অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের উৎস কী? গত ১২ ডিসেম্বর শুনানিতে প্রশ্ন করেছিলেন বিচারপতি। এত নথিতে কী আছে, সম্পত্তি পরিমাণ কত? এই সব খতিয়ে দেখার কথা বলেছিলেন তিনি। বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, ২০১৪ সাল থেকে সম্পত্তি এত বাড়ল কীভাবে? ইডিকে প্রশ্ন করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। অল্প কথায় তার জবাব দিতে বলেছিল একটি মুখবন্ধ খামে। বৃহস্পতিবার সেই জবাব জমা পড়ল হাই কোর্টে।
দেশের সময়, কলকাতা: প্রায় মাস খানেক আগে ইডি-র অফিসে গিয়ে ৫ হাজার পাতার নথি জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর একদিকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা, অন্যদিকে জমা দিতে বলা হয়েছিল নথিও।
কিন্তু সেই নথিতে কী পাওয়া গেল? সম্পত্তির হিসেব-নিকেশ কি খতিয়ে দেখেছে ইডি? হাইকোর্টে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে।
এবার সেই নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিল ইডি। বৃহস্পতিবারই হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে ওই রিপোর্ট জমা পড়েছে। তবে বিচারপতি রিপোর্ট গ্রহণ করলেও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে যা বলার তিনি রিপোর্ট দেখার পরেই বলবেন।
মঙ্গলবারই অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত মামলায় ইডিকে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে বলেছিলেন বিচারপতি সিংহ। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার ডিরেক্টর নথি জমা দিয়েছেন বলে জানাতেই বিচারপতি জানতে চান, ২০১৪ সালের পর থেকে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অভিষেকের। তাঁর আয়ের উৎস কী?
জবাবে ইডি আদালতকে বলেছিল, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির সিইও ৫,৫০০ পাতার নথি জমা দিয়েছেন। তারা তা খতিয়ে দেখছে। রুজিরাও এসেছিলেন। সেকশন ৫০ অনুযায়ী ইডি তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে। ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘যে নথি এসেছে ,তা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, কোনও কিছুই গোপন না করে তদন্তের আরও অগ্রগতি হবে।’’
এ কথা শুনেই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘যে পরিমাণ নথি জমা পড়েছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির। ওই নথি অনুযায়ী যে সম্পত্তি কেনা বা লেনদেন হয়েছে, তা কি খুঁজে দেখেছেন আপনারা? আদালত যা জানতে চাইছে, তা কি খুঁজে দেখেছেন? আয়ের উৎস খুঁজে দেখেছেন? আইন আপনাদের ক্ষমতা দিয়েছে। এটাই তো আপনাদের তদন্তের মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।’’
প্রসঙ্গত, অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য অনেক আগেই ইডিকে বিশদে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ছ’জন ডিরেক্টরের নাম, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ, সংস্থার লেনদেন, তার মূল্য, এই সংস্থায় কারা ক্লায়েন্ট, তাঁদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সংস্থার রোজের কাজ কে দেখতেন, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, তাঁর মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, সংস্থার সব কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কারা, কবে সংস্থায় যোগ দিয়েছেন, কেন সংস্থার ঠিকানা পরিবর্তন এবং কার কাছে তদন্ত নিয়ে ইডি সাহায্য চায়, তা জানাতে বলা হয়েছিল হাই কোর্টে।
এ বিষয়ে অভিষকের কাছে নথি চাওয়া হলে কিছু দিন আগেই ইডিকে তাঁর সংস্থা সংক্রান্ত তথ্য জমা দিয়ে এসেছিলেন অভিষেক। ৫৫০০ পাতার নথি ছিল তাতে। অবশেষে বৃহস্পতিবার ইডি সেই নথি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দিল আদালতে।
বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্ট জামা পড়ার পর বিচারপতি সিংহ জানান, আদালত ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেবে। ২০ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ বেঞ্চ। সেখানে চলছে তদন্ত।