দেশের সময় , কলকাতা: শ্রীজাত লিখেছিলেন, ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন।’ এ রকমই আরও কত গানে, কবিতায়, সিনেমায়, সাহিত্যে জড়িয়ে কলকাতার ট্রাম।

সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার। আগামী দিনেও জুটবে না বলেই মনে করেন শহরের ট্রামপ্রেমীরা। ট্রামকে শেষ করে দেওয়ার অভিযোগ সিপিএমের। আর রাজ্য সরকারের যা বক্তব্য, তাতে শহরের ‘হেরিটেজ’ হিসাবে ট্রামকে রক্ষা করার সদিচ্ছা থাকলেও দুর্গাপুজোর মতো হেরিটেজ তকমা জোগাড়ের তেমন তাগিদ আপাতত নেই।

কলকাতার পথে ট্রাম চলা শুরু করে ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সিপাহি বিদ্রোহ হয়ে গিয়েছে ১৬ বছর আগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নরেন্দ্রনাথ দত্ত তখনও কিশোর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেই ভরা শাসনের যুগেই কলকাতার রাজপথে প্রথমবার চলল ট্রাম।

অস্ট্রেলিয়ান ওয়েলার ঘোড়ার সাহায্যে প্রথম মিউনিসিপ্যাল ট্রামওয়ে চলেছিল ইস্টার্ন রেলওয়ের সদর স্টেশন শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লোকসানের জেরে যা ওই বছরেরই ২০ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায়।

সাময়িক বিরতি কাটিয়ে, ১৮৭৯ সালের ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি ও কর্পোরেশনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ীই তারপর ফের  ১৮৮০-র ২৭ নভেম্বর কলকাতায় ঘোড়ায় টানা ট্রামের চলাচল শুরু হয়।

বর্তমানের যে বিদ্যুৎচালিত ট্রাম শহরবাসী দেখতে অভ্যস্ত, তা শুরু হয় ১৯০২ সালে। 

ট্রাম নিয়ে বাঙালির একাধিক স্মৃতি। একসময় বিশেষ করে কলকাতার বাঙালির স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটি, সিনেমা, থিয়েটার, শপিং- সবকিছু জুড়েই ছিল এই ট্রাম। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু হয়েছিল এই ট্রামের চাকাতেই। গান, সাহিত্য, প্রেম- ট্রামের ভূমিকা বাঙালির জীবনে ছিল প্রতি মুহূর্তেই অনিবার্য। আরতির ঘণ্টাধ্বনি থেকে আজানের সুর- সবই মিশে যেত ট্রামের হাওয়ায়।

সেই ট্রাম এখন কেবলই হেরিটেজ। টিমটিম করে চলে মাত্র দুটি রুটে। তার মধ্যেই দেড়শো বছর উদযাপন। রাস্তার নামের মতোই রাস্তার ট্রামও বদলেছে। তা এখন অনেক বেশি ঝাঁ চকচকে। মূল লক্ষ্য শহরে আসা টুরিস্টরা। তার মধ্যে দিয়েই চলে ইতিহাসের খোঁজ এবং পুরনো কলকাতার নস্ট্যালজিয়াকে ছুঁয়ে আসার মেদুর অনুশীলন।

দেড়শো বছরে পড়ল কলকাতার ট্রাম। জন্মদিনে ধর্মতলায় অনুষ্ঠান। কলকাতা ট্রামের থিম সং -এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান হবে। রবিবার ট্রাম প‌্যারেড অনুষ্ঠিত হবে শহরে। রাজ্য পরিবহন দফতরের সহযোগীতায় অনুষ্ঠিত হবে ট্রাম প্যারেড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here