দেশের সময় : নরেন্দ্রনাথ মিত্রের বিখ্যাত গল্প ‘রস’। বেতার নাটক কিংবা বাংলা সিনেমার পর হিন্দিতে অমিতাভ বচ্চনকে নায়ক করে তৈরি হয়েছিল সওদাগর ছবি। সে গল্পেও শিউলি হয়েছিলেন অমিতাভ। সুন্দর দেখতে বলে ফুলবানুকে বিয়ে করতে মাজুবিকে ছেড়ে আসেন। কিন্তু মাজুবির হাতের সেই জাদু ফুলবানুর ছিল না। তাই ব্যবসা বাঁচাতে মাথা নিচু করে মাজুর কাছেই হাত পাততে হয়েছিল।
হাতে গুড়ের স্বাদ তেমন খোলতাই হত না। গুড়ের ব্যবসায় ডাহা ক্ষতির মুখে পড়ে ছেড়ে আসা মাজুবির সামনে গিয়েই আবার দাঁড়াতে হয়েছিল মতিকে। অবাক হয়েছিল মাজুবি। রেগে গিয়েছিল, কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেনি। এবার অবশ্য অমিতাভ বচ্চনের সওদাগর ছবির মতো হাতের জাদু দেখিয়ে গুড় তৈরির উপায়ই নেই।
বনগাঁ শহরের এক গুড় বিক্রেতার কথায়, “শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ এই খেজুর গুড়। পাটালি আর একটু ভাল নলেনের টানে আমার কাছে ক্রেতারা আসেন । কিন্তু এবার সেই মজাই নেই। প্রকৃত রসের অভাবে খেজুর গুড়ে চিনি মিশিয়ে তৈরী হচ্ছে পাটালি ৷ ফলে কোন স্বাদ গন্ধ নেই খুব চড়া দামে যে সব গুড় পাওয়া যাচ্ছে তাতেও সামান্য হলেও ভেজাল থাকছে ৷ অকপটে স্বীকার করলেন গুড় বিক্রেতা ৷” দেখুন ভিডিও
বনগাঁসুখ পুকুরিয়া গ্রামের এক শিউলি জানান, এবারে রসে তেমন জুত নেই। প্রথম কাট কোনওরকম হলেও দ্বিতীয় কাটের স্বাদ নেই। গন্ধও নেই আগের মতো। ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারিতেও তেমন শীত নেই। রসেরও জুত নেই। সাদা হয়ে যাচ্ছে রস। স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “আজ থেকে ৪০ বছর আগে রস কাটতে এসে বাবার সঙ্গে দু’বার করে আগুন পোহাতে হত। এখন সে বালাই নেই। ক্রেতারাও তাই বলছেন, এ কেমন গুড়? স্বাদ গন্ধ কোথায় গেল?” এখন খরচের টাকা তুলবেন কীভাবে, লাভই বা কী হবে সে চিন্তায় কপালে ভাঁজ।
কুয়াশা-ঢাকা শীতের সকালে টাটকা এক গ্লাস খেজুরের রসের তুলনা হয় না। এই মধুবৃক্ষ থেকে আহৃত রস কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ রস দিয়ে তৈরি গুড় ও পাটালিরও তুলনা নেই। শীতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস আহহ, এক কথায় অমৃত! শীতের পিঠে-পায়েসের একটি উপাদেয় উপাদান খেজুরের রস। এই রসে তৈরি দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা ৷ কিন্তু এখন সেসব অধরা ৷
এবার প্রকৃতির কাছেই দু’হাত পেতেছেন রসের কারিগররা।আশা আশঙ্কার দোলাচলে আছেন শিউলিরা।এবছর হাতেগোনা কিছুদিন পড়ে আছে তার মধ্যে উত্তুরে বাতাস বইবে কি! জাঁকিয়ে শীত পড়বে কি! আশায় বাঁচে চাষা। আবহাওয়াই এবার খলনায়ক হয়ে উঠেছে শিউলিদের কাছে। শীত নেই, তাই গুড়ও নেই। বাজারে যে গুড়ের রসগোল্লা বা মিষ্টি এসেছে তার বেশিরভাগই কৃত্রিম স্বাদ আর গন্ধ। আসল গুড়ের স্বাদ এবার অধরাই।