দেশের সময়: লোকসভা ভোটের ঠিক আগের বাজেট হলেও এতে নেই ” পপুলিসম ” বা জনপ্রিয়তার তথাকথিত প্রলেপ। মূলত বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কিছুটা হলেও দীর্ঘ দৌড়ে আর্থিক নীতিসমূহ সংহত করে উন্নয়নের হার বৃদ্ধিই অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সিতারামন তার বাজেটে পাখির চোখ করেছেন। এক অর্থে মোদী সরকারেরই নির্দেশিত দিশা অর্থাৎ ” বিকশিত ভারত” গড়ার লক্ষ্যে বাজেটের ভিত গড়েছেন নির্মলা। সেই হিসাবে উন্নয়নের তেজী হারের সুপবনে ভরসা করে পূর্ব
ঘোষিত পাঁচ ট্রিলিয়ন পুঁজি সম্বলিত অর্থ ব্যবস্থায় ভারতকে সমৃদ্ধ করাটাই বাজেটের অন্যতম অভিমুখ।
তবে বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ ভিন্ন মতও পোষণ করছেন। যেমন, অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ” সেভাবে ভোটের আগে বড় কিছু ঘোষণার তালিকা পেশ করে “পপুলিসম” – র ব্যাপারটা বাজেটে নেই। কিন্তু নথিটা পুরোটা নজর করে পড়লে মনে হতেই পারে ভোটের আগে এটা একটা পলিটিক্যাল মেনিফেষ্টো। রাম মন্দিরের কথাও বলা হয়েছে, এর সাথে ‘ ভাই ভাতিজার ‘ দুর্নীতির প্রসঙ্গ এসেছে, এটা কি বাজেট না কোনো রাজনৈতিক দলের ঘোষণা পত্র! ” তবে কর্পোরেট মহল অবশ্য আশাবাদী যে সব মিলিয়ে বাজেটে কর্ম সংস্থানের সুযোগ আরো বাড়াবে। কারণ এতে পরিকাঠামোর উন্নয়নের উপর সমধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর সাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ কাজের বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুরোদমে অনুঘটকের কাজ করবে। নতুন দু কোটি বাড়ি বানানোর যে সংকল্প বাজেটে ঘোষনা করেছেন অর্থ মন্ত্রী তাও প্রকারান্তরে কাজের বাজার চাঙ্গা করবে। কর্পোরেট মহলের একাংশের বিশ্বাস, বাজেটে কোনো “চমক প্রদ” ঘোষনা করেন নি নির্মলা। আর্থিক নীতির চোখ ধাঁধানো পরিবর্তনের পথেও হাঁটেন নি তিনি। অর্থনীতিতে নতুন পথের পথিক হওয়ার চেয়ে পুরনো বা পরিচিত পথে হাটাই তিনি শ্রেয় মনে করেছেন। এক অর্থে, এই রক্ষণ শীলতা আখেরে ভালই ফল দিতে পারে। আর ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেটে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করছেন না অনেকে। বরং, লোকসভা ভোটের পর চূড়ান্ত বাজেট পেশ হলে ছবিটা পরিষ্কার হবেই।
যদিও, অভিরুপের আশঙ্কা, সরকারের কোষাগারে যে টাকাটা আসছে তার ২৮ শতাংশই ঋণ। ফের বাজার থেকে ধার নিয়েই তা শোধ করছে সরকার। তার কটাক্ষ, ” এ সেই শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের মত। লেখক হর্ষবর্ধনের কাছে ধার নিয়ে তা শোধ করতে গোবর্ধনের কাছে হাত পাততেন। এর পর তা মিটিয়ে ফের হর্ষবর্ধনের কাছে ধার নিয়ে গোবর্ধনের ধার শোধ। ভারত সরকার তো সেই পথেই হাঁটছে। ঘুরে ফিরে হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন! ”