Doctors protest আরজিকর: মমতার অনুরোধ ব্যর্থ , স্নায়ুর লড়াইয়ে অধরা কালীঘাটের বৈঠক : দেখুন ভিডিও

0
219
অর্পিতা বনিক ও পার্থ সারথি নন্দী

কলকাতা:   এ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের মতই। শেষ হয়েও হল না শেষ!

বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় বাসে চেপে সল্টলেক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু সেখানে পৌঁছেও ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বিতর্কেই ফের ভেস্তে গেল বৈঠক । দেখুন ভিডিও

এ দিকে, স্বচ্ছতার দাবিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরাও। ফলে নবান্নের পর কালীঘাটের বৈঠকেও জট অব্যাহত।

নবান্নের পর কালীঘাটের বৈঠকও অধরা থেকে গেল লাইভ স্ট্রিমিং ইস্যুতে। শনিবার সন্ধ্যা ছ’টা ৩৯ মিনিট থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত চলল স্নায়ুর লড়াই। সরাসরি সম্প্রচার ইস্যুতে আটকে যায় আরজিকর নিয়ে বৈঠক। ডাক্তাররা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁর বাসভবনের দরজায়। জুনিয়র ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেন, কালীঘাটে কী কথা হবে, তা জানার অধিকার আছে সবার। দাবি জানান, স্বচ্ছতা বজায় রেখে বৈঠক হোক। শুধু সরকারপক্ষ নয়, দুই তরফেই ভিডিওগ্রাফি করতে দিতে হবে। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিং ইস্যুতে নারাজ থাকেন মুখ্যমন্ত্রী।

শেষ পর্যন্ত নিঃশর্ত আলোচনায় রাজি হয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আর বৈঠক করতে চায়নি সরকার পক্ষ! এমনই দাবি তাঁদের। তাঁরা বলছে, ‘অনেক সময় পেরিয়ে গেছে’ এই মন্তব্য করে তাঁদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অভিযোগ, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাঁদের ফিরে যেতে বলেন।

জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। তাঁরা প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা বলতে থাকেন, তাঁদের সতীর্থরা ধর্নাস্থলে রয়েছেন। তাঁরা দেখতে চান, বৈঠকে কী হল। শেষ পর্যন্ত সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপর ৯টার কিছু পর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। 

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যে অপেক্ষমান জুনিয়র ডাক্তাররা ভিজতে থাকায় একসময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আপনারা ভিজবেন না। ছাতা দেওয়া হয়েছে। মাথায় ছাতা ধরুন। আপনাদের চিঠিতে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথা ছিল না। আমাদের চিঠিতেও তা লেখা ছিল না। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। এভাবে ভিডিওগ্রাফি দেওয়া যায় না।

শীর্ষ আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা ভিডিও দেব। আমরাও ভিডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করব না। তবে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে সরকারের তরফে সই করা থাকবে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদেরও সই থাকবে। সেই কার্যবিবরণী আমরা দিয়ে দেব। আমার প্রতি এটুকু বিশ্বাস রাখুন। তাছাড়া আমার বাড়ির ভিতরের নিরাপত্তার বিষয়টিও তো আছে।

তারপরও জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মিটিং করতে না চাইলে এসেছেন কেন? বলেন, এত অসম্মান করছেন কেন? আমি তো বড় হয়েও আপনাদের কাছে গিয়েছি। তারপর আপনাদের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আপনারা আলোচনা করতে রাজি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি মিটিং করতে না চান, তাহলে এক কাপ চা খেয়ে যান। কিন্তু এভাবে ভিজবেন না। আমার কাছে জামাকাপড় আছে। সেগুলো ব্যবহার করুন। বলেন, আপনাদের পনেরো জন আসার কথা ছিল। কিন্তু চল্লিশজন এসেছেন। একজনের বাড়িতে চল্লিশ জনের বসার জায়গা হয় না। তা সত্ত্বেও আমি ব্যবস্থা করে রেখেছি।

জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, যারা বাইরে আন্দোলন করছেন, তাঁদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে বৈঠকে কী কথা হয়েছে? তাই ভিডিওগ্রাফি করতে দিতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলে দেন, আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভিডিওগ্রাফি দেওয়া যাবে না।

এরপরই রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মিটিং করেন জুনিয়র ডাক্তারা। তারপর তাঁরা রাত ন’টার পর সিদ্ধান্ত নেন, ভিডিওগ্রাফি ছাড়াই বৈঠক করবেন। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে সরকারের সই থাকলেই চলবে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, যখন তাঁরা বৈঠকে রাজি হন, তখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এখন আর বৈঠক সম্ভব নয়। আপনারা চলে যান। না হলে আপনাদের বাস ডেকে বের করে দেওয়া হবে।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য, এর মানে কী? এটাই কি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল? এতে কী প্রমাণিত হয়, কাদের সদিচ্ছা নেই? ঘটনায় আমরা হতাশ। আমরা চেয়েছিলাম, আলোচনা হোক। কিন্তু কার্যত আমাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। আমরা যেভাবে আন্দোলন চালাচ্ছিলাম, সেভাবেই আন্দোলন চলবে।

গত বৃহস্পতিবারও নবান্নে লাইভ স্ট্রিমিং ইস্যুতে অধরা থেকে যায় বৈঠক। এদিন পাঁচ দফা দাবিতে বৈঠক করতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে হাজির হন জুনিয়র ডাক্তারদের ৩১ জনের দল। ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব।

জেগে থাকতে হয়। যদি আপনারা কাজে ফেরেন, আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে দেখব। কেউ দোষী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে। সিবিআইকে অনুরোধ করব, আপনারা দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক।’’ সেখানেই মমতা জানান, আরজিকর সহ সমস্ত মেডিকেলে রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে তৈরি করা হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশের প্রতিনিধি থাকবে। মমতা আশ্বাস দেন, রাজ্য সরকার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেবে না। ধর্না মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে এসেছি মানে আমি ছোট হয়ে গেলাম, বিষয়টি তেমন নয়। এটা আমার শেষ চেষ্টা। মমতা অবশ্য ডাক্তাদের ধর্নামঞ্চে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে বিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে। খানিকটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মাইক হাতে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর বলতে শুরু করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।

তারপরই আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তাঁরা আলোচনায় বসতে রাজি। খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। সময় নষ্ট না করে আলোচনায় বসতে চেয়ে নবান্নে ই-মেল করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সাড়া দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক হবে। বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের ১৫ জন যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়, তাঁরা ৩৫ জন বৈঠকে যোগ দিতে চান। তাঁদের সেই দাবিও মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী।  

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে গেছিলেন। সেখান থেকে আলোচনার বার্তা দেন। পরে জুনিয়র ডাক্তাররাও ফের বৈঠকে বসার কথা বলেন। সেইমতো এদিন কালীঘাটের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ডেকেছিলেন আরজি কর ইস্যুতে আলোচনার জন্য। সময়মতো বিকেলে আন্দোলনকারীরা পৌঁছেও যান। কিন্তু বিষয়টি থমকে যায় সেই লাইভের ইস্যুতেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা করার পরও জুনিয়র ডাক্তাররা আলোচনার জন্য বাড়ির ভিতরে যাননি। 

এদিন সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর চলে গেলেন মুখ্যসচিবেরা, ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বিতর্কেই ফের ভেস্তে গেল বৈঠক ।

Previous articleMamata Banerjeeহঠাৎ ডাক্তারদের মঞ্চে মমতা,বললেন,‘মুখ্যমন্ত্রী নয়, আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি, সব দাবি বিচার করব’,ভরসা রেখে কাজে ফিরুন দেখুন ভিডিও
Next articleSandip Ghoshআরজি করে চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে গ্রেফতার করল সিবিআই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here