সংগৃহীত প্রতিবেদন : ভারতের বিশাল ভূখণ্ডে নানা জাতিকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে এই জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ব্লকে ব্লকে ইতিমধ্যেই একাধিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে পালন হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক বাড়িতে জাতীয় পতাকা তোলার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেই ঘোষণা করেছেন এই বিশেষ অনুষ্ঠানের কথা। যে অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হর ঘর তিরঙ্গা অভিযান’।
যদিও নিজের ইচ্ছে মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায় না। জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনে মানতে হয় কিছু বিধি। ২০২২-এ কেন্দ্রীয় সরকার সেই বিধিতে বেশ কিছু বদল এনেছে। জানুন —
১> .ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া ২০২২ এর দ্বিতীয় ভাগের ২.২ অনুচ্ছেদের ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতীয় পতাকা যে কোনও ভারতীয় নাগরিকের বাড়িতে যে কোনও সময়ই তোলা যেতে পারে। রাতের বেলাতেও। তবে এই পতাকার আকৃতি বড় হতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে ছেঁড়া পতাকা উত্তোলন করা না হয়।
২ > পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তই জাতীয় পতাকা তোলার অনুমতি ছিল। আগে পলিস্টারের তৈরি পতাকা বা মেশিনে তৈরি হয়েছে এমন পতাকা উত্তোলনের অনুমতি ছিল না। এখন হাতে বা মেশিনে তৈরি সব ধরনের পতাকাই তোলা যাবে।
জাতীয় পতাকা তোলার সময় মানতেই হবে যে নিয়মগুলি রইল তালিকা :-
ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে তৈরি বা হাতে বোনা খাদি সিল্ক/উল/তুলো দিয়ে তৈরি হওয়া উচিত।
হাতে কাটা, হাতে বোনা, মেশিনে তৈরি করা তুলো, সিল্ক, বা খাদির পতাকা উত্তোলন করা যাবে।
কোনও অবস্থাতেই জাতীয় পতাকাকে মাটিতে রাখা যাবে না।
পতাকায় কোনও শব্দ বা অক্ষর লিখতে পারবেন না।
জাতীয় পতাকার রঙের পোশাক কখনই পরা উচিত নয়।
কোনও বাণিজ্যিক কাজে যাতে জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত না হয়।
ছিঁড়ে যাওয়া বা খারাপ হয়ে যাওয়া পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
জাতীয় পতাকার উপরে কোনও ধরনের সুতোর কাজ বা লেখালিখি করা যায় না। রুমাল, বালিশের ওপর ব্যবহার করা যায় না তেরঙা পতাকা।
জাতীয় পতাকাকে টেবল ঢাকার কাপড় হিসাবে ব্যবহার করতে নেই।
কোনও স্মৃতিসৌধ বা মূর্তি ঢাকা যাবে না জাতীয় পতাকা দিয়ে।
জাতীয় পতাকা এমনভাবে তুলে রাখা উচিত যাতে ওড়ার সময় তা জমির ময়লা, বা কাদা জল স্পর্শ না করে।
কোনও কারণে জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে গেলে তা আর তোলা উচিত নয়। সেই ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে তা পুড়িয়ে ফেলা উচিত।
জাতীয় পতাকার পাশে একই উচ্চতায় কোনও পতাকা রাখতে নেই।
জাতীয় পতাকার সঙ্গে যদি অন্য কোনও পতাকাও থাকে, সেক্ষেত্রে যাতে অবশ্যই জাতীয় পতাকার স্থান থাকে সব সময় শীর্ষে।
যে দণ্ডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে সেই দণ্ডে যেন অন্য কোনও পতাকা না থাকে।
গেরুয়া রং সবসময় উপরে থাকবে।
কোনও ব্যক্তির মৃতদেহের সঙ্গে কফিনে বা চিতায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
আকারে অবশ্যই আয়তক্ষেত্রাকার হতে হবে জাতীয় পতাকাকে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ৩:২ অনুপাতে তৈরি করতে হবে পতাকা।
সরকারি কোনও নির্দেশ না থাকলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখতে নেই।
কেউ প্রকাশ্যে বা যেকোনও স্থানে জাতীয় পতাকা পোড়ালে কিংবা পদদলিত করলে তা আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
কোনও ব্যক্তি জাতীয় পতাকাকে লিখিত বা মোখিকভাবে অসম্মান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।
জাতীয় পতাকাকে অসম্মানিত করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জরিমানা ছাড়াও তিন বছরের কারাদণ্ডের আইন রয়েছে। ‘Prevention of Insults to National Honour Act, 1971’ অনুসারে ওই ব্যক্তির কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন জাতীয় পতাকা আমাদের গর্বের প্রতীক। তাই কোনওভাবেই যাতে এই পতাকার অসম্মান না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষা করা ভারতের প্রতিটা নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য।