
সোমবারই দিঘায় পৌঁছেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ দিন ঘুরে দেখেন নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির চত্বর। কথা বলেন মন্দিরের পুরোহিতদের সঙ্গে।

মন্দিরের স্থাপত্যের প্রশংসাও শোনা যায় তাঁর মুখে। এ দিন হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে দিঘায় যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া থেকে সম্প্রীতি, ঐক্য এবং শান্তি বজায় রাখার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিঘায় পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পরশু ঠাকুর প্রতিস্থাপন।দ্বারোদঘাটন হবে আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে। তারপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।’

দিঘা জুড়ে তুঙ্গে ব্যস্ততা। চলছে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছে শীর্ষ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে সেজে উঠেছে ওল্ড ও নিউ দিঘাও। মানুষের উন্মাদনাও চোখে পড়ার মতো৷ বিপুল জন সমাগমের আন্দাজ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে প্রশাসন। অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরে বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা চলছে। সকাল ও সন্ধে আম, বেলকাঠ দিয়ে চলেছে বিশ্ব শান্তিযজ্ঞ। হচ্ছে মঙ্গল মন্ত্রযজ্ঞও। পুরো কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন পুরীর প্রধান সেবাইত রাজেশ দ্বৈতাপতি। রয়েছেন ইসকনের সহ-সভাপতি তথা সদ্য নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য় রাধারমণ দাস।
স্বভাবতই বিভিন্ন মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে দিঘার মন্দিরের উদ্বোধন কখন? কীভাবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা, মহাযজ্ঞের জন্য কী কী মিষ্টি তৈরি হচ্ছে?
মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য় রাধারমণ দাস জানান, ২৯ এপ্রিল মূল যজ্ঞর পর সন্ধেয় ফুলে সাজানো বিছানায় শোয়ানো হবে জগন্নাথ দেবকে। পরের দিন পাথরের বিগ্রহের জগন্নাথ দেব ও রাধা-কৃষ্ণর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেন, “অক্ষয় তৃতীয়ার দিন প্রথমে ভগবানকে সোনা, রুপো ও তামার তার দিয়ে বেঁধে সেই তারকে প্রধান পুরোহিতের কোমড়ে বাঁধা হবে। এরপর ঘট স্থাপন, কুণ্ড ও অবশেষে প্রতিবিম্ব।”
মন্দির সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে মহাযজ্ঞের জন্য পেঁড়া, খাজা, গজা, রসগোল্লা ইত্যাদি মিষ্টি তৈরিও করা হচ্ছে। পুরীতে যেরকম জগন্নাথের প্রসাদ হিসেবে খাজা দেওয়া হয়, তেমনই দিঘাতেও ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে পেঁড়া এবং গজা দেওয়ার কথাও আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তদারকির কাজ খতিয়ে দেখতে এদিন বেলায় দিঘাতে পৌঁছেও গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছুর তদারকিও করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই জগন্নাথ ধাম নতুন ও পুরনো প্রজন্মের জন্য নতুন একটা কৃষ্টি, সম্প্রীতির মেলবন্ধন হয়ে থাকবে। যারা কাজটা করেছেন খুব ভালভাবে করেছেন।
সমুদ্রের জন্য বিখ্যাত দিঘা। সেখানে বছরভরই লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম হয়। জগন্নাথ মন্দিরের দৌলতে দিঘার পরিচয় কী বদলে যাবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবশ্যই এই মন্দির দিঘার মুকুটে নতুন পালক যোগ করবে, দিঘা আরও উচ্চ শিখরে যাবে। পর্যটকরা যেমন ভ্রমণের জন্য আসবেন তেমন তারা তীর্থস্থানও দেখে যাবেন। আগামী দিনে দিঘা আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দিঘায় সমুদ্র রয়েছে। এখানে বহু মানুষ বেড়াতে আসেন। দিঘায় একটা তীর্থস্থান হলে তা লোকজনদের আকৃষ্ট করবে।দিঘায় যে জগন্নাথধাম তৈরি হয়েছে তা নতুন কৃষ্টি, সংস্কৃতি। এই মন্দিরে অধ্যাত্মবাদ এবং সম্প্রীতির মিলন হয়েছে।’ দিঘা আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে চলেছে, আশাবাদী মমতা।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে বিভিন্ন উপাচার শুরু হয়েছে। জগন্নাথদেবের বসার জন্য পিঁড়ির পুজো শেষ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার হবে মহাযজ্ঞ। এ দিকে এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া রয়েছে দিঘা। ক্রমাগত চালানো হচ্ছে কড়া নজরদারি।