
দিঘা : অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে।
দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন উত্তেজনা তুঙ্গে উঠছে। ইতিমধ্যেই দিঘা জুড়ে সাজো সাজো রব। উদ্বোধনে কোনরকম খামতি না রাখতে একাধিকবার পরিদর্শন করছেন জেলা থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ তারিখ থেকে সৈকত শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন যে এ বার তারকা খচিত হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে। তার আগের দিন হবে মহাপ্রভুর প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তবে দ্বারোদ্ঘাটনের দিনে প্রবল ভিড় ঠেকাতে ব্লকে ব্লকে জায়ান্ট স্ক্রিনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাতে সরাসরি দেখা যাবে মন্দির উদ্বোধন ও পুজোর সম্প্রচার। ফলে নিজেদের এলাকায় বসেই তা দেখতে পাবেন সকলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মন্দির সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ের খোঁজ রাখছেন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ‘প্রথা’র আদলে এখানেও বেশ কিছু ‘বিশেষ’ বিষয় থাকছে। যেমন ,প্রসাদের মধ্যে স্থানীয় মিষ্টির প্রাধান্য, দিঘার পুরানো জগন্নাথ মন্দিরকে ‘জগন্নাথের মাসির বাড়ি’ হিসেবে চিহ্নিত করা, জগন্নাথ-বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি রথ নির্মাণ। পুরীর মন্দিরে যে ভাবে প্রতি দিন সন্ধ্যায় ধ্বজা তোলা হয় তেমনই দিঘার মন্দিরেও থাকবে একই ব্যবস্থা। এ ছাড়াও, ‘চৈতন্য ফটক’ তৈরি হওয়ায় পুরীর স্বর্গদ্বারের মতোই এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হবে। রাস্তা প্রশস্ত করার ফলে রথযাত্রার সময়ে ভক্তদের সমাগমেও বিশেষ সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সামগ্রিক ভাবে, দিঘা শুধু সমুদ্রসৈকত কেন্দ্র হিসাবেই নয়, এ বার থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও পরিচিত হয়ে উঠবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মন্দির উদ্বোধনের পরেই তার পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ইসকনের হাতে। অনেকেই মনে করছেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে যে পরিকল্পনা এবং উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, তার ফলে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই সৈকত শহর।
প্রায় ২০০ কোটি ব্যয়ে ২১৩ ফুট উচ্চতার এই জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের দিকে বর্তমানে গোটা রাজ্যের মানুষ তাকিয়ে আছে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও আরও একাধিক বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত থাকবেন। তাদের যাতায়াতের কথা ভেবে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত হেলিপ্যাড তৈরীর কাজে নেমে পড়েছে প্রশাসন।
বর্তমানে দিঘায় একটি স্থায়ী হেলিপ্যাড রয়েছে। সেটি ছাড়াও তার আশেপাশে আরও একাধিক হেলিপ্যাড তৈরি করা হবে উদ্বোধনের জন্য। ইতিমধ্যে সেই কাজে নেমে পড়েছে পূর্ত দপ্তর। স্থায়ী হেলিপ্যাডের পাশেই জেলা পুলিশের কর্তারা বেশ কয়েকটি মাঠ দেখেছে। সেখানেই অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হবে বেশ কয়েকটি হেলিপ্যাড। প্রাথমিকভাবে নতুন তিনটি হেলিপ্যাড গড়ার কাজে নেমে পড়েছে পূর্ত দপ্তর।
এছাড়াও জগন্নাথ মন্দির থেকে দু কিলোমিটার দূর থেকে একাধিক পার্কিং পয়েন্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলা পরিষদের অতিথিশালায় গড়া হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। সেখানে দু’জন এএসআই ও ১১ জন কনস্টেবল নিযুক্ত করা হয়েছে।
জগন্নাথ মন্দিরের সামনে নবনির্মিত স্নানের ঘাটও দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। পূর্ত দপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, হেলিপ্যাডের জন্য জেলা পুলিশের তরফ থেকে বেশ কয়েকটি মাঠ দেখা হয়েছে। সেগুলিতেই উদ্বোধনের দিনের জন্য অস্থায়ী হেলিপ্যাড গড়ার কথা রয়েছে।
দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক অপূর্ব বিশ্বাস জানান, ‘হেলিপ্যাড তৈরির দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দপ্তর। এ ছাড়াও উদ্বোধনের সময় পাবলিক হোল্ডিং পয়েন্টগুলিতেও পর্যাপ্ত জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখছি। ওই দিন যদি পার্কিং লট ভর্তি হয়ে যায় তাহলে আমরা দিঘা গেটের বাইরে বাকি গাড়িগুলিকে রাখার ব্যবস্থাও করেছি। এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টা সাফাই অভিযান চলবে।’