অপির্তা বনিক, বনগাঁ: যশোররোড দিয়ে গেলেই তাঁর বুকটা আজও কেঁপে ওঠে ৷ মনে পড়ে যায় ২০১২ সালের ৬ মে -র ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা ৷ গাইঘাটার মণ্ডলপাড়ার যশোর রোডে শিরিস গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল একটি যাত্রীবোঝাই অটোর উপরে ৷ সেই দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে ছিলেন বনগাঁর পরিচিত মুখ সাংস্কৃতিক কর্মী বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় সহ আরও কয়েক জনের ৷
ওই ঘটনার পরে প্রায় ১১ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। পুরোনো সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা বলতে বলতেই বৈশাখী দেবীর কন্যা শালিনীর চোখ ভিজে এলো৷ তাঁর কথায়,
এখনও প্রায় শোনা যায়, যশোর রোডে গাছের ডাল ভেঙে কেউ মারা গিয়েছেন, কেউ জখম হয়েছেন। এই সব খবর শুনে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে ৷দেখুন ভিডিও
জাতীয় সড়কে গাছ কাটা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ফের যশোর রোডের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে কিছু দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে গাইঘাটা বাজার এলাকায় পবিএ সরকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্ট ৫টি রেলসেতু তৈরির জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মরা, বিপজ্জনক গাছ কাটতে সমস্যা কোথায়?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কোনও ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই মাঝে মধ্যে ডাল ভেঙে পড়ছে। এই ধরনের গাছগুলি মৃতপ্রায়, ডাল ধরে রাখতে পারছে না। তাঁদের অভিযোগ, বার বার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ ৷
গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় প্রতি দিন হাজার হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। সাম্প্রতিক সময়ে যশোর রোডে গাছের ডাল ভেঙে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। জখম হয়েছেন অনেকে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর গাইঘাটার চাঁদপাড়া এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে একটি মুরগির দোকানে পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। একই এলাকায় ডাল ভেঙে অনেকে জখম হন। তাঁদের দাবি
মরা গাছগুলি দ্রুত কেটে ফেলা হোক।’’
বনগাঁর বাসিন্দারা জানান, ‘‘প্রত্যেক বারই ডাল ভেঙে মৃত্যু বা জখমের ঘটনার পরে মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান অনেকেই। তারপরে দু’একদিন গাছের মরা ডাল কাটা হয়। তারপর আবার সব থেমে যায়। বিপদ মাথায় করে যাতায়াত করতে বাধ্য হন এলাকার মানুষ।’’ এখনও বনগাঁ- গাইঘাটা এলাকায় বেশ কিছু বিপজ্জনক ডাল ঝুলে রয়েছে। সেগুলি অবিলম্বে কাটতে হবে। নিয়মিত এই কাজ চালিয়ে যাওয়া দরকার বলে দাবি করেন তাঁরা৷
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার-এর এক আধিকারিক জানান, যশোর রোডে নিয়মিত গাছের মরা, বিপজ্জনক ডাল কাটা হয়। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক সময়ে কোনও এলাকায় একটি গাছের ডাল কাটার কাজ শেষ হতে না হতেই ওই গাছেরই অন্য ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে। সেগুলি ফের শনাক্ত করে কাটার আগেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
‘‘অনেক গাছের জীবন ফুরিয়ে এসেছে। সেই সব গাছের ডাল বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গাছগুলি কেটে ফেলতে না পারলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’’ বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে গাছ কাটার আবেদন করলে মরা গাছ কাটতে পদক্ষেপ করা হবে। নিয়ম হচ্ছে, একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে। যারা কাটবে, এটা তাদের কাজ। আমাদের কাছে জমি ও গাছ চাইলে দিয়ে দেব।
পরিবেশ প্রেমীদের প্রশ্ন, গাছ কাটলে গৃহহারা হবে লক্ষাধিক পাখি।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে না তো!