সুপ্রকাশ চক্রবর্তী : ভীন রাজ্যে সাবেকিয়ানার জন্যে বরাবরই নজর কাড়ে বেঙ্গালুরুর পাল বাড়ির পুজো।
বেঙ্গালুরুর হিন্দুস্থান এরোনটিক এলাকায় এবারেও পাল বাড়ির দুর্গা পুজোয় থাকছে সাবেকিয়ানা থেকে জাঁকজমক।
তাই পুজোর প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। চারিদিকে একটা সাজ সাজ রব। কলকাতা থেকে গেছেন ঠাকুর তৈরির মিস্ত্রী, হালুইকার, ময়রা থেকে সব কিছুই। পাল পরিবারের পেন্ট হাউসে এখন থেকেই যেমন চলছে পুজোর জোগাড় তেমনি আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে ঢাকি, পুরোহিত ও ময়রাদের। একেবারে খাঁটি বাঙালিয়ানায় সেখানেই তৈরি হবে রকমারি পুজোর উপকরণ থেকে হরেক পদের মিষ্টি।কলকাতার প্রায় সব ধরনের মিষ্টি তৈরি হবে এই পুজোয়।
কলকাতার শ্যামবাজারে বড়ো হয়ে ওঠা রোজি ছোটো বেলা থেকেই বাবা সর্গীয় লোকনাথ ব্যানার্জীর হাত ধরে কলকাতার পুজোতে অংশ নিতেন। ছোটো বেলার সেই স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কয়েক বছর আগে বেঙ্গালুরুতে এই বাড়ির পুজোর সুচনা হয় রোজীর হাত ধরে।
রোজির শ্বশুরবাড়ি ফলতার জমিদার এই পাল পরিবারের দীর্ঘদিনের বসবাস বেলুড়ে। সেই সুত্রে রোজি বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোতেও অংশ নিতেন প্রতিবার।
কিন্তু স্বামীর কর্মসুত্রে তাঁকে চলে যেতে হয় বেঙ্গালুরু। তাই ভীন রাজ্যে এসেই এই পুজোর সুচনা করেন তিনি।
রোজি জানান,বেঙ্গালুরুতে তারা বহু বছর ধরে এই দুর্গাপুজো করছেন। মাঝে কয়েকবছর বিদেশে চলে যাওয়ায় পুজো বন্ধ ছিল।
তারপর আবার পুজো চালু হওয়ার পর নতুন করে এ বছর তাঁদের পুজো পা দিল তৃতীয় বর্ষে। বাংলা গানের মূর্ছনা, বাঙালি খাওয়াদাওয়ার রসনাতৃপ্তি আর বাঙালির বিখ্যাত নির্ভেজাল পুজোর আড্ডার মেলবন্ধনে মেতে উঠতে চলেছেন বেঙ্গালুরুর পাল পরিবারের এই দুর্গা পুজো।
তার মতে বেঙ্গালুরুতে যে শ খানেক পুজো হয় তার প্রায় সবই আবাসন বা বারোয়ারি পুজো। তাদের পুজোটাই বলতে গেলে একমাত্র বাড়ির পুজো।
রোজীর এই প্রবাসে দুর্গা পুজো করার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পাল পরিবারের গৃহকর্তা সিতাংশু সেখর পাল ও তার স্ত্রী শিপ্রা পাল। এই পাল দম্পতি জানান,কর্মসুত্রে ছেলে-বৌমা বেঙ্গালুরুতে থাকে। তারাও নিয়মিত যাতায়াত করেন বেঙ্গালুরু। তাই কলকাতার সেই সাবেকী দুর্গা পুজোর আচার উপাচার সবই সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছেন এখানে । পুজোর কটাদিন ঐতিহ্য ও আড়ম্বরে মনেই হয়না যে তারা ভীন রাজ্যে আছেন।
তাদের ফ্ল্যাটের মধ্যেই অনেক বড় একটি জায়গায় পুজোর আয়োজন করা হয়েছে৷
বেঙ্গালুরুর বিশিষ্ট পশুপ্রেমী ও সমাজসেবী রোজি জানান, মানব ধর্ম সবার আগে। সকলেই তো মায়ের সন্তান। আর এ তো মাতৃপূজা। তাই মায়ের সব সন্তানরাই যাতে এই পুজোয় অংশ নিতে পারে সেদিকে খেয়াল রেখে সবার জন্যে অবাধ প্রবেশ তাদের পাল বাড়ির পুজোতে।
এবারে তাদের পুজো লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷
ভিন রাজ্যে গিয়েও ঐতিহ্য আর নাড়ির টান ভোলেনি পাল পরিবার। তাই রোজির হাত ধরেই এবারেও বেঙ্গালুরু প্রত্যক্ষ করবে দুর্গাপুজোর বনেদিয়ানা।