নতুন বছর। নতুন রেজোলিউশন। আর সেটা যদি টাকা-পয়সা সংক্রান্ত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। হ্যাঁ, ব্যবসার কথাই হচ্ছে। নতুন বছরে যদি নতুন ব্যবসা শুরু করলে কেমন হয়? অনেকে ভুরু কোঁচকাতে পারেন। বলতে পারেন, পুঁজি কোথা থেকে আসবে, ব্যবসা করার জায়গা কে দেবে? চিন্তা নেই, সবই হবে অনলাইনে।
তবে অনেকেরই এই নিয়ে কোনও ধারণা নেই। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে শুধু প্রতিভা এবং দক্ষতা নয় সঙ্গে আরও কিছু জ্ঞান থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে থাকা চাই অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। এখানে সেরকমই কিছু ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করা হল, যেগুলো শুরু করা সহজ আর আয় করাটাও।
কনটেন্ট মার্কেটিং: কোনও কোম্পানির পণ্য এবং পরিষেবার বিজ্ঞাপন তৈরি করেন কনটেন্ট মার্কেটার্সরা। যাতে গ্রাহকরা আকৃষ্ট হন। সেই কোম্পানির বিক্রি বাড়ে। কনটেন্ট মার্কেটার্সদের কাজ হল ছবি, লেখা বা ভিডিও-র মাধ্যমে এমনভাবে সেই কোম্পানির বিজ্ঞাপন তৈরি করা যাতে ইউজাররা হামলে পড়ে। এখন প্রায় সমস্ত কোম্পানিই তাদের ব্যবসা অনালাইনে নিয়ে এসেছে। ফলে কনটেন্ট মার্কেটার্সদের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে সেই চাহিদা আরও বাড়বে বই কমবে না।
গ্রাফিক ডিজাইনার: সোজা কথায় ভিজুয়াল ডিজাইন। এটাও এক ধরনের মার্কেটিং। কোনও কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবা কয়েকটা তুলির টানে বা আকর্ষণীয় উপায়ে ফুটিয়ে তুলতে হয়। যারা আঁকা বা আর্টের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের জন্য এই ব্যবসা আদর্শ। কাজের বিশাল পরিসর রয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে চাইলে অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর, ফটোশপ এবং অন্যান্যদের মতো ডিজাইন দক্ষতার প্রয়োজন।
ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার: ওয়েবসাইট তৈরির জগতে, ওয়ার্ডপ্রেস নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্প। ওয়েবে এক তৃতীয়াংশের বেশি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেসের তৈরি। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ কোম্পানি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এই জনপ্রিয়তার কারণেই বাজারে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারদের ব্যাপক চাহিদা। এটা ওপেনসোর্স সফটওয়্যার, তাই যে কেউ প্ল্যাটফর্মের জন্য কোড, ডিজাইন থিম এবং ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন তৈরি করতে পারে। একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে সুপরিচিত ওয়ার্ডপ্রেস ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করার বা ডেভেলপমেন্ট ফার্ম শুরু করার বিকল্প রয়েছে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল অন্যের ব্যবসায় বিক্রি করা পণ্যের প্রচার। বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগিং-এর মত বেশ কিছু বিপণন কৌশল ব্যবহার করে ল্যান্ডিং পৃষ্ঠায় গ্রাহকদের টেনে আনা যায়। গ্রাহকরা লিঙ্কে ক্লিক করলে সেই পণ্যটি কেনার জন্য নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে যাবেন। দক্ষতা থাক বা না থাক, হোম বেসড ইন্টারনেট ব্যবসা হিসেবে এটা সহজেই শুরু করা যায়।
এসইও স্পেশালিস্ট: এই অনলাইন ব্যবসা এই মুহূর্তে সোনার খনি। টেক স্যাভিদের জন্য আদর্শ। বর্তমানে এসইও অপ্টিমাইজেশান একটি আলোচিত বিষয়। তবে এটা কীভাবে কাজ করে সেটা খুব লোকই জানেন। এই ব্যবসা শুরু করতে চাইলে লিঙ্ক বিল্ডিং, বিষয়বস্তু তৈরি, ইকমার্স এসইও অপটিমাইজেশন ইত্যাদির মতো এককালীন প্যাকেজ বিক্রির কথা ভাবা যেতে পারে।
ই কমার্স স্টোরের মালিক: আগে ইন্টারনেটে পণ্য বিক্রি করা এত সহজ ছিল না। বর্তমানে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন যে কেউ অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে পণ্য বিক্রি শুরু করতে পারেন। এর মাধ্যমে শিপিংয়ের প্রয়োজন হয় এমন পণ্যের পাশাপাশি ডিজিটাল ডাউনলোড যেমন গান, ই-বুক এবং সফটওয়্যারও বিক্রি করা যায়। তবে ই কমার্স স্টোর শুরুর আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা প্রয়োজন।
অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট তৈরি: কোডিং করতে জানলে, দক্ষ হলে এই ব্যবসা আদর্শ। কোথায় বিক্রি করা হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। কম খরচে নিজস্ব ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরি করতে চাইছে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ক্লায়েন্টদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এমন কাস্টম ওয়েবসাইট এবং অ্যাপও তৈরি করা যায়।
ডোমেইন নেম কেনা এবং বেচা: ডোমেইন নেম ছাড়া ওয়েবসাইট হয় না। সেগুলোর রেজিস্ট্রেশনও করাতে হয়। রিয়েল এস্টেটের মতো অনেক উদ্যোক্তা লাভের জন্য ডোমেইন নেম কিনে আবার বেচে দেন। এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ। অর্থ এবং সময় দুটোই প্রয়োজন। কারণ অফার না পাওয়া পর্যন্ত ডোমেইন নেম ধরে রাখতে হবে। তার জন্য টাকা প্রয়োজন। এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতাও বিশাল। তাই নামার আগে গবেষণা করতে হবে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর: জার্মান অর্থনীতিবিদ জোসেফ শুম্পেটারের মতে, যে কোনও নতুন আইডিয়াই পুরনো আইডিয়াগুলোর সমন্বয়। অর্থাৎ নতুন বোতলে পুরনো মদ। শুধু দর্শকের কাছে পৌঁছনোর ধরনে নতুনত্ব। ব্রেইন পিকিংস, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা নিজেকে বর্ণনা করে ‘ক্রস-ডিসিপ্লিনারি আগ্রহ, বিস্তৃত শিল্প, বিজ্ঞান, নকশা, ইতিহাস, দর্শন এবং আরও অনেক কিছুর একটি ইনভেনটরি’ হিসাবে। সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেল এবং অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কের কার্যকর ব্যবহার ব্লগটিকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
অনলাইন কোর্স বিক্রি: একটি জনপ্রিয় অনলাইন ব্যবসা হল ‘অনলাইন কোর্স বিক্রি’। যারা দ্রুত নতুন কিছু শিখতে চান তাঁদের কাছে অনলাইন কোর্সগুলো
এমপ্লয়ি রিক্রুটমেন্ট সার্ভিস: দক্ষতা থাকলে চাকরির শূন্যপদ পূরণ করা সহজ। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই ব্যবসায় সংস্থা কিংবা কোম্পানিকে দক্ষ লোক খুঁজে দিতে হয়। ইন্টারনেটে ভালো গবেষণা করার দক্ষতা থাকলেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়। এই ভূমিকায়, কোম্পানিগুলিকে নতুন নিয়োগের জন্য অনুসন্ধানে সহায়তা করার মাধ্যমে সম্ভাব্য কর্মীদের খুঁজে পেতে এবং স্ক্রিন করতে সহায়তা করা হয়। এখন বেশিরভাগ নিয়োগ অনলাইনেই সম্পন্ন হয়। তাই এই ব্যবসার চাহিদা তুঙ্গে।
রিভিউ ওয়েবসাইট তৈরি: আরেকটি লাভজনক অনলাইন ব্যবসা হল রিভিউ ওয়েবসাইট তৈরি। যেমন ট্রিপ অ্যাডভাইসার। এই ব্যবসায় বিস্তর প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে একবার দাঁড়িয়ে গেলে জলের মতো টাকা আসবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। মাথায় রাখতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন। এবং পণ্যের রিভিউ করে ইন্টারনেটে অর্থ উপার্জনের অনেক পদ্ধতি রয়েছে।
পিআর কনসাল্টিং: এই অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন জ্ঞান অপরিহার্য। অনলাইনে কোম্পানিগুলো কীভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা চাই। কোম্পানিগুলোকে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, প্রেস রিলিজ, এবং ওয়েব কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে যায়। এগুলোর প্রচার এবং সামগ্রিক পাবলিক ইমেজ তৈরিতে পরামর্শ দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্টের উপর নির্ভর করে ফ্রিলান্স পিআর পরামর্শদাতা হিসেবে সময় এবং দায়িত্ব পরিবর্তিত হবে।
প্রুফরিডার: পড়তে ভালোবাসলে প্রুফরিডিংয়ের কাজ উপযুক্ত। লেখকের বই বা গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে তার পান্ডুলিপি দেখে দেওয়াটাই কাজ। সবকিছু মুদ্রণ প্রস্তুত কি না তা নিশ্চিত করতে হয়। তবে এর জন্য ভাল নজর থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার: বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া যে কোনও ব্যবসার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ এবং চ্যালেঞ্জিং। তাই বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল সামলানোর জন্য ফ্রিলান্সার নিয়োগ করে। ‘স্টার্টআপ সোশ্যাল মিডিয়া কিট’ বা ‘স্মল বিজনেস-সোশ্যাল মিডিয়া স্টার্টার কিট’-এর মতো অফার দেওয়া যায়। যাতে সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাফিক্স থেকে অ্যানালিটিক্স রিপোর্ট পর্যন্ত সব কিছুই থাকবে।
পডকাস্ট: পডকাস্ট মানে অডিও ফাইল। নিয়মিত আপডেট করতে হয়। গ্রাহকরা ডাউনলোড করে যে কোনও সময় শুনতে পারেন। ইদানীং পডকাস্ট লাভজনক অনলাইন ব্যবসা। এখানে মূলত স্পনসরশিপ, বিজ্ঞাপন এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সহ বিভিন্ন উৎস থেকে আয় হয়। পডকাস্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফোকাস করা যায়।
ট্রানস্লেটর: একাধিক ভাষায় দক্ষ? তাহলে ট্রানস্লেশনের কাজ আদর্শ। নতুন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের বাজার ধরতে অনেক কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইট এবং বিপণন সামগ্রীর অনুবাদ করেন। একাধিক ভাষা জানা থাকলে অনায়াসে এই কাজ শুরু করা যায়।
ভিডিও প্রডিউসার: ইউটিউব বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। আসলে ভিডিও ফরম্যাটে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। যদি কেউ ভিডিও এডিট করতে জানেন তাহলে ভিডিও প্রডিউসারের কাজ তাঁর জন্য আদর্শ। অনেক সৃজনশীলতা এবং চ্যালেঞ্জ সহ সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনলাইন ব্যবসাগুলোর মধ্যে একটি হল কোম্পানির ওয়েবসাইট বা ব্লগের জন্য ভিডিও তৈরি করা।
উল্লেখ্য,অনলাইন দুনিয়ায় আপনাদের প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন পণ্য,দ্রব্যের প্রচারের জন্য “দেশের সময় ” -এর ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় তা “আমাদের বিজ্ঞাপন নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, এবং প্রযোজ্য স্থানীয় আইনকে অনুসরণ করেই আমরা অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকি৷ এমন কোনও বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিই না যা কোন ভাবে আইন বিরুদ্ধ কাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে।”
Desher Bazar-Ads:দেশের বাজার এ বিজ্ঞাপন দিতে Contact-9434144737 / 9733775940 email – deshersamay@gmail.con