Durgapuja 2022: ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে প্রতিমায় টান,
কুমোরটুলিতে মেয়ের হাতেই মায়ের চক্ষুদান

0
660

দেশের সময়: বাংলার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আর এতেই কুমোরটুলির শিল্পীদের মুখে চওড়া হাসি। করোনাকাল কাটিয়ে ফিরেছে চেনা ব্যস্ততা। টান পড়েছে প্রতিমায়। দুর্গাপুজোর এখন আর হাতেগোনা কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু এখনও অর্ডার আসার বিরাম নেই। বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন শিল্পীরা। শুধু যে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলকাতার কুমোরটুলিতে প্রতিমার বায়না আসছে তা নয়। দেশ-বিদেশ থেকেও অনেক অর্ডার এসেছে এবার। সেসব প্রতিমা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে গন্তব্যে।

এবছর একমাস আগেই পুজোর বাদ্যি বাজিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে উদ্যোক্তারাও চাইছেন, আগেভাগে প্যান্ডেলে প্রতিমা নিয়ে যেতে। ফলে তাড়াতাড়ি প্রতিমার কাজ শেষ করার জন্য চাপ আসছে শিল্পীদের উপর। স্বাভাবিকভাবেই নাওয়া-খাওয়া উধাও হয়েছে তাঁদের। কুমোরটুলিতে শিল্পীদের ঘরে ঘরে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। প্রতিমার কাজ কতদূর এগল, সাজ কেমন হচ্ছে, এসব দেখতে প্রতিদিনই ঢুঁ মারছেন উদ্যোক্তারা।

মাতৃমুখ ক্যামেরাবন্দি করতে আসছেন পর্যটকরাও। তবে খেয়ালি আবহাওয়া কিছুটা হলেও চিন্তায় রেখেছে শিল্পীদের। একেবারে শেষবেলায় উদ্যোক্তাদের জোড়াজুড়িতে কিছু প্রতিমার বায়না নিয়েছেন শিল্পীরা। সময়মতো সেগুলির কাজ শেষ করা নিয়েই তাঁদের দুশ্চিন্তা। সবমিলিয়ে দুর্গা প্রতিমার চাহিদা এবার অনেকটাই বেশি হয়েও দাম নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের মনে।

তাঁদের বক্তব্য, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার মাটি ও সাজপোশাকের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই তুলনায় দাম দিতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। করোনার কারণে গত দু’বছর দুর্গা প্রতিমার বিক্রি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বাধ্য হয়ে অনেক কম দামে প্রতিমা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন শিল্পীরা। সেই অনুপাতেই এবার দাম দিতে চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। যদিও লাভের অঙ্ক তেমন পকেটে না এলেও প্রতিমার চাহিদা বৃদ্ধিতে মোটের উপর খুশি শিল্পীরা। তাঁদের কথায়, এবার যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে কলকাতার কুমোরটুলি। দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা বেশ ভালোই টের পাচ্ছেন তাঁরা। 

শিল্পীদের কথায়, করোনার অন্ধকার দশা কাটিয়ে এবছর আশার আলো দেখেছে কুমোরটুলি। পটুয়াপাড়ায় ফিরেছে খুশির আমেজ। মৃন্ময়ী মাকে চিন্ময়ী রূপ দেওয়ার কাজে নিযুক্ত শিল্পীদের জীবনের টুকরো টুকরো কোলাজও যেন জুড়ে গিয়েছে বাংলার শারোদৎসবের সঙ্গে।

এই যেমন শিল্পী জবা পাল। বয়স ৬৬ বছর। সেই কোন ছোটবেলায়, তখনও প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হননি। এক তাল মাটি নেওয়ার জন্য বাবার কাছে বায়না জুড়তেন। মেয়ে কাদামাটি মাখবে, রাজি হতেন না বাবা। মেয়ের পাশে দাঁড়াতেন মা। আবদার পূরণ হত মেয়ের। তার পর সেই মাটি দিয়ে আপন মনে পুতুল বানাতেন জবা। পুতুল বানাতে বানাতেই একদিন বানিয়ে ফেলেন প্রতিমা। মেয়ের কাজের মধ্যে শিল্পীসত্ত্বা খুঁজে পেয়েছিলেন বাবা। তাই আর আপত্তি করেননি। বাবার কাছ থেকে যেমন প্রতিমার কাঠামো বাঁধা, মাটি লেপা শিখেছেন জবা, তেমনই দাদাদের কাছ থেকে শিখেছেন প্রতিমার চোখ আঁকা, সাজপোশাক পরানো। আর প্রতিমা গড়ার নেশায় ডুবে থাকতে থাকতেই কখন যেন পেরিয়ে গিয়েছে তাঁর বিয়ের বয়স। সংসার পাততে ভুলে গিয়েছেন ওই শিল্পী। কুমোরটুলিই তাঁর কাছে ঘর সংসার। এবছর ছোট সাইজের দুর্গা বেশি বানিয়েছেন। বললেন, বাজার খুবই ভাল। পুরনোরা তো আছেনই, অনেক নতুন উদ্যোক্তাও বায়না করতে আসছেন এখনও। হাতে সময় নেই। তার উপর আকাশের অবস্থাও ভাল নয়। ফলে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আমি তো অনেককেই ফিরিয়ে দিলাম। জবা পালের বানানো প্রতিমায় রঙের প্রলেপ পড়েছে। এবার চক্ষুদানের পালা। মেয়ের হাতে মায়ের চক্ষুদান দেখার অপেক্ষায় ফি বছরের মতো এবারও মুখিয়ে রয়েছে কুমোরটুলি। 

শিল্পী মালা পালের কথায়, দু’বছর ধরে করোনার কারণে দুর্গা প্রতিমার বাজার খুবই খারাপ ছিল। অর্ডার প্রায় তিনভাগের একভাগ হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে অনেক কম দামে প্রতিমা বিক্রি করতে হয়েছে। উত্তর কলকাতার তিনটি পুজো কমিটি প্রতিমার জন্য বায়না দিয়েছেন তাঁকে। বললেন, এবার ১৬ ফুট, ১৮ ফুটের প্রতিমার অর্ডার এসেছে বেশ ভালই। করোনার সময় সব পুজোই আকারে ছোট হয়েছে। ফলে প্রতিমার উচ্চতাও কমেছে। ১৩ ফুটের বেশি প্রতিমা অর্ডার আসেনি। তবে সাজসরঞ্জামের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে প্রতিমার দাম অন্তত ৫ হাজার টাকা বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু তা আর মিলছে কোথায়। 

শিল্পী মণ্টু পালের কথায়, এবার রথের দিন থেকেই প্রতিমার বায়না শুরু হয়েছিল। আমি ১১টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিমা আমেরিকায় গিয়েছে। একটি প্রতিমা গিয়েছে দুবাইয়ে। এছাড়াও জাপান থেকে ফাইবারের প্রতিমার বায়না এসেছে। ২০১৯ সালে মাত্র ৭টি প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। গত বছর বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল গোটা চারেক প্রতিমা। এবার দুর্গাপুজো স্বমহিমায় ফেরায় আমরা খুশি। তাঁর দাবি, কলকাতার কুমোরটুলি থেকে এবার অন্তত শ’খানেক দুর্গা বিদেশে যাচ্ছে। ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিরা এবার জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপুজো করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এটা দেখে খুবই ভাল লাগছে। 

শিল্পী চায়না পাল বললেন, সব পুজো কমিটিই এবার কিছুটা বাজেট বাড়িয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় তারা প্রতিমার দাম বেশি দিতে চাইছে না। আমরাও তো নিরুপায়। কারণ, যে খড় ১০ বাণ্ডিলের দাম ছিল ৩৫০ টাকা, সেটাই এখন সাড়ে পাঁচশো টাকা। খড় বাঁধার জন্য যে দড়ির দাম ছিল ৯০ টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১১৫ টাকায়। প্রতিমা সাজানোর জন্য যে কাগজ, আঠা ও অন্যান্য উপকরণের প্রয়োজন হয়, আগে তার দাম ছিল এক বাক্স ২০০ টাকা। এখন ৩০০ টাকা। পেরেকের দামই ধরুন না, আগে যে পেরেক ৬০ টাকা ছিল, এখন তা ১০০ টাকা। উদ্যোক্তাদের বললেই তাঁরা বলছেন, এবার পুষিয়ে নিন। আগামী বছর বাড়তি দাম দেব। 

শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল, কালীচরণ পালের স্টুডিওতে প্রতিমায় রঙের প্রলেপ পড়ে গিয়েছে। চলছে সাজানোর কাজ। সবমিলিয়ে এবার কুমোরটুলি থেকে প্রায় হাজার তিনেক প্রতিমা বিভিন্ন মণ্ডপে যাবে। এখন তারই শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। 

তবে শুধু কলকাতার কুমোরটুলি নয়, পিছিয়ে নেই জেলার পটুয়াপাড়াগুলিও। শিলিগুড়ির কুমোরটুলির শিল্পী অরূপ পাল বললেন, গত দু’বছর দুর্গার তেমন চাহিদা ছিল না। এবার সেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। কোনও শিল্পীর ঘরেই প্রতিমা পড়ে নেই। সব বায়না হয়ে গিয়েছে। এখানে যে ক’জন শিল্পী আছেন, তাঁরা প্রত্যেকে গড়ে ৩০টি করে প্রতিমা বানিয়েছেন। এখনও অনেকে এসে বলছেন, প্রতিমা বানিয়ে দিন। এবার মাঝারি সাইজের প্রতিমার চাহিদা সবথেকে বেশি। শিলিগুড়ির কুমোরটুলি থেকে মেঘালয়, অসম, সিকিম, বিহারেও প্রতিমা যাচ্ছেন। তবে প্রতিমার চাহিদা বাড়লেও যেভাবে খরচ বেড়েছে, তাতে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে পারছেন না শিল্পীরা। আগে যে মাটি ২ হাজার টাকায় মিলত, এখন তার জন্য দিতে হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। শিলিগুড়ির ঘোষপুকুর ও মালদহ থেকে প্রতিমার মাটি আসে। কিন্তু সেখান থেকে মাটি মিলছে না। 

বনগাঁর প্রতিমাশিল্পী সিন্টু ভট্টাচার্য বলেন, আমি ও বাবা মিলিয়ে এবার প্রায় ৩৮টি প্রতিমা তৈরি করছি। আমাদের প্রতিমা কলকাতায় যেমন যাচ্ছে, নদিয়া থেকেও বায়না এসেছে। এবার আমাদের তৈরি ফাইবারের প্রতিমা বিদেশেও গিয়েছে। থিমের প্রতিমার যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনই সাবেকি প্রতিমার বায়নাও এবার বেশ ভালই। দিনরাত এক করে কাজ করতে হচ্ছে। আবহাওয়া নিয়ে একটু চিন্তাই আছি। প্রতিমা রাখার জায়গা নেই। না হলে আরও বেশকিছু প্রতিমার অর্ডার ছিল। বাধ্য হয়ে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। 

দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালির আবেগ চিরন্তন। বনেদি বাড়ির পুজো দিয়েই দশভুজার আরাধনা শুরু বঙ্গদেশে। ধীরে ধীরে বারোয়ারি পুজোর প্রচলন। সেসব পুজো ঘিরে রয়েছে জানা-অজানা ইতিহাস। প্রবীণদের স্মৃতির পাতায় যা আজও অমলিন। তিলোত্তমা কলকাতার ইতিহাস যত প্রাচীন, ঠিক ততই পুরনো এই শহরের দুর্গাপুজো। কলকাতার নামকরণ নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু এই শহরের প্রথম দুর্গাপুজো নিয়ে কোনও মত পার্থক্য নেই। সাবর্ণ গোত্রীয় লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় মানসিংহের কাছ থেকে ১৬০৮ সালে আটখানি পরগনার জমিদারি পান। সঙ্গে পান রায়, চৌধুরি ও মজুমদার উপাধি। সেই থেকেই সাবর্ণ রায় চৌধুরি পরিবার নামেই পরিচিতি।

বড়িশায় এদের পুজোয় কলকাতার প্রথম পুজো। এই পরিবারের কুলতিলক রায় লক্ষ্মীকান্ত আটচালার চণ্ডীমণ্ডপ নির্মাণ করে পুজো শুরু করেন। ১৬০০ সালে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তবে সেটি প্রথম হয় হালিশহরে। লক্ষ্মীকান্ত জমিদারি পাওয়ার পর বড়িশায় এসে বসবাস শুরু করেন। সেসময় পুজোও সরে আসে। ১৬১০ সালে তিনি দুর্গার সঙ্গে যুবরাজ কার্তিককে নিয়ে আসেন। এখন সাবর্ণদের আটটি বাড়িতে পুজো হয়। প্রতিটি বাড়িতেই একচালায় প্রতিমা। দেবীর গায়ের রং স্বর্ণবর্ণা। পরিবারের প্রাচীন গয়না দিয়ে সাজানো হয় মাকে। জন্মাষ্টমীতে হয় কাঠামোপুজো। কৃষ্ণানবমী তিথিতে বোধন। 

এ তো গেল বনেদি বাড়ির প্রথম পুজো। কিন্তু প্রথম বারোয়ারি পুজো? ইতিহাস বলছে, কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজো ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট স্ট্রিটের সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার দুর্গোৎসব। বলা হয়, এদের কাছ থেকেই দশকর্ম ভাণ্ডারের ফর্দ নিয়ে বাগবাজারে ১৯১৮ সালে পুজো শুরু হয়। বাংলায় দুর্গার একচালিকে ভেঙে পাঁচচালি করেন গোপেশ্বর পাল। ১৯১৭ সালে কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোয় তিনি এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। 

সালটা ১৫৩০। দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন প্রভু নিত্যানন্দ। গঙ্গার ধারে খড়দহের কুঞ্জবাড়িতে তিনি নিজে হাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দশভুজাকে। সেই পুজো আজও চলে আসছে মেজোবাড়িতে। নিত্যানন্দের চতুর্দশ বংশধর সরেজেন্দ্র মোহন গোস্বামী বলেন, কাত্যায়নী রূপে দুর্গাকে পুজো করেছিলেন নিত্যানন্দ প্রভু। শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য বৃন্দাবনে কাত্যায়নী ব্রত করেন গোপীরা। নিত্যানন্দও নিজের বাড়িতে কাত্যায়নী রূপে দুর্গার আরাধনা করে ভক্তদের বলেছিলেন, তোমরা ঘরে ঘরে এই পুজো করো। তা হলে নিমাই অর্থাৎ চৈতন্যকে পাবে। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার সঙ্গে নিত্যানন্দের প্রতিষ্ঠিত দুর্গার কিছুটা অমিল রয়েছে। এখানে দেবীর গায়ের রং হরিদ্রাভ অতসী পুষ্পের মত। মা দুর্গার চালিতে উপরে লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকে না। পরিবর্তে বাঁ দিকে থাকে বিজয়া। ডানদিকে জয়া। এরা মা দুর্গার দুই সখী। মহিষাসুরের বর্ণ সবুজ।

সিংহের মুখ দেখতে ঘোড়ার মত। কার্তিকের বাহন ময়ূরের রং নীল। কলাবউকে পরানো হয় সাদা থান। তার উপর সদবার চিহ্ন দিতে টেনে দেওয়া হয় সিঁদুরের রেখা। কিন্তু কেন কলাবউকে সাদা থান পরানো হয়? এনিয়ে রয়েছে এক কাহিনী। সরোজেন্দ্রবাবু বললেন, নিত্যানন্দ প্রভু দুর্গা পুজোর আয়োজন করছেন শুনে ভক্তরা যে যাঁর সামর্থ্য মতো জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলেন। এক ভক্ত নিয়ে আসেন সাদা থান। ভক্তের আনা জিনিস প্রভু ফিরিয়ে দেন কীভাবে, ফলে ওই সাদা থানই পরানো হয় কলাবউকে। সদবার চিহ্ন দিতে তার উপর এঁকে দেওয়া হয় সিদুঁরের রেখা। 

ভারতবর্ষের ‘অক্সফোর্ড’ বলা হত নদিয়ার নবদ্বীপকে। এখানে দুর্গাপুজো মানে একটা আলাদা উন্মাদনা ছিল। অনেক বাড়িতেই পুজোর সময় তিনবেলা মিলিয়ে পাত পড়ত প্রায় একশো। কিন্তু কালের নিয়মে ছোট হয়েছে পরিবার। কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে থাকেন পরিবারের উত্তরসূরীরা। ফলে একসময়ের জাঁকজমক এখন আর সম্ভব হয় না। স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক পুজো। তারই মধ্যে নবদ্বীপ যোগনাথতলায় দত্তবাড়ির পুজো আজও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবছর এই পুজোর বয়স ৮০ বছর।

১৩৪৫ বঙ্গাব্দে বাসন্তী পুজোর মাধ্যমে দশভুজার আরাধনা শুরু হয়। অতুলকৃষ্ণ গোস্বামীর সহযোগিতায় শারোদৎসবের সূচনা করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ দত্ত। এই বাড়ির পুজোয় দেবীকে লুচি, মিষ্টি, ফল ভোগ দেওয়া হয়। অন্নভোগ বা বলিদানের রীতি নেই। মা দুর্গার সঙ্গে পূজিত হন নিত্যপুজ্য রাধাকৃষ্ণ ও ধ্যানলক্ষ্মী। অষ্টমীতে ২৭টি থালায় নৈবেদ্য সাজিয়ে ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। নবমীতে হয় কুমারী পুজো। এই বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব হল, দশমীর দিন মাকে বিসর্জনের আগে গঙ্গাবক্ষে নৌকায় সাতপাক ঘোরানো হয়। 

শোনা যায় দত্তবাড়ির পুজো দিয়েই বনগাঁয় দুর্গাপুজোর পথচলা শুরু। যা দত্তপাড়া দত্তবাড়ি সর্বজনীন পুজো নামে এখন পরিচিত। ১৮২০ সালে স্বরূপনারায়ণ দত্ত এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দুর্গা দু’হাতি। বাকি আটটি বিড়াল হাতি অর্থাৎ বিড়ালের মতো। কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে এই পরিবারের বেশ ভালই সখ্যতা ছিল। ইছামতী নদী দিয়ে যাতায়াতের পথে দত্তপাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন দত্তরা। আজ দত্তরা পাড়ায় নেই। কিন্তু পুজো স্বমহিমায়। পুজো সরিয়ে পাশের মাঠে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তা ভেস্তে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু সমাদ্দার।

Previous articleDesher Samay E Paper দেশের সময় ই পেপার
Next articleBlood donation camp: পুজোর মরশুমে রক্তের সংকট মেটাতে এগিয়ে এলেন বনগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সদস্যরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here