দিঘা : কখনও হালকা আবার কখনও মাঝারি। দিঘায় শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। সেইসঙ্গে উত্তাল হতে শুরু করেছে সমুদ্র। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একটি ঢেউ ভাঙত বুধবার বিকেলের পর সেই সময়টাতে ভাঙছে তিন থেকে চারটি ঢেউ। জানিয়ে দিচ্ছে কাউন্টডাউন শুরু।
ধীরে ধীরে সাগরের উপর দিয়ে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের রাত ১০টার বুলেটিন বলছে, গত ছ’ঘণ্টায় তার গতিবেগ ছিল ১২ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা থেকে ঠিক কতটা দূরে রয়েছে ‘দানা’, তা-ও জানানো হয়েছে বুলেটিনে। বুধবার মধ্যরাতে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’-এ পরিণত হতে পারে ‘দানা’। তখন সমুদ্রের উপর দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার
ইতিমধ্যেই দিঘা, শঙ্করপুর এবং মন্দারমনি ও তাজপুর থেকে ফিরে গিয়েছেন পর্যটকরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন দিঘার হোটেল অ্যাসোসিয়েশন-এর সঙ্গে এক বৈঠকের পর জানিয়ে দেয় বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে পর্যটকদের হোটেল ছাড়তে হবে। সেই অনুযায়ী পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-সহ সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র থেকেই সকাল থেকে হোটেল ও রিসর্ট খালি করতে থাকেন পর্যটকরা। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সবমিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক এদিন ফিরে গিয়েছেন।
দেখুন ভিডিও
ওই সূত্র অনুযায়ী, অধিকাংশ পর্যটক নিজের গাড়িতে ফিরেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে কয়েকটি বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেই বাস এবং বেসরকারি বাসে করে অন্যান্য পর্যটকরা ফিরে গিয়েছেন। ফলে সকাল থেকে একদিকে যেমন ছিল বাসস্ট্যান্ডে ভিড় তেমনি পেট্রল ও ডিজেলের পাম্পগুলিতেও গাড়ির লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এদিন নিষেধ করা সত্ত্বেও বেপরোয়াভাবে সমুদ্রের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করার জন্য ছয় পর্যটককে পুলিশ আটক করে। ক্ষমা চেয়ে তাঁরা শেষপর্যন্ত রেহাই পান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা এনডিআরএফ সদস্যদের। হাওয়ার দাপটে গাছের ডাল ভেঙে যাতে কেউ আহত না হন সেজন্য প্রশাসনের তরফে ছাঁটা হয়েছে ডাল। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
হাওয়া অফিসের শেষ বুলেটিন অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ‘দানা’। ওড়িশার ধামারা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পারাদ্বীপ থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘দানা’ এখনও সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসাবে রয়েছে। শক্তি বৃদ্ধি করে বুধবার রাতে তা ‘প্রবল ঘূর্ণঝড়’ –এ পরিণত হতে পারে। তখন হাওয়ার বেগ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। মধ্যরাতের পর থেকে সমুদ্রের উপর হাওয়ার গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার সকালে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সমুদ্রের উপর ঝড়ের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি কখনও কখনও হতে পারে ১২০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হবে। শুক্রবার ঝড়ের গতিবেগ কিছুটা কমতে পারে। ওই দিন সকালে ৯৫ থেকে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড় চলতে পারে। রাতে ঝড়ের গতি কমে হবে ৬৫ থেকে ৭৫ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলার কিছু অংশে অতি প্রবল (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলার কিছু অংশে অতি প্রবল (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।