তৃণমূলকে চোর বলছে, তার জবাব দিতে হবে। বিজেপিকে ডাকাত বলে যেন তুলোধনা করা শুরু করেন তৃণমূলের নেতারা।
- খড়্গপুরে কেন পার্টি অফিস তৈরি হয়নি, তা নিয়ে এদিন দীনেন রায়কে প্রশ্ন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।