দেশের সময়,হাবরা: সিপিএম-কে সামাজিক বয়কটের ডাক দিলেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বামেদের সঙ্গে না চলার পরামর্শ দিলেন মন্ত্রী। তাঁর নিদান, কোনও সিপিএম নেতা বা কর্মীর সঙ্গে চা দোকানে না বসাই ভাল। এমনকী সিপিএম কর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কও এড়িয়ে চলতে বললেন তিনি।

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা এক নম্বর ব্লক অফিসে দুয়ারে ডাক্তার পরিষেবা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী বলেন, “সিপিএম শেষ হয়ে গিয়েছে। এদের কিছু হবে না। যেই মুখগুলিকে দেখছেন। সেগুলো পচে গিয়েছে। নতুন মুখ চাই।” দেখুনভিডিও

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তখন সদ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছেন। খাদ্যমন্ত্রী হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। সেবছরই জ্যোতিপ্রয় একটি সভায় বলেছিলেন, সিপিএম বিষধর সাপের মতো। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা উচিত। সেইসঙ্গে বালু এও বলেছিলেন, সিপিএমের সঙ্গে কারও বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানো উচিত নয়, একসঙ্গে বসে চা খাওয়া উচিত নয়। এমনকি সিপিএমের কেউ যদি কোনও বিয়েবাড়িতেও নেমন্তন্ন খেতে যায় সেখানেও যাওয়া বয়কট করা উচিত। একযুগ পর সেই জ্যোতিপ্রিয় পুরনো স্লোগানকে এখন প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করলেন।

এদিন মন্ত্রী বলেন, “২০১১ সালে আমি স্লোগান দিয়েছিলাম বলেছিলাম যে সিপিএম-এর সঙ্গে চলব না, বৈবাহিক সম্পর্ক করব না, তারা কোনও বিয়ে বাড়ি গেলে যাব না, চা দোকানে গিয়ে গল্প করব না। এই স্লোগান আজকে খুব প্রযোজ্য। আমি ওদের সঙ্গে চলা পক্ষপাতি নই।”

এদিন হাবড়ায় বনমন্ত্রী বলেন, ‘সিপিএম বীভৎস, ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক দল। আমি ২০১১ সালে যে কথা বলেছিলাম এখনও সেটাই প্রযোজ্য। আমি অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটা করি। সিপিএমের সঙ্গে চা খাই না, গল্প করি না।’
জ্যোতিপ্রিয়র এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বালুবাবুকে আজকে অনেকদিন পর দেখলাম। দেখে খারাপ লাগল। অনুব্রত মণ্ডলের জেলে ঢোকার পর গোঁফ-দাড়ি সাদা হয়েছিল। ওঁর এখনই হয়ে গিয়েছে। আমি মন্ত্রীমশাইকে বলব, সিপিএম নিয়ে বেশি না ভেবে সিবিআই নিয়ে ভাবুন। যে কোনওদিন কলিংবেল বাজবে!’

এরপর সিপিএম-কে তীব্র কটাক্ষ করে বনমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা কী করে গেছে দেখছেন না? শুনছেন না ব্রাত্য বসুর মুখে? “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি প্রতিটি দফতরের তদন্ত করেন তাহলে ওদের কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন। সবে তো শুরু। শিক্ষা দফতর থেকে শুরু হয়েছে।”

মমতা বন্দ্যোপাধায় যদি পুরো তদন্ত শুরু করেন তাহলে সিপিএম নেতাদের হালত খারাপ হয়ে যাবে।’

এরও জবাব দিয়েছে সিপিএম। কৌস্তভ বলেন, ‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যেন একবার ব্রাত্য বসুর কাছে এইটা জেনে নেন যে, ব্রাত্য বসু সিপিএমের কোন নেতাকে ঘুষ দিয়ে সিটি কলেজে চাকরি পেয়েছিলেন। সেটা বলে দিলেই হয়ে গেল!’

প্রসঙ্গত,  নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তাবড়-তাবড় তৃণমূল নেতাদের। বিরোধীদের গ্রুপ সি থেকে গ্রুপ ডি চাকরি বাতিলের তালিকায় যে সকল প্রার্থীরা রয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল নেতা কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠ। অর্থাৎ কারচুপি করে শাসকদল তাঁদেরই কর্মীদের চাকরি দিয়েছে এমন অভিযোগ বারংবার উঠেছে। তবে ময়দনা ছাড়েনি তৃণমূলও। বামেদের ৩৪ বছরে নিয়োগ দুর্নীতির ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আজ বিস্ফোরক উক্তি করেন তিনি।

যদিও অন্য সুর শোনা গিয়েছে ফিরহাদ হাকিমের গলায়। ফিরহাদ বলেন, ‘আগে মানুষ, পরে দল। সিপিএম এর বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে কাউন্সিলর, এমএলএ হিসেবে আমার কর্তব্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো। সিপিএম বাড়ির কেউ মারা গেলে আমি শ্মশানযাত্রী হব। এটা আমার মানবিক কর্তব্য। আগে মানুষ পরে দল। সামাজিক বয়কট সিপিএম করত। আমরা এসবে বিশ্বাস করিনা । আমরা বিবেকানন্দের কথা বিশ্বাস করি।’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই কথা বলে উনি দর বাড়াচ্ছেন। আগে এই কথা বলে দর বেড়েছিল। মাঝে কমে গিয়েছিল। এখন আবার দর বাড়ানোর জন্য এমন বলছেন। সামাজিক বয়কট করার কথা ওরা কেন বলবেন? এটাই ওদের কাজ। কিন্তু মানুষ বুঝে গিয়েছে ওদের।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here