Dakshineswar Kali Temple : দক্ষিণেশ্বরে মানুষের ঢল,মন্দির ঘিরে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি

0
1116

দেশের সময়, কলকাতা :চেনা ছন্দে ফিরল দক্ষিণশ্বরে কালীপুজো। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে এ বছর স্বাভাবিকভাবে পালিত হচ্ছে দক্ষিণশ্বরে কালীপুজো। দু’বছর পর এ বার দক্ষিণশ্বরে মন্দির চত্বরে বসেই মায়ের পুজো দেখার সুযোগ পাচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। সেজে উঠেছে দক্ষিণশ্বরে মন্দির প্রাঙ্গণ। 

হুগলি নদীর তীরে রামকৃষ্ণ দেব-স্বামী বিবেকানন্দ-রানি রাসমনির স্মৃতি বিজড়িত তীর্থভূমি। শতাব্দী প্রাচীন ভবতারিণীর মন্দির ৷ আর এই মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা ইতিহাস। আজ দেশজুড়ে শক্তির আরাধনা, গঙ্গার ধারে এই তীর্থস্থানেও আজ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। 

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে কালীপুজোয় ভবতারিণী মায়ের পুজোর আয়োজন প্রতিবছরের মতোই। ভোর সাড়ে ৫টায় মন্দির খোলার পর বিশেষ আরতি হয় । এরপর মা ভবতারিণীর পুজো। তারপর ধূপ আরতি।

১৮৫৫ সালে রানি রাসমনি দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে রামকৃষ্ণদেবের সাধনস্থলে পরিণত হয় এই মন্দির। রামকৃষ্ণের সাধক সত্ত্বা এখানে পরিপূর্ণতা লাভ করে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভবতারিণীর সঙ্গে রাধা-কৃষ্ণের সহাবস্থান। কথিত আছে, এই মন্দিরেই শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ। মহাতীর্থের অন্দরমহলের অন্তরে নিহিত রয়েছে এমন নানা লোকগাথা। রামকৃষ্ণের সর্বধর্মের সাধনার সাক্ষী এই দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। 

৯ বছরের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছিল দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। তবে সেই যাত্রাপথ একেবারেই মসৃণ ছিল না। কৈবর্ত রানি রাসমণির গড়া মন্দির। রে রে করে উঠেছিল ব্রাহ্মণ সমাজ। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল রানি রাসমণিকে। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চালিয়ে গিয়েছিলেন লড়াই। 

কথিত আছে, দক্ষিণেশ্বরকে বৃন্দাবনের সমতুল্য করে তুলেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ। লোককথা অনুসারে, এই পূণ্যভূমিতেই স্বামী বিবেকানন্দকে ব্রহ্মলোকের স্বাদ পাইছিলেন রামকৃষ্ণ। অথচ সেই স্বামীজিকেই একসময় ঢুকতে দেওয়া হয়নি এই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে! এই সব নানা অজানা অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই মহাতীর্থ।

এ বছর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পুজো ১৬৮-এ পা রাখল। আজ ভোরে মঙ্গলারতি দিয়ে ১৬৮তম পুজোর সূচনা হয়েছে। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য আজ ভোর থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের দরজা। আজ সারারাত ধরে চলবে পুজো নেওয়া হবে। পুজো দেওয়াতেও এ বছর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। পাশাপাশি মন্দির চত্বরে বসেই মায়ের পুজো দেখা যাবে। নাটমন্দির চত্বরে বসে ভবতারিণীর পুজো-অর্চনা দেখা যাবে মন্দির প্রাঙ্গণে লাগানো বড় পর্দায়।

গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণশ্বরে কালীপুজোতেও কোভিড বিধি নিষেধ মানতে হচ্ছিল। এ বছর আর কোনও নিয়ম মানতে হবে না দক্ষিণশ্বরে কালীপুজো উদযাপনের জন্য। তাই আজ ভোর থেকেই মন্দির চত্বরে ভিড় জমাচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টায় পুজো শুরু হবে। নিত্যপুজোর পাশাপাশি আজ রাতে মায়ের বিশেষ পুজোও করা হবে। আর সেই পুজো মন্দির চত্বরে লাগানো বড় পর্দায় দেখা যাবে।

ভক্ত ও দর্শনার্থীদের খাবারের সুবিধার জন্য দক্ষিণেশ্বরের অতিথিশালার পাশেই খাবারের দোকানগুলিকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তারক্ষা ও নজরদারির জন্য ৩০-৩৫টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে মন্দির চত্বরে। গোটা মন্দির চত্বরে মোতায়ন করা হয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের তরফে সাদা পোশাকের বাহিনী, বম্ব স্কোয়াড এবং বিশেষ পুলিশবাহিনী।

আজ সাবেকি সাজে সাজবেন ভবতারিণী। পরানো হবে সাবেক ধাঁচে বেনারসি শাড়ি আর সোনার গয়না। রাতে মন্দিরের চাঁদনি ঘাটে পুজোর ঘটে জল ভরতে যাওয়া হবে। পুজোর আয়োজন করা হবে চার প্রহরে ষোড়শোপচারে। ভোগে থাকছে পাঁচ রকম মাছ, পাঁচ রকম আনাজ ভাজা, ঘি-ভাত, অন্ন, পাঁচ রকম মিষ্টি ও দই। রাত সাড়ে ১০টা বাজতেই শুরু হয়েছে ভবতারিণীর পুজো।

Previous articleMamata Banerjee: ল্যান্ডফল রাত ১২টায়, পুজোর মধ্যেই ঝড় নিয়ে মমতার সিত্রাং-সতর্কতা
Next articleKali Puja 2022: সিত্রাং’কে উপেক্ষা করে দীপান্বিতার দ্বীপ-জ্বলে উঠল বনগাঁর হিন্দুমহাসভা মন্ডপে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here