বনগাঁ : ভোরের আলো ফুটতেই ডাকহরকরা বেরিয়ে পড়তেন সাইকেলে বা কাঁধে বস্তা নিয়ে। বস্তার ভেতর থাকত প্রিয়জনদের চিঠির জীবন্ত সব অনুভূতি, আবেগ, ভালোবাসা বা আর্তনাদ। মানুষ অধীর অপেক্ষায় বসে থাকত পথ চেয়ে কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি? ডাকপিয়নের সাইকেলের টুংটাং পরিচিত শব্দে সে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতো। আজও ডাকবাক্স আছে, ডাকপিয়নও আছে, নেই শুধু ‘চিঠি’। ডাকবাক্সগুলো করুন চোখে দাঁড়িয়ে আছে কালের বিবর্তনের সাক্ষী হিসেবে।
আজ বিকালের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম রঙিন খামে যাতে লেখা আমারই নাম … শিল্পী বনশ্রী সেন গুপ্তের কন্ঠে সেই গান আজও বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় I
সেই চিঠির সময়কাল মাথায় রেখে বনগাঁ স্পোর্টিং ক্লাবের এবারের পুজোর থিম, ‘ ইতি তোমার প্রিয়তমা।’
চিঠির অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে পুজো উদ্যোক্তারা মণ্ডপ ভাবনায় চিঠি এবং ডাক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। মণ্ডপ ডাকঘরের আদলে তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে আধপোড়া, দলা পাকানো চিঠি দেখা যাচ্ছে।
দেখুন ভিডিও
চিঠিকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে সাহিত্য। আমরা এখনো শুনি ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে’র মতো আবেগ মিশ্রিত গান। চিঠির আদলে রচিত হয়েছে রবিঠাকুরের গল্প স্ত্রীর পত্র, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বাঁধনহারার মতো পত্রোপন্যাস। কবি জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত চিঠিপত্রও সাহিত্যের অন্যতম লেখনী।
পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। কল্পনার গতির থেকেও দ্রম্নত গতিতে টুং শব্দে চলে আসে মেসেজ, ফোনকল বা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে প্রিয়জনের মুখ। যোগাযোগ করতে বেগ পেতে হয় না। সরকারি-বেসরকারি কাজেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট, ইমেইল, স্মার্টফোন চিঠির প্রয়োজনীয়তা কমেছে স্বাভাবিক ভাবেই।
পুরনো আমলের ডাক বাক্সগুলো দেখলে কেমন যেন সেই পুরনো আমলের সত্যিকার প্রেমের কথা মনে পড়ে যায় । মনে পড়ে যায় সেই অসহায় প্রেমিক প্রেমিকাদের জীবন কাহীনি । মা বাবা ও সমাজের নিন্দুক শ্রেনীর মানুষদের কারনে এই প্রেমিক প্রেমিকেরা অনেক কষ্ট করে চিঠী আদান প্রদান করতো ।
সেই চিঠী আদান প্রদানের মধ্যে কেমন যেন একটা আলাদা সুখের অনুভূতি লুকায়িত থাকতো । একজন প্রেমিক বা প্রেমিকার সবচেয়ে মজার দিন,মজার মূহুর্ত ছিল ঐ দিন ঐ ক্ষন,যেদিন সে হাতে পেত তার সঙ্গীর চিঠীটা ।
আহ! সেই চিঠীর মধ্যে কি যেন একগন্ধ লুকিয়ে থাকতো। আর সেই গন্ধ হচ্ছে প্রিয়জনের ভালোবাসার গন্ধ। আজকের এই অবহেলীত ডাকবাক্সগুলো সেইসব পুরনো খাটি প্রেমের স্পষ্ট প্রমান। আজ ডাকবাক্সগুলো যেমন অবহেলীত,ঠীক প্রেমও তেমন অবহেলীত।
আজ সেই ডাকবাক্সগুলো হারিয়ে গেছে বলে সত্যিকার প্রেমও হারিয়ে গেছে। সত্যিকার প্রেমের ইতিহাস বহন করে সেই পুরনো দিনের অবহেলীত ডাক বাক্সগুলো। প্রেম আর ডাকবাক্সগুলো কেমন যেন অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। ঐ সময়টায় ডাকবাক্সগুলো ছাড়া কেমন যেন প্রেমকে কল্পনাও করা যেতনা । সেই ডাক বাক্সযুক্ত প্রেমিক প্রেমিকেরা আজ হয়তোবা ডিজিটাল কোনো প্রেমিক প্রেমিকাদের মা বাবা ।