দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার বিকেলেই এসেছেন রাজ্যে। রবিবার পশ্চিমবঙ্গে জোড়া সভা জে পি নাড্ডার।
পূর্বস্থলী সভা থেকে তৃণমূলের নতুন সংজ্ঞা বোঝালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বললেন, TMC-র অর্থ তোলাবাজি সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিং অর্থাৎ, আর্থিক তছরূপ এবং দুর্নীতি ও কমিশন। পূর্ব বর্ধমানের সভা থেকে বঙ্গে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন তিনি।
পূর্বস্থলীর সভা থেকে নাড্ডার তোপ, “TMC-র নতুন নাম, T-এ তোলাবাজি টেরর, M-এ মানি লন্ডারিং এবং C-এ কোরাপশন এবং কমিশন।” এরপরেই, এ রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনার একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। নাড্ডার দাবি, অ্যাসিড হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। নারী নির্যাতনের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা চতুর্থ বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, সেখানে নারীরা এমন অসুরক্ষিত কেন?
২০২১-এ বাংলায় সরকার গড়ার স্বপ্ন সফল হয়নি। বিধানসভা ভোটে দুশো পার করার কথা বলেও ৭৭-এ থেমে গিয়েছিল বিজেপি প্রাপ্ত আসন। তাতে ভেঙে না পড়ে ২০২৬-এ বাংলায় সরকার গড়ার ডাক দিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা । রবিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর জনসভায় নাড্ডা পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার ডাক দিয়ে বলেন, ‘এক ধাক্কা অউর দো।’
তাৎপর্যপূর্ণ হল, তৃণমূলকে হটানোর ডাক দিতে গিয়ে বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসনের চার্জশিট পেশ করার পাশাপাশি নাড্ডা এ রাজ্যের জন্য ‘মোদী প্যাকেজ’ তুলে ধরেন শ্রোতাদের সামনে। বলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ স্লোগান থেকে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বিচ্যুত হয় না। বাংলার প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দরদ, ভালবাসার অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
নাড্ডা একে একে বলেন, এবারের বাজেটে কলকাতা মেট্রোর জন্য হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদীজির সরকার। চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জন্য বরাদ্দ হয়েছে যথাক্রমে ১৫ কোটি ও ৬৩ কোটি টাকা। আইএসআই পেয়েছে ২৩ কোটি টাকা।
নাড্ডা বলেন, মোদীজির বাংলার প্রতি দরদ, ভালবাসার আরও এক দৃষ্টান্ত এ রাজ্যের মানুষ গত ৩০ ডিসেম্বর প্রত্যক্ষ করেছে। মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সেরে প্রধানমন্ত্রী বাংলার রেলপ্রকল্প উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
বিজেপি সভাপতি এরপর পশ্চিমঙ্গের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের কর্মসূচি ও বরাদ্দের অঙ্ক তুলে ধরেন। বলেন, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ ও পশ্চিম মেদিনীপুরকে জাতীয় সড়কে যুক্ত করতে নিতিন গডকড়ির মন্ত্রক সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা করেছে। জলজীবন মিশন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ইত্যাদির কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার জন্য বরাদ্দের উল্লেখ করে নাড্ডা নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ নাড্ডা বলেন, ‘দিদির প্রশাসন কোনও কাজ করে না। তারা শুধু নাম চুরি করে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে বাংলা আবাস যোজনা বলে চালাচ্ছে।’
আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়েও সরব হন নাড্ডা। বলেন, ‘তৃণমূলের সেই নেতারাও গরিবের বাড়ি দখল করেছে যারা দুটো পাকা বাড়ির মালিক।’ স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণের কথাও উল্লেখ করেন বিজেপি সভাপতি।
বাংলার পাশাপাশি গোটা দেশের জন্য মোদী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্পের উল্লেখ করে নাড্ডা বলেন, ‘গাও, গরিব, বঞ্চিত, পীড়িত, আদিবাসী, যুবা, কিষাণের জন্য মোদী সরকার কাজ করছে।’ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার উল্লেখ করে বিজেপি সভাপতি অভিযোগ করেন, ‘বাংলায় তৃণমূল গরিবের রেশন চুরি করেছে।’
রবিবার পূর্বস্থলীর জনসভায় বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ভাষণে স্পষ্ট অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বাংলা শেখার আয়োজন নিয়ে রাজ্য বিজেপির নেতারা অনেকেই বিরক্ত, কটাক্ষও করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু বাংলায় ক্ষমতায় আসতে হলে রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতির কদর করা দরকার, আগের বিধানসভা ভোটেই সে শিক্ষা হয়েছিল বিজেপির।
পূর্বস্থলীর জনসভায় নাড্ডা ২৬ মিনিটের ভাষণের শেষ আট মিনিট বাংলায় বলেন। অবশ্যই তা রাজ্য নেতৃত্বের তৈরি করে দেওয়া লিখিত ভাষণ। তবে রাজনীতির ময়দানে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরির লক্ষ্যে বাংলায় ভাষণ পর্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলায় ভাষণ শুরুর আগে জেপি নাড্ডা বলেন, ‘আমি বাংলা মে একটু একটু চেষ্টা করবেন। বাংলামে কুছ বলুঙ্গা।’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বাংলা ভাষণে তীব্র ব্যক্তিগত আক্রমণ শানান বিজেপি সভাপতি। নাড্ডা বলেন, ‘সরকারি কোষাগার ফাঁকা। খুঁজে দেখো টালির চালে জনতার টাকা।’ আরও বলেন, ‘চাকরি বিক্রি কোটি কোটি, লুট করেছে হাওয়াই চটি।’
মমতার উদ্দেশ্যে বিজেপি সভাপতির সংযোজন, ‘ওরে দিদি আপনার নাম তো মমতা, আপনি কবে থেকে নির্মমতা হয়ে গেলেন!’ এরপরই ছড়া কাটার মতো করে বলে চলেন, ‘শেষ হবে শেষ হবে, কাটমানির খেলা শেষ হবে, শেষ হবে শেষ হবে সিন্ডিকেটের খেলা শেষ হবে, শেষ হবে শেষ হবে, তোলাবাজির খেলা শেষ হবে।’ কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘দিদির স্লোগান এগিয়ে বাংলা। ঠিকই বলেন, দুর্নীতিতে এগিয়ে বাংলা। তৃণমূলের অত্যাচারে এগিয়ে বাংলা’, ইত্যাদি। বলেন, ‘গেরুয়া ঝড় আসছে তেড়ে, ভাগ তৃণমূল বাংলা ছেড়ে’, ‘মা-মাটি-মানুষের সরকার, আর নেই দরকার।’
এদিন পূর্বস্থলীর একটি কালী মন্দিরেও পুজো দেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি। পুজো দিয়ে বেরিয়ে তৃণমূলকে রক্তবীজ বলে কটাক্ষ করে নাড্ডা বলেন, “বাংলায় গণতন্ত্র নয়, হিংসার রাজত্ব চলছে। সাধারণ মানুষ এর থেকে মুক্তি চান। মা কালীর কাছে আশীর্বাদ চেয়েছি, আমরা যাতে মানুষকে সোনার বাংলা উপহার দিতে পারি।”
নাড্ডার মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অবশ্য মন্তব্য, “নিজের রাজ্য হিমাচল প্রদেশে জিততে পারেন না। নিজের সরকার ধরে রাখতে পারে না৷ জ্ঞান দিচ্ছেন তারপর আবার। আইন শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলে সস্তার রাজনীতি করছেন৷ পঞ্চায়েতে প্রার্থী পাবে না বলে সন্ত্রাসের গল্প শোনাচ্ছে।”
আগামী বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শনিবারই সে রাজ্যে জোড়া সভা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। আজ, রবিবার ত্রিপুরায় একাধিক প্রচারমূলক কর্মসূচি রয়েছে অমিত শাহের। আগামিকাল সোমবার ফের আগরতলায় প্রচারে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ভুলে যায়নি বিজেপি। উত্তরপূর্বের নির্বাচনের মধ্যেও বঙ্গ সফরে এসেছেন বিজেপির সর্ভভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরেও সভা করেন তিনি। এছাড়াও, রাজ্য তথা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে সংগঠনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সভা করার কথা তাঁর।