East Bengal Day: ইস্টবেঙ্গল দিবসে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইনভেস্টরই!’ভারত গৌরব’ সম্মান পেলেন লিয়েন্ডার, ঝুলন

0
591

দেশের সময় , কলকাতা : মঙ্গলবার যদি সিনেমা রিলিজ করে, সোমবার তার ট্রেলার দেখে নিল লাল-হলুদ সমর্থকরা। ইস্টবেঙ্গল দিবসে মঞ্চ আলো করে থাকলেন বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তারা। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের মঞ্চে ইমামি-ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের হাম সাথ সাথ হ্যায় বার্তা। অনুষ্ঠান দেখতে আসা সমর্থকদের চিৎকারে ফেটে পড়ছে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে জার্সি আমার মা, আর কিছুই জানি না।’ অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া ইস্টবেঙ্গলের থিম সং। সঙ্গে গাইছেন উপস্থিত লাল হলুদ সমর্থকরা। ইস্টবেঙ্গল দিবসের এই আবহে ইমামির সঙ্গে পথ চলা শুরু হয়ে গেল।

সোমবার বিকেলেই আক্ষরিক অর্থে সূচনা হল ইমামি ইস্টবেঙ্গলের। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চুক্তিতে সই হবে। কিন্তু তার আগের দিনই লাল হলুদ কর্তাদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিলেন ইমামি গ্রুপের কর্তা আদিত্য আগরওয়াল এবং মণীশ গোয়েঙ্কা। লাল হলুদ উত্তরীয় এবং রসগোল্লার হাড়ি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় লগ্নিকারী সংস্থার দুই কর্তাকে।

লাল হলুদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রফি জেতার অঙ্গীকার নেন ইমামির ডিরেক্টর। আদিত্য আগরওয়াল বলেন, ‘আমরা আজ লাল হলুদ উত্তরীয় পড়ে  স্টেজে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের জন্য এর থেকে গর্বের আর কিছু নেই। অনেক ভয়, শঙ্কা থেকে বেরিয়ে এসে একটা জায়গায় পৌঁছেছি যেখানে আমরা কাল চুক্তিতে সই করতে পারব। আমরা ভালো টিম করব। আমাদের পাশে থাকুন, সাপোর্ট করুন। আবার আমরা জিতব। আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে ট্রফি নিয়ে।’

এই অনুষ্ঠানে এসে বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, ভাল দল গড়েই মাঠে নামবে ইস্টবেঙ্গল। ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের নিয়ে ডুরান্ডে খেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এদিন যেমন ভিপি সুহের সই করলেন। ব্রাইট এনোবাখারেকে আনার চেষ্টা চলছে।

কোচ নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছে। লিগের জন্য বিনু জর্জ, এবং আইএসএলের জন্য স্টিফেন কনস্টানটাইনকে কোচ করা হয়েছে।ক্লাবের ১০৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এটাই সেরা পাওনা লাল হলুদ সমর্থকদের।ইস্টবেঙ্গল দিবসের অনুষ্ঠানে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইমামি। সমর্রকদের মন জয় করে নিলেন ইনভেস্টর কর্তারা।সমর্থকদের আবেগের বিস্ফোরণ দেখতে পেলেন ইমামির কর্তারা।

সোমবার সন্ধেয় তারকার সমাহার। উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং স্পোর্টস সেক্রেটারি সুব্রত বিশ্বাস। হাজির ছিলেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান এবং লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ, ইস্টবেঙ্গলের কোচ বিনো জর্জ এবং ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজা সুরেশ চৌধুরীর নাতি অমরেশ চৌধুরী। বিদেশে থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি ক্লাবের সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত। তাঁর জায়গায় ছিলেন সহ সভাপতি অজয় কৃষ্ণ চ্যাটার্জি।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলে খেলা একাধিক প্রাক্তন তারকা। এই তালিকায় রয়েছেন শ্যাম থাপা, ভাস্কর গাঙ্গুলি, প্রশান্ত ব্যানার্জি, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, সুমিত মুখার্জি, কৃষ্ণেন্দু রায়, সৈয়দ নবি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি এবং সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া।

মজার স্মৃতি ভাগ করে নেন কলকাতার মেয়র। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘মনে হচ্ছে বাড়িতে এসেছি।

ইস্টবেঙ্গল একটা পরিবারের মতো। আমি ছোট থেকেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। একবার ড্রেসিংরুমে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলাম। একটা ইস্টবেঙ্গল জার্সি চুরি করেছিলাম। পরবর্তীকালে পাড়ায় যখন খেলেছি, সেই জার্সি পরেই খেলেছি।’ লগ্নিকারী সংস্থার উদ্দেশে বার্তাও দেন তিনি। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত শুধু অর্থনৈতিক কারণে নয়, আবেগের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

আজকাল ফুটবল চালাতে হলে স্পনসর দরকার। কর্পোরেট ছাড়া চলবে না। তবে সেই স্পনসর আনতে গেলে সমর্থক দরকার। তবেই ব্র্যান্ডের টিআরপি বাড়বে। ইস্টবেঙ্গলের আবেগের সঙ্গে জুড়ে গেলে আর ছেড়ে যাওয়া যাবে না।’

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এদিন সকালে ক্লাব তাঁবুতে ইস্টবেঙ্গল স্কুল অফ এক্সসিলেন্সের খুদেদের নিয়ে পতাকা উত্তোলন করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলাররা এবং ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা। হাজির ছিল বহু লাল হলুদ সমর্থক।

ক্লাব তাঁবুর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন ক্রীড়ামন্ত্রী। ছিলেন প্রাক্তনরা এবং ক্লাবের কর্মসমিতির সদস্যরা। ক্লাবের প্রতীক দেওয়া কেক কাটেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

এদিন বিকেলে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান। এবছর ‘ভারত গৌরব’ সম্মানে ভূষিত করা হল টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামীকে। ঝুলনের হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন সম্বরণ ব্যানার্জি। এদিকে লিয়ের হাতে এই বিশেষ সম্মান তুলে দেন খোদ ঝুলন।

লিয়েন্ডার বলেন, ‘কলকাতায় ফিরে দারুণ লাগছে। বিশেষ করে ময়দানে। আমি বাংলার মাটির ছেলে। আমি এখানেই বড় হয়েছি। বাবা মাঠে হকি খেলত। আমি সাইড লাইনে বসে খেলা দেখতাম। বরাবরই আমি বাবার মতো হতে চেয়েছি। বাবাকে গর্বিত করতে চেয়েছি। আজ ৭৭ বছর বয়সেও এই বিশেষ দিনে আমার সঙ্গে বাবা এসেছে। তাতে আমি ভীষণ খুশি। তবে ভূমিকা বদলে গিয়েছে। আগে বাবা খেলত আমি দেখতাম, আর এখন উল্টো। আমি কলকাতার স্পোর্টস সংস্কৃতির প্রোডাক্ট। অনেক স্মৃতি আছে। তাই শহরে ফিরে ইস্টবেঙ্গলের থেকে এই অ্যাওয়ার্ড নেওয়া একটা আলাদা অনুভূতি। কলকাতার স্পোর্টস ময়দান কেন্দ্রিক। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, ইডেন এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম। তিন দশক ধরে অনেক পরিশ্রম করেছি নিজের দেশ এবং শহরকে গর্বিত করতে। তাই এই দিনটা স্পেশাল।’

এছাড়াও ছিল একাধিক পুরস্কার। ড. রমেশ চন্দ্র (নাসা) সেন মেমোরিয়াল ‘জীবনকৃতি সম্মান’ পান ক্লাবের প্রাক্তন অধিনায়ক গৌতম সরকার।

একসময়ের পার্টনার সমরেশ চৌধুরী তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ব্যোমকেশ বোস মেমোরিয়াল ‘জীবনকৃতি সম্মান’ দেওয়া হয় ক্লাবের প্রাক্তন অধিনায়ক স্বপন সেনগুপ্তকে। তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন তাঁরই সতীর্থ শ্যাম থাপা। এই স্বীকৃতি পেয়ে স্বপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি ইস্টবেঙ্গল জীবনকৃতি সম্মান দেবে। জ্যোতিষ গুহর হাত ধরে ইস্টবেঙ্গল এসেছিলাম। তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে খেলব কোনওদিন ভাবতে পারিনি।  ইস্টবেঙ্গল একটা পরিবার। আবেগের নাম।’

অজয় বোস মেমোরিয়াল সেরা স্পোর্টস সাংবাদিকের সম্মান পান বিশিষ্ট সাংবাদিক লোকেন্দ্র প্রতাপ শাহি। পুষ্পেন সরকার মেমোরিয়াল চিত্র সাংবাদিক পুরস্কারের প্রাপক চিত্র সাংবাদিক সুবীর মজুমদার।

পঙ্কজ গুপ্ত মেমোরিয়াল এবং প্রতুল চক্রবর্তী মেমোরিয়াল রেফারির সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয় সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং তপন হালদারকে। দুস্থদের চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা ‘লিভার ফাউন্ডেশনের’ ড. অভিজিৎ চৌধুরী এবং ড. পার্থ সারথি গাঙ্গুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ইস্টবেঙ্গলের এই বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই পড়শী ক্লাব মোহনবাগান, মহমেডানের কর্তারা।

ছবিগুলি তুলেছেন ধ্রুব হালদার ৷
Previous articleBiswajeet Das (Tmc) বাগদা-র বিজেপি বিধায়ক হলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি ! এবার কি স্বমহিমায় ফিরবে শঙ্কর আঢ্য? জল্পনা তুঙ্গে
Next articleGobardanga: গোবরডাঙা রবীন্দ্রনাট্য সংস্থার উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here