দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একটানা ১৫ বছর। সময়টা নেহাতই কম নয়। কিন্তু, তাতেও দিল্লি পুরসভার দখল নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারল না মোদি-শাহের বিজেপি। আপ ঝড়ে উড়ে গেল দিল্লির পদ্মশিবির। পুরভোটে রমরমিয়ে ১৩৪ আসনে জিতল কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।

ইঙ্গিত মিলছিল সকাল থেকেই। দিন গড়াতেই ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করল ছবিটা। পূর্ব দিল্লির টুকটাক ওয়ার্ডে জয় ছাড়া মোটের উপরে পাল্লা ভারী ছিল কেজরির আপের দিকেই। শেষে দুপুর ২টো নাগাদ ১২৬-এর ম্যাজিক ফিগার পেরতেই উৎসব শুরু হয়ে যায় আপ শিবিরে। গণনা শেষে, আপ-এর ঝুলিতে যায় ১৩৪টি ওয়ার্ড। ১০৪-এই থমকে যায় বিজেপি। আর অন্যদিকে, ১০-এর কোটাও পেরতে পারেনি কংগ্রেস। অন্যান্য ৩।

গত ৪ ডিসেম্বর দিল্লিতে পুর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে তার গণনা শুরু হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এবার ভোটের পর বুথ ফেরত তামাম সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে দিল্লিতে স্যুইপ করবে আপ। তা হয়তো পুরোপুরি হয়নি। কিন্তু আম আদমি পার্টি যে জয় সুনিশ্চিত করেছে তা কম বড় নয় ৷

২০১৫ সালে বিধানসভা ভোটে দিল্লিতে ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টি জিতেছিল আপ। বিজেপি জিতেছিল মাত্র ৩টি আসনে। কিন্তু তার পরেও ২০১৭ সালে পুরভোটে দিল্লি পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতে সফল হয় বিজেপি। সেবার ১৮১টি আসনে জিতেছিল গেরুয়া শিবির। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও কেজরিওয়ালের পার্টি জিতেছিল মাত্র ৪৮টি আসনে। আর ৩০টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। বিজেপির সেই গণভিত্তিতে কেজরিওয়াল জবরদস্ত ধাক্কা মেরেছেন। ১৮১ থেকে এক ধাক্কায় বিজেপির আসন সংখ্যা প্রায় ৮০টি কমে যাওয়ার পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আবার আপ যে ভাবে আসন বাড়িয়েছে তা রূপকথার গল্পের মতই।

দিল্লি সরকারে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় নেই বিজেপি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দিল্লি পুরসভা তারা দখলে রাখতে পেরেছিল। তা সে কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় হোক বা দিল্লিতে কেজরিওয়াল জমানায়। এ হেন পরিস্থিতিতে পুরভোটে বিজেপিকে পরাস্ত করতে কেজরিওয়াল অনেক দিন ধরেই ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে, তাতে ফল দিতে শুরু করেছে।

এদিন গণনা শুরু হতেই কেজরিওয়ালের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন মণীশ সিসোদিয়া, রাঘব চাড্ডা-সহ আপের নেতারা। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মানও পৌঁছে গেছিলেন কেজরিওয়ালের বাড়িতে। পুরভোটে এক্সিট পোলের ফলাফল দেখে উদযাপনের পুরোদস্তুর প্রস্তুতিও করে রেখেছিল আপ। তবে গণনায় প্রাথমিক ভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কিছুটা থমকে ছিলেন। কিন্তু ম্যাজিক নম্বর পেরিয়ে যাওয়ার পরে উদযাপনে নেমে পড়েছেন আম সমর্থকরা। দিল্লি সরকার ও পুরসভা দুটোই এখন তাদের দখলে।

সাম্প্রতিক কালে কোনও পুরভোটকে কেন্দ্র করে এমন দ্বৈরথ হয়নি। এই ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এক প্রকার প্রচারে নামিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেওতাকে নামানো হয়েছিল প্রচারে। বাঙালি ও বিহারি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলা ও বিহারের কেন্দ্র ও রাজ্য নেতাদের প্রচারে নামানো হয়েছিল।

আপ-এর ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার খবর সামনে আসতেই নিজের বাসভবন থেকে বেরিয়ে দলীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন আম আদমি পার্টির মুখ্য আহ্বায়ক তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তারপরে তিনি কার্যালয়ে পৌঁছতেই নতুন করে উ‍ৎসবে মাতেন আপ-এর নেতাকর্মীরা।

প্রথমে এই জয়ের কারিগর হিসাবে নিজের দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান কেজরি। তাঁর পাশে তখন দাঁড়িয়ে আপ-এর অন্যতম দুই প্রধান মুখ মণীশ সিসোদিয়া এবং ভগবন্ত সিং মান। কর্মী সমর্থকদের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেজরি বলেন, “যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের অভিনন্দন। কিন্তু, যাঁরা পরাজিত হয়েছেন তাঁরা মনখারাপ করবেন না। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা আরও উন্নততর দিল্লি গড়ে তুলব।”

সন্দেহ নেই দিল্লি নির্বাচনের এই ফলাফল বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা। একে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির কাছে হালে পানি পাচ্ছে না গেরুয়া শিবির। তার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায় দিল্লি পুরসভা হাতছাড়া হল। এ ঘটনা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্যও অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এমনকি বৃহস্পতিবার গুজরাত ভোটের ফলাফলে বিজেপির বড় জয় সুনিশ্চিত করলেও দিল্লির ফলাফল কাঁটা হয়ে থাকবে বলে মত অনেকের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here