দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-কে দুষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রের তরফে জলশক্তি মন্ত্রক দিয়েছে পাল্টা চিঠি।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার, আবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন ,রাজ্যকে না জানিয়েই জল ছেড়েছিল ডিভিসি। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, বাংলাকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়। এবার দ্বিতীয় চিঠিতে উল্লেখ করা হল, ‘মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টার নোটিসে’ জল ছাড়া হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছে, তা স্পষ্ট।
এবার পাল্টা চিঠিতে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, আপনাদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারছি না। কারণ, জল ছাড়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা তো দূরে থাক, ডিভিসি এক তরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।
কেন একথা বলছেন, তার বিস্তারিত ব্যাখাও দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিভিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেকথা জানিয়ে মোদীর উদ্দেশে লিখেছেন, “জল না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ শোনা হয়নি।”
ঘড়ির কাঁটার ঘণ্টা মিনিট মিলিয়ে ঠিক কোন কোন সময় ডিভিসি কত জল ছেড়েছে তার বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরেছেন মমতা।
মোদীকে পাঠানো চিঠিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে ২.৩ লাখ কিউসেক জল ছাড়ে ডিভিসি। ফের ৫.০২ মিনিটে আরও ২ লাখ কিউসেক, সন্ধে ৬টায় ২ লাখ কিউসেক এবং রাত ১১টা ২০ মিনিটে আরও ২.১ লাখ কিউসেক জল ছাড়ে।
বস্তুত, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পর জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে রাজ্যের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরপরই কেন্দ্রকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে বাংলাকে ইচ্ছে করে ডোবানোর চেষ্টা করছে ডিভিসি আর এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও কোনও পদক্ষেপ করছে না।
পাল্টা বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক জানিয়েছিল, ডিভিসি জল ছাড়ার আগে সমস্ত নিয়ম মেনে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকারকে।
এবার জবাবী চিঠিতে মোদীর উদ্দেশে মমতা লিখেছেন, ‘‘জল শক্তি মন্ত্রকের দাবি ঠিক নয়। কারণ, জল ছাড়ার বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয় না। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার নোটিসে জল ছেড়েছে তার ফলেই বন্যা পরিস্থিতি।”
জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছিল দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। সেই দাবিকে খণ্ডন করে দিয়েছেন মমতা। একই সঙ্গে ডিভিসির নিয়ন্ত্রণ কমিটি থেকে বাংলার প্রতিনিধি তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারেজগুলির সংস্কার নিয়েও।
বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য আগেই ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীদিনে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এবার বাংলার বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকে দায়ী করে দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন বাংলার প্রতিনিধি।
বাংলার তরফে ডিভিসির কমিটিতে ছিলেন আইএএস শান্তনু বসু। ডিভিসির চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধের জল ছেড়ে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি করা হয়েছে, তারই প্রতিবাদে তাঁর এই পদত্যাগ।
বস্তুত, ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে এদিনই মোদীকে কড়া চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। মোদীর উদ্দেশে মমতা এই হুঁশিয়ারিও দেন যে, কমিটি থেকে বাংলার প্রতিনিধি তুলে নেবেন। প্রশ্ন তোলেন, ‘নাম কা ওয়াস্তে কমিটিতে বাংলার প্রতিনিধিকে রাখা হবে অথচ সব সিদ্ধান্ত, ডিভিসি একা নেবে। তাহলে কমিটিতে বাংলার প্রতিনিধি রেখে লাভ কি?’ তারপরই আইএএস শান্তনু বসুর পদত্যাগ যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ডিভিসি নিয়ন্ত্রিত বাঁধ থেকে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার ফলে রাজ্যে বড় বিপর্যয় ঘটেছে। যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। দক্ষিণবঙ্গের বানভাসী পরিস্থিতি নিয়ে ডিভিসিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আগেভাগেই চিঠি লিখে নালিশ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়ার পর রবিবার কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, আপনাদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারছি না। কারণ, জল ছাড়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা তো দূর, ডিভিসি এক তরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এটা ‘ম্যান মেড বন্যা’। যা ২০০৯ সালের পর থেকে নিম্ন দামোদরে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং বাংলার প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নালিশ জানিয়েছেন তাতে তাঁর বক্তব্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিভিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তখন জল না ছাড়ার শত অনুরোধ জানিয়েও লাভ হয়নি। এমনকী রাজ্য সরকার আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার অনুমোদনই করেনি বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে জানান, জল শক্তি মন্ত্রকের চিঠির প্রেক্ষিতে আমি এই চিঠি লিখছি। আপনার মন্ত্রী দাবি করেছেন, ডিভিসির নিয়ন্ত্রণ কমিটির মাধ্যমে মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ পরিচালিত হয়, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। আমি সেটা মানি না।’
মমতার আরও অভিযোগ, ‘কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং জল শক্তি মন্ত্রকই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। রাজ্যকে না জানিয়েই অনেক সময় জল ছাড়া হয়। রাজ্যের কোনোরকম অনুরোধও শোনা হয় না। তাই বাংলাকে অপমান এবং অসহযোগিতার প্রতিবাদে ডিভিসি থেকে দ্রুত প্রতিনিধি প্রত্যাহার করছে রাজ্য সরকার।’ এখন দেখার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জবাবে কী আসে।