দেশের সময়: সিপিএম ভয়ঙ্কর পার্টি। ওদের সঙ্গে মিশবেন না। ফের ‘ফতোয়া’ দিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ঠিক এই ফতোয়ায় দিয়েছিলেন তিনি। আবারও তাঁর মুখে সেই পুরনো স্লোগান শোনা গেল। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিকে ছেড়ে কেন তিনি সিপিএমকে নিশানা করলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথার রেশ ধরে বামেরা অবশ্য বলছেন, তা হলে কি রাজ্যের বনমন্ত্রী বুঝতে পারছেন যে, তৃণমূলের সরকারকে টলিয়ে দিতে পারে বিজেপি নয়, একমাত্র সিপিএমই। যদি এটাই তাঁর বোধোদয় হয়ে থাকে, তাহলে বলব, তিনি রাজনৈতিকভাবে বিজ্ঞ ও দূরদর্শী। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বিষয়টিকে মোটেই ফতোয়া বা নির্দেশ বলতে রাজি নন। তাঁর কথায়, আমি নির্দেশ দিতে পারি না। আমি নির্দেশ দেওয়ার কেউ নই। আমি নিজে মনে করি, সিপিএমের সঙ্গে মেশা উচিত নয়। সিপিএমকে বয়কট করা উচিত। সেটাই বলেছি।
শনিবার হাবড়া এক নম্বর ব্লক অফিসে দুয়ারে চিকিৎসক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই হাজির হয়েছিলেন হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কর্মসূচি শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সিপিএম শেষ হয়ে গিয়েছে। এদের কিছু হবে না। এখন সিপিএমের যে মুখগুলো দেখছেন, যাঁদের মাঝেমধ্যে টিভিতে দেখা যায়, সেগুলো সব পচে গিয়েছে। নতুন মুখ দরকার। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তুমুল জল্পনা ছড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বলে কার্যত বাংলার রাজনীতিতে সিপিএমকে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। একইসঙ্গে সিপিএমকে ভোকাল টনিক দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিজেপি নেতাদের অবশ্য বক্তব্য, লোকসভা ভোটে যে তৃণমূলের ভরাডুবি হবে তা বুঝতে পারছেন মন্ত্রী। বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। গলা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ডুবে থাকা জোড়াফুলের নেতারা এখন কোথায় পালাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তাই সিপিএমকে অক্সিজেন জোগানোর চেষ্টা করছেন মন্ত্রী। কিন্তু এসব করে কোনও লাভ হবে না। তৃণমূল সরকারের তো পতন হবেই। সেইসঙ্গে সিপিএমও আর কোনও দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আগামী দিনে বিজেপির হাত ধরেই এই বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ অবশ্য বলছেন, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে যেভাবে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির অলিখিত জোট হয়েছে, সেই জোটকে মোটেই হাল্কাভাবে নিচ্ছে না তৃণমূলের একাংশ। আগামী লোকসভাতেও যদি এই জোট কাজ করে, তা হলে তৃণমূলের ভালোই ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছে জোড়াফুলের ওই শিবির। ফলে বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের আঁতাত ভাঙতেই এখন বামেদের আক্রমণ করতে শুরু করেছেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। তাঁদের লক্ষ্য, বামের ভোট যাতে কোনওভাবেই রামে অর্থাৎ বিজেপিতে না যায়।
এদিকে, এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ২০১১ সালে বলেছিলাম, সিপিএমের সঙ্গে চলবেন না। রাস্তায় দেখা হলেও কথা বলবেন না। সিপিএমের কোনও নেতা বা কর্মীর সঙ্গে দেখা হলে, তাঁদের সঙ্গে বসে চা খাবেন না। এমনকী সিপিএমের পরিবারের সঙ্গে ছেলেমেয়ের বিয়েও দেবেন না। আমি মনে করি, এখনও কথাগুলো সমানভাবেই প্রযোজ্য। এবং এগুলো মেনে চলা উচিত।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সিপিএমকে বিঁধতে গিয়ে বলেছিলেন, সিপিএম হল বিষধর সাপের মতো। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা উচিত। তাঁর ওই মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন, সিপিএমের যদি কেউ কোনও বিয়েবাড়িতে নেমতন্ন খেতে যায়, সেখানে যাবেন না। সামাজিকভাবেই বয়কট করুন সিপিএমকে। তাঁর ওই কথা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কম জলঘোলা হয়নি। ফের এতদিন পর কেন তিনি ওই একই কথা বললেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি জ্যোতিপ্রিয়।
এদিন শুধু ফতোয়া দেওয়াই নয়, সিপিএমকে কার্যত হুঁশিয়ারও করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। বলেছেন, সিপিএম যে কী করে গিয়েছে, তা গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মুখে শুনতে পারছেন। আমরা কিছু বলছি না, এজি বেঙ্গল বলছে। সব দপ্তরের দুর্নীতিই সামনে আসবে। আর সবটা সামনে এলে যে হালটা কী হবে তা বুঝতে পারছেন না সিপিএমের নেতারা। ওরা লুকনোর জায়গা পাবেন না। শিক্ষা দপ্তর দিয়ে শুরু হয়েছে। সব দপ্তরেই তদন্ত হবে। মানুষ জানতে চাইছে। তাদের জানার অধিকার আছে।
পুরসভার নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা, এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, তদন্তে কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তখনই তাঁকে দোষী বলা যায়। তার আগে সাজা শুনিয়ে দেওয়া যায় নাকি? কারও বিরুদ্ধে তো আগে চার্জ ফ্রেম করতে হবে, তারপর ট্রায়াল হবে, তারপর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তবেই সাজার কথা আসবে। ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের মাঝেই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে ডিএ’র কথা ঘোষণা করায় রাজ্যের উপর চাপ আরও বাড়ল কি? এনিয়ে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন বনমন্ত্রী। বলেছেন, ডিএ নিয়ে সব তথ্য আমার কাছে নেই। ফলে আমি এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।