Jessore Road : যশোর রোডের যানজট থেকে মুক্তি ? দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের আশার আলো দেখছেন বনগাঁবাসী

0
2271

দেশের সময়, বনগাঁ: উত্তর২৪পরগনার বনগাঁ থেকে কলকাতার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র জাতীয় সড়ক যশোর রোড । ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নয় ভারত-বাংলাদেশের নিত্যযাত্রীদের কাছেও এই সড়ক- যন্ত্রণার আরেক নাম। জাতীয় সড়ক হলেও রাস্তা এতটাই কম চওড়া যে এখানে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সে দুর্ভোগ শেষের ক্ষেত্রে মিলল আশার আলো।

এদিন ঐতিহাসিক যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৩০৫টি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সালে গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল শীর্ষ আদালত।

তবে এদিনের রায়ে আদালত জানায়, গাছ কাটার আগে দেড় হাজার গাছ লাগাতে হবে ভারতের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। আদালতের নির্দেশের পর যশোর রোড সম্প্রসারণ প্রকল্পের ওপর থেকে স্থগিত একপ্রকার সরে গেল বলেই মনে করছে প্রশাসন।

যশোর রোড ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের যশোর হয়ে খুলনার মধ্যে সংযোগ রক্ষার আন্তর্জাতিক সড়ক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত । ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনকালে এই রাস্তা পাকা হলেও রাজা প্রতাপাদিত্যের সময় থেকে অবিভক্ত বাংলায় এই যশোর রোড দিয়েই চলত যাতায়াত।

এমনকি দেশ ভাগের পর এই যশোর রোড ধরেই উদ্বাস্তুরা এসেছিলেন কাঁটাতারের এপারে। ফলে এই যশোর রোড এবং তার পার্শ্বস্থ প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন গাছগুলির সঙ্গে নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাজ্যের প্রবীণ মানুষদের।


তবে স্মৃতির থেকেও বেশি নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ভাবছেন বাসিন্দারা। শীর্ষ আদালত থেকে সবুজ সঙ্কেত পেতে এখন তাদের একটাই আশা, শীঘ্র শুরু হোক রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। গাছ কাটলে রাস্তা বাড়ানোর আরেকটু জায়গা মিলবে।

যশোর রোডের ধারে প্রাচীন গাছ কাটার সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে বনগাঁ ছয়ঘরিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ”এই রায়কে স্বাগত জানাই। সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে সেই নির্দেশ মেনেই খুব দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু হবে আশা করছি। পেট্রপোলসীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ড থেকে যশোর রোডের প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত- এর মধ্যে।”
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ”তবে গাছের প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই রয়েছে মানব সমাজ বেঁচে থাকবে এই গাছের জন্যই। ১৫০০ গাছ লাগানোর যে নির্দেশ এসেছে মহামান্য আদালত থেকে সেই নির্দেশ মেনেই গাছ লাগানো হবে।” প্রয়োজনে পঞ্চায়েতকে ওই গাছের দেখভাল করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ হলে শুধু এই শহরই নয় বাগদা,বয়রা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার নিত্যযাত্রীরা দীর্ঘদিনের যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন, পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে ৷ শহরে উড়াল সেতু তৈরীর মাধ্যমে সৌন্দার্যায়নও হবে ৷

এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট কবি মলয় গোস্বামী জানান, ”যশোর রোড ও তার পার্শ্ববর্তী গাছগুলির সঙ্গে বহু মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। দূর থেকে দেখলে যেগুলোকে পাহাড়ের মত লাগছে। গাছের তলা দিয়ে গেলে মনে হয় কোনও গুহায় ঢুকে পড়লাম, আমরাতো বৃষ্টি গাছ হিসেবেই জানি , ওরা না থাকলে, তাহলে তো আর বৃষ্টিই হবে না, কি জানি ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে আমার।”

গাছ কাটার নির্দেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ”নতুন করে যে গাছগুলি লাগানোর কথা বলা হয়েছে সেই গাছগুলি কি আদৌও বাঁচবে, নতুন গাছের খেয়াল রাখবে কারা আগে সেটা দেখা উচিত আদালতের ও প্রশাসনের বলেই মনে করছেন স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা।”

প্রসঙ্গত, বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য পূর্ত দফতর। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় APDR। তখন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দেন। পরে প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ উড়ালপুল বানানোর জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেন। তবে শর্ত হিসাবে আদালত জানিয়েছিল, একটি গাছ কাটার আগে পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে।

সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় এপিডিআর। সম্প্রতি গোটা দেশে ১১৮টি প্রকল্পের আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায়, খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানায় কেন্দ্র। তারই মধ্যে একটি মামলা ছিল যশোর রোড সম্প্রসারণ। কেন্দ্রের আবেদনের ভিত্তিতেই এই প্রকল্পগুলির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আদালত।

Previous articleJessore Road : বনগাঁ – বারাসত যশোর রোডে ৩০৬টি গাছ কাটার অনুমতি, রাস্তা সম্প্রসারণে আসবে গতি?
Next articleMaha Shivratri 2023: শিব চতুর্দশী উপলক্ষে সেজে উঠছে বংশিহারী মির্জাতপুর বকুলতলা শিব মন্দির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here