কলকাতা : সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টানা ২ ঘণ্টা বৈঠকের পর শেষমেশ আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে নিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নবান্নে বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল এদিন ধর্মতলার মঞ্চে ফিরে আসেন। তাঁদের ফোরামের জেনারেল বডির বৈঠক হয়। তার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার।
পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও চলছিল ‘ভুখ হরতাল’। ১০ দফা দাবি আদায়ে অনড় ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত সোমবার সেই অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, নবান্ন-বৈঠকে প্রশাসনের ‘শরীরী ভাষা’ তাঁদের ভাল লাগেনি। আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মায়ের কথাতেই আন্দোলন তুলছেন তাঁরা। মঙ্গলবার যে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকেরা, সেটাও তুলে নেওয়া হয়।
সূত্রের মতে, সরকার যেমন অচলাবস্থা কাটাতে মরিয়া ছিল, তেমনই জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন প্রত্যাহারের জন্য একটা পথের সন্ধান করছিলেন। ট্র্যাক টু আলোচনার পর সেই দরজা খুলে যায়। তার ভিত্তিতেই শনিবার ধর্মতলায় ডাক্তারদের আন্দোলন মঞ্চে যান মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ও স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের তাঁরা ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। নবান্নের ওই সূত্রের মতে, ওই ঘটনাই ছিল মাইলফলক।
অনশন প্রত্যাহারের পর পরবর্তী কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার। তিনি বলেন, ‘‘সরকার হয়তো ভাববে আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই আন্দোলন করছি। সাধারণ মানুষের কথা আমরাই ভাবছি। আমরাই ভাবব। তাই এই অনশন প্রত্যাহার করলাম। আগামিদিনের কর্মসূচি হিসাবে ঘোষণা করছি, আগামী শনিবার মহাসমাবেশ ডাকছি।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে সেটা হবে।’’ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ৫ অক্টোবর থেকে অনশন করা অর্ণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা কথা বলতে চাই, স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্র বলতে যা বুঝি… সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা দুঃখজনক জিনিস দেখতে পেলাম। বৈঠকে মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানদের প্রতিনিধিদের চুপ করিয়ে দেওয়া হল। সায়ত্ত্বশাসনের অধিকার কী ভাবে খর্ব করা হল তা দেখতে পেলাম।’’ এর পর তিনি জানান, প্রয়োজনে আবার ‘আমরণ অনশন’-এ বসবেন।
গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’-এ বসেছিলেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা হলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার স্নিগ্ধা হাজরা, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তনয়া পাঁজা, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়।
পরের দিন, ৬ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন সেখানকার উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অলোক বর্মা।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, জুনিয়র ডাক্তাররা পোড় খাওয়া রাজনীতিক নন। সরকার তাঁদের সব দাবি না মানলেও তাঁরা অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তাতে যাতে মনে না হয় যে তাঁরা দমে গিয়েছেন, সেই কারণেই এদিন উচ্চস্বরে কিছু কথা বলতে চেয়েছেন।
এও বোঝাতে চেয়েছেন তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে। সেই কারণে তাঁরা অনশন প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে কোনও কৃতিত্ব দিতে চাননি। বরং অনশন মঞ্চে ডেকে আনা হয়েছে নির্যাতিতার বাবা-মাকে। তার পর জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, নির্যাতিতার বাবা-মা অনুরোধ করেছেন তাঁরা যেন অনশন তুলে নেন। তাঁরা একজন সন্তানকে হারিয়েছেন। আর কারও কোনও ক্ষতি হয়ে যাক তা তাঁরা চান না। বরং জুনিয়র ডাক্তাররা যে এত বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছেন সেটাই ইতিবাচক।