কলকাতা: দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য বিদেশ থেকেও আসতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে আউট্রাম ঘাট থেকে ইতিমধ্যেই এই মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ-বিদেশের পূণ্যার্থীদের কাছে সমস্যা একটাই— ভাষা। সেই সমস্যা দূর করতে এ বার যথেষ্ট সংখ্যক দোভাষীর ব্যবস্থা করছে রাজ্য। মেলার সূচনা করে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। দেখুন ভিডিও
এদের নাম রাখা হচ্ছে ‘সাগর-বন্ধু’ বা ‘সাগর দোস্ত’। মমতা জানান, সম্ভব হলে পূণ্যার্থীদের বাসগুলিতে এক জন করে সাগর-বন্ধু রাখা হবে। দোভাষীর কাজ করার পাশাপাশি এরা পূণ্যার্থীদের অন্যান্য সমস্যাতেও সাহায্য করবেন। এর বাইরে এ বার মেলা জুড়ে থাকছে অসংখ্য ‘মে আই হেল্প ইউ’ কিয়স্ক। সেখান থেকেও মিলবে সাহায্য।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, গত বছর গঙ্গাসাগরে এসেছিলেন ১ কোটির বেশি পূণ্যার্থী। এ বার সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন পূণ্য সঞ্চয়ের আশায়। এদের মধ্যে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ হিন্দিভাষী। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি থেকেও আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। এঁরা বাংলা বোঝেন না বলতেও পারেন না।
মূলত তাঁদের সমস্যা দূর করতেই রাখা হচ্ছে সাগর-বন্ধু। দোভাষী আগেও ছিল। কিন্তু তার সংখ্যা হাতে গোনা। কেবলমাত্র একটি বা দু’টি জায়গায় তারা থাকতেন। এ বার সেই সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হচ্ছে। এ দিন গঙ্গাসাগর তীর্থ যাত্রী সংযুক্ত সমিতির সভাপতি তারকনাথ ত্রিবেদী জানান, ‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম, যাতে মে আই হেল্প ইউ বুথ তৈরি করা যায়। এ বার পুরো পথ এবং মেলা প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী এমন অসংখ্য বুথ তৈরি করে দিয়েছেন।’
এ বার ১৪ তারিখ ভোর থেকে ১৫ তারিখ ভোর স্নানের পবিত্র মুহূর্ত। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে ২৩০০ সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ এবং ২১ জেটি তৈরি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তিনটি হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছে। থাকছে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। বিপুল জনসমাগমের কারণে অনেকেই মেলায় এসে প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অনেকে হারিয়েও যান। মুশকিল আসানের জন্য অন্যান্য বারের মতো এ বারও থাকছে জিপিএস, স্যাটেলাইট সিস্টেম। কয়েক হাজার পুলিশ কর্মীর পাশাপাশি মেলায় থাকবেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে বাড়তি নজরদারিও।
মমতার কথায়, ‘২০১১ সালে গিয়ে দেখেছিলাম, ওখানে কিচ্ছু ছিল না। এখন সেখানে সব রকম পরিকাঠামো রয়েছে। এখন যাতায়াতেও কোনও সমস্যা নেই।’ আগে মেলায় যাত্রীদের কাছ থেকে তীর্থ কর নেওয়া হতো। এখন সেই করও তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনা এড়াতে মেলা প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালিয়ে রান্নাবান্না না করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি পূণ্যার্থীদের খাবার দিতে আসে, তাদের উদ্দেশে রান্না করা খাবার আনার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গঙ্গা সাগরে অতিরিক্ত বাস,লঞ্চ দিচ্ছে পরিবহন দফতর। যাত্রীদের সুবিধায় একাধিক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। গঙ্গা সাগর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাগরে পূন্য স্নান হবে ১৪ জানুয়ারি। গঙ্গা সাগরে ভীর জমাবে সাধু সন্ন্যাসী থেকে সাধারণ পূন্যার্থীদের। তাঁদের জন্য এবার বাস বাড়ানো হয়েছে। বাড়ছে লঞ্চ পরিষেবা। দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদে যাত্রী পারাপারের জন্য ভেসেলে লাগানো হবে ফগ লাইট।
পরিবহন মন্ত্রীর কথায়, এবার বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২২৫০ টি করে বাস চলবে। ৩২ টি ভেসেল ১০০ টি লঞ্চ দেওয়া হয়েছে। গত বছর তিনটে বার্জ ছিল এবার সেটা দশটি করা হয়েছে। যাতে করে দুই আড়াই হাজার মানুষ পার হয়ে যাবে। ২১ টি জেটি করা হয়েছে। যেখান দিয়ে পারাপার করতে পারবে মানুষ। কচুবেড়িয়া থেকে মেলা প্রাঙ্গন পর্যন্ত আড়াইশো বাসকে পারমিশান দেওয়া হয়েছে। তারা ওই রুটে যাত্রী পরিবহন করবে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কেউ অসুস্থ হলে তাদের রেসকিউ করে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত বছর ১৩ জনকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়েছিল।যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে এবার আরও অনেক স্বাচ্ছন্দ পাবেন যাত্রীরা। বাবু ঘাট থেকে কচুবেড়িয়া সেখান থেকে মেলা এক টিকিটেই যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। কুয়াশার সময় ভেসেল পারাপার করতে খুব সমস্যা হয়। এবার ফগ লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে ঘন কুয়াশাতে ও জলপথ পরিবহন চালু থাকে। মন্ত্রী আরো জানান , ইন্টারনেটেরও একটা সমস্যা থাকে। সরকার কথা বলছে বিভিন্ন টেলিকম নেটওয়ার্কের সাথে যাতে ইন্টারনেটটা ঠিক মতো কাজ করে।