

ইডি আসছে বুঝতে পেয়ে পাঁচিল টপকে পালাতে যাচ্ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা । পালাতে তো পারেনইনি, ঝোপের মধ্যে পড়ে একেবারে কাদা মাখামাখি হয়ে যান। অভিযোগ, পালানোর সময় বাড়ির পিছনের ঝোপে একটি মোবাইল ফেলে দেন তিনি। পরে জীবনকৃষ্ণকে নিয়েই ওই ঝোপের মধ্যে থেকে মোবাইল উদ্ধার করেন ইডির আধিকারিকরা। তারপর তৃণমূল বিধায়কের নোংরা জামা পাল্টিয়ে ছ’ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার সকাল থেকেই কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ।
সকালে ইডির একটি দল পৌঁছে যায় বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের আন্দির বাড়িতে। হঠাৎ অভিযান দেখে পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ইডির তিন জওয়ান ধাওয়া করে তাঁকে ধরে আবার বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসেন। এরপর অন্তত পাঁচ আধিকারিক তাঁকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।

অভিযানের মাঝেই আরেক নাটকীয় ঘটনা। প্রথমে তদন্তকারীরা টের পাননি বিধায়ক তাঁর মোবাইল বাইরে ছুড়ে ফেলেছেন। কিছু পরে বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড় ঘেঁষা একটি নর্দমা থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
শুধু আন্দির নয়, সাঁইথিয়ায় জীবনকৃষ্ণের পিসি তথা তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি। একইভাবে রঘুনাথগঞ্জে তাঁর শ্বশুরবাড়ি এবং মহিষগ্রামের এক ব্যাংককর্মী রাজেশ ঘোষের বাড়িও তল্লাশির আওতায় এসেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই একই মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল সিবিআই জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছিল। তখনও তাঁর বাড়ি থেকে দু’টি মোবাইল ফোন তিনি পুকুরে ফেলে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। পরে পুকুরের জল ছেঁচে ফোন উদ্ধার করে সিবিআই। প্রায় ১৩ মাস জেলে কাটানোর পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে মুক্তি পান তিনি এবং বিধানসভাতেও হাজির হন। সোমবার সেই জীবন আবার সঙ্কটে। গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে তাঁকে। আজই ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হবে তৃণমূল বিধায়ককে।
জীবনকৃষ্ণের ওই মোবাইল ঘেঁটে সেই সময় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। অভিযোগ উঠেছিল চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েও শেষ পর্যন্ত যাদের চাকরি দিতে পারেননি সেই সব চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের কথোপকথনের একাধিক তথ্য রয়েছে ওই চ্যাটে।
কেন্দ্রীয় এজেন্সি সেই সময় দাবি করেছিল, সেখানে টাকা ফেরতের অনুরোধ করেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। পাল্টা হিসেবে বিধায়কের তরফে কখনও ‘অর্ধেক টাকা ফেরৎ দেওয়ার আশ্বাস’, কখনও বা ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে এক পয়সা না দেওয়ার হুঁশিয়ারি’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তদন্তকারীরা।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে সেই সময় এও দাবি করা হয়েছিল, চাকরি দেওয়ার জন্য কারও কাছ থেকে ১২ লক্ষ, কারও কাছে ১৮ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বিধায়ক।