কলকাতার যাদবপুর কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরি এখন ডেঙ্গি মশার আঁতুড়ঘর। এখন এই এলাকাকেই কেন্দ্র করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। শিল্প নিগমের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি।
দেশের সময়,কলকাতা: রাজ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। যত দিন বাড়ছে কলকাতা সহ জেলার পরিস্থিতি যেন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তবে হাতের বাইরে যাতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি বেরিয়ে না যায় তার জন্য কম কসরত করছে না কলকাতা পুরসভা। এবার মশা মারতে উন্নত ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার পুরসভার। ড্রোনের সাহায্যে আকাশ থেকেই মশা মারার তেল প্রয়োগ।
যাদবপুর কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরি কারখানাটি এখন ডেঙ্গি মশার আঁতুড়ঘর। এই কারখানা এলাকাটিকেই কেন্দ্র করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। শিল্প নিগমের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিও পাঠাবেন। তবে পরিস্থিতি যাতে হাতের নাগালের বাইরে না বের হয় তার জন্য কারখানাটির জঞ্জাল স্তুপে শুরু হল মশা মারার অভিযান। এ দিন, ডেপুটি মেয়র নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার তত্ত্বাবধান করেন।
এর আগে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, ডেঙ্গির প্রকোপ আটকাতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। শুধু তাই নয়, কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রেরগুলি সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। শনি ও রবিবারও খোলা থাকবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ছ হাজার। কোভিড পরবর্তী সময়ে এ বছরই ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। রাজ্যের সাত জেলা এখন ডেঙ্গি হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, মালদহ।
রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সমস্ত জেলার জেলাশাসক, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, কলকাতা পুরসভার কমিশনার এবং স্বাস্থ্যকর্তারা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ডেঙ্গি রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করছে সরকার। সোমবারের বৈঠকে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
ডেঙ্গির মোকাবিলায় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নবান্নের বৈঠকে। গত কয়েক দিনে রাজ্যের নানা প্রান্তে বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে পুজোর আগে ডেঙ্গি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রাস্তায় জমা জলই ডেঙ্গিবাহী মশার আঁতুড়ঘর। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক নির্দেশিকা না মানলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। পুজো কমিটিগুলিকে রাস্তায় জল না জমার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। নবান্নের বৈঠকে যে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—
ডেঙ্গি নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করার জন্য সমস্ত পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে জেলাশাসকদের বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
ডেঙ্গি নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করার জন্য সমস্ত পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে জেলাশাসকদের বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
ডেঙ্গি ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত সমস্ত এলাকায় বিশেষ সাফাই অভিযান চালানো হবে। কীটনাশকের মাধ্যমে মশার লার্ভা ধ্বংস করা হবে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত এলাকায় আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হবে।
রেল এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষকে তাদের এলাকায় প্রয়োজনীয় সাফাই কর্মসূচি আয়োজনের অনুরোধ করা হবে। নির্মাণস্থলেও ডেঙ্গির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অন্য সংস্থাগুলিকেও এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুরোধ করবে জেলা প্রশাসন।
শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকার বাজারগুলিতে সাফাই অভিযান চালানো হবে।
ডেঙ্গি রোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের সব হাসপাতাল চত্বরে নিয়মিত সাফাই অভিযান চালানো হবে। কোথাও যাতে জল না জমে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা পরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি করে দল নিয়মিত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করবে এবং সেখানকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।
নর্দমা আটকে যাতে জল না জমতে পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচির আয়োজন করবে প্রশাসন।
‘হটস্পট’ এলাকা এবং ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় মশারি বিতরণ করা হবে।
সরকারি সমস্ত কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গি পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ডেঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে রোগ নির্ধারণের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। রোগ দ্রুত নির্ধারণ করা গেলেই দ্রুত সঠিক চিকিৎসা সম্ভব। তাতে মৃত্যু ঠেকানো যাবে। এ ছাড়া, যে সব রোগীর অন্য অসুস্থতা রয়েছে, তাদের চিকিৎসায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গি মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সরকারি দফতরের আধিকারিক এবং কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যত দিন না পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তাঁরা ছুটি নিতে পারবেন না।
রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। সরকারের তরফে এখনও কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ না করা হলেও বেসরকারি সূত্রে খবর, দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতায়। শিলিগুড়ি, ব্যারাকপুরেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।