ঐতিহ্য মেনে ১৮৯ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁ শহরের সিংহবাড়িতে । বনগাঁ তথা জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই সিংহবাড়ির পুজো । অর্থের টানে বিগত কয়েক বছর পুজোর জাঁকজমক কমলেও প্রাচীন প্রথা মেনে পুজো হচ্ছে এবারও ৷ পুজোর নিয়ম বা রীতি বিন্দুমাত্র বদলায়নি৷
এখনও প্রতিবছর পুজোয় ব্যবহৃত হয় শতাব্দী প্রাচীন কাঁসার বাসনপত্র ।
কথিত আছে, ১২৩৯ সালে ডাকাতি করতে এসেও ডাকাত দল সিংহবাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি । বিভিন্ন রূপে মা দুর্গা সামনে দাঁড়িয়ে ডাকাত দলকে আটকে দিয়েছিলেন । ডাকাতি করতে না পেরে সে কথা ডাকাতের দল সিংহবাড়িতে এসে জানিয়ে গিয়েছিল । দেখুন ভিডিও
পরবর্তীতে স্বপ্নাদেশে পেয়ে ১২৪০সালে যুধিষ্ঠির সিংহ ও গোপাল সিংহ এই পুজো শুরু করেন । সেই সময় মহা ধূমধাম করে পুজো হতো । বাড়িতে আট দশটা ঢাকি আসত । পুজোর দিনগুলো তাঁরা সিংহ বাড়িতেই থাকতেন । বস্তা বস্তা মুড়ি মুরকি সকলের জন্য রাখা থাকত । বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ সিংহবাড়ির ঢাকের বোল শুনে প্রতিমা দর্শনে আসতেন ৷
পরিবারের সদস্যরা যেখানেই থাকত, পুজোর ক’দিন সকলেই বাড়ি ফিরত । পুজোর দিনগুলি গমগম করত সিংহবাড়ি । অনেক আগে সিংহবাড়িতে পশুবলি দেওয়া হত । এখন নবমীর দিনে ফল বলি দেওয়া হয় । এরপর দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সিংহবাড়ির পুজো ।
এই বিষয়ে বিশ্বনাথ সিংহ বলেন, “কাকা (মদনমোহন সিংহ) মূলত পুজোর আর্থিক দিকটা দেখেন । আর আমি পুজোর বাকি দায়িত্ব সামলাই । তবে আগের মত আর জাঁকজমক নেই ৷ অর্থাভাবে অনেক কিছুতেই কাটছাঁট করতে হয়েছে । তবে আচারব্যবস্থার এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি ।”
আক্ষেপের সুরে তিনি আরও জানান, এতো বড় পরিবারে কেউ পুজোর জন্য এগিয়ে আসে না । পুজোর সময় কাছে পিঠে যাঁরা থাকেন তাঁরা ছাড়া বাকিরা বাড়ি আসে না । ছোটবেলায় খুব আনন্দ হত । এখন আগের মত আর সেই আনন্দও হয় না ।
বিগত কয়েক বছর ধরে পুজোর দায়ভার পড়েছে মদনমোহন সিংহ ও তাঁর ভাইপো বিশ্বনাথ সিংহের উপরে৷
শতাব্দী প্রাচীন প্রথা মেনে বোধনের দিন থেকে সিংহবাড়িতে পুজো শুরু হয় । শাশুড়িদের দেখিয়ে যাওয়া নিয়ম মেনে ঠাকুর মশাইয়ের সঙ্গে পুজোয় বসেন স্বর্ণলতা সিংহ ।
তাঁর কথায়, “বিয়ের পর দেখতাম শাশুড়িরা সকলে মিলে পুজোয় বসত । পরিবারের সকলে পুজোর দিনে বাড়ি আসত । অন দূর থেকে মানুষ পুজো দেখতে আসত । কিন্তু এখন আর সেই সব কিছুই হয় না । শুধু নিয়ম মেনে পুজোটাই হয় ।”