দেশের সময়: এগরা বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ ওরফে কৃষ্ণপদর মৃত্যু হল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কটকের রুদ্র হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার এগরার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর জখম হয় ভানু। অগ্নিদগ্ধ অবস্থাতেই সে পালিয়ে যায় ওড়িশায়। এরপর ভর্তি হয় রুদ্র হাসপাতালে।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেহ আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। ভানুর পাশাপাশি তার ছেলে ও ভাইপোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় দুর্ঘটনার জেরে প্রাণ যায় আটজনের। এবার মৃত্যু হল ভানুর। ইতিমধ্যেই তার ছেলে ও ভাইপোকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এগরার ঘটনার পর সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে এগরাকাণ্ডে অবশেষে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের। কাঁথি আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা করল সিআইডি। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পরই এই মামলা দায়ের। খুন ও খুনের চেষ্টার ধারাও যুক্ত হয়েছে। ভানু-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে খাদিকুলে বাজির ব্যবসা ছিল ভানুর। এগরায় বাজির রাজাও বলত তাঁকে কেউ কেউ। তাঁর হাতের তৈরি তুবড়ি, রকেট, গাছবোমা, হাউইয়ের ব্যাপক সুখ্যাতি ছিল জেলায়।
তবে ধীরে ধীরে সেই বাজি তৈরির নেশাই হয়ে উঠল মারাত্মক। সেখান থেকেই গ্রামে অবৈধ বাজির কারখানা গড়ে ফেললেন। সরকারি প্রকল্পে কাজ না পাওয়া লোকজনকে টাকার বদলে যুক্ত করতেন নিজের ব্যবসায়। রোজ কাজ রোজ টাকা। পেটের দায়ে ভানুর কারখানায় কাজ করার লোকের অভাব হতো না।
এর আগেও তাঁর কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। মারা গিয়েছিলেন ভানুর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী। তবে মৃত্য়ু কোনওদিন থামাতে পারেনি ভানুকে। আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। সেই বাজির বিস্ফোরণে মঙ্গলবার যখন এতগুলো মানুষ মারা গেলেন, ভানুরও শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তবে গা ঢাকা দিতে ভানুর মুন্সিয়ানা নজর কেড়েছে আগেও। এবারও তার অন্যথা হয়নি। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর সারা গ্রাম যখন গেল গেল রবে আর্তনাদ করছে, তখন ভানু কিন্তু শরীরের জখম নিয়েই কায়দা করে গ্রাম থেকে পালান।
“আমি দেখেছি পালিয়ে যেতে। ওর শরীর পুড়ে গিয়েছে। মোটরবাইকে চারজন ছিল।
গ্রামবাসী বলেছিল, বাইকে করে ওড়িশা পালান ভানু। সঙ্গে স্ত্রীও ছিলেন। বাইকের মাঝখানে বসেছিলেন ভানু। পিছনে আর একজন পাখার হাওয়া করতে-করতে গ্রাম থেকে ওড়িশার দিকের রাস্তা ধরেন। এক এলাকাবাসী বলেন,
একজন মহিলাও ছিলেন।” পরে পুলিশ জানতে পারে কটকে এক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেখানেই পুলিশের নজরবন্দি ছিলেন তিনি। তবে বয়সটা বেশি হওয়ায়, ৭০ শতাংশ জখম সারিয়ে বাঁচা সহজ ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতেই মারা যান তিনি।