‘দানা’র ‘ল্যান্ডফলের’ সময় কতটা উত্তাল হবে সমুদ্র?সময় যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে আতঙ্ক। সকলের নজর এই মুহূর্তে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দানার দিকে। আবহাওয়াবিদরা প্রতি মুহূর্তে জানাচ্ছেন, স্থলভাগ থেকে কতদূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়।
বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়, বেলা বাড়তেই দানা-র কেন্দ্রবিন্দুর দূরত্ব কমেছে সাগর, পারাদ্বীপ থেকে। শেষ আপডেট অনুযায়ী সাগরদ্বীপ থেকে দানার কেন্দ্রবিন্দু ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে। পারাদ্বীপ থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এবং ধামারা থেকে ২১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান ডানার কেন্দ্রবিন্দুর। দানার নিজস্ব গতি ঘন্টায় ১৩ কিলোমিটার।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, দানা আছড়ে পড়বে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম হিসেবে।
ঘূর্ণিঝড় দানা স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে জলোচ্ছ্বাস প্রবল হতে পারে, সতর্ক করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪ ফুটেরও বেশি!
সমুদ্রে ১২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ‘দানা’। অভিমুখ মূলত উত্তর পশ্চিম। আবহবিদেরা জানিয়েছেন, ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে ‘দানা’ আছড়ে পড়তে পারে। ওই সময়ে অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত উপকূলে ঢেউয়ের উচ্চতা হবে সবচেয়ে বেশি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে থেকে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে ঢেউ উঠতে পারে ৯.৮৪ ফুট থেকে ১৪.৪৩ ফুট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে উপকূল খালি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নৌকা, ছোট ছোট জলযান নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছে হাওয়া অফিস।
দানার কারণে বুধ এবং বৃহস্পতি হালকা মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। কোথাও অতি ভারী বৃষ্টির। কিছু এলাকায় অত্যন্ত ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সবথেকে ক্ষতির সম্ভাবনা পূর্ব মেদিনীপুরে।
পূর্ব মেদিনীপুর ১২০ কিলোমিটার গতিবেগ থাকার সম্ভাবনা ঘূর্ণিঝড়ের। ১-২ মিটার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে হাওয়া অফিসের তরফে। দুই পরগনায় ৯০ কিলোমিতার বেগে ঝড়ের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। প্রবল দুর্যোগের কারণে কাঁচা বাড়ি, বিপজ্জনক বাড়ি, শষ্যের ক্ষতির আশঙ্কা।
ইতিমধ্যে ‘দানা’র মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে দিঘা, মন্দারমণির মতো উপকূলঘেঁষা এলাকায়। পর্যটকদের আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উপকূল সংলগ্ন এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। যাঁদের কাঁচা বাড়ি রয়েছে, তাঁরা ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গে ‘ল্যান্ডফল’ না হলেও ‘দানা’য় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। সেখানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঝড়ের গতি হতে পারে ১০০ কিলোমিটারের বেশি। সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরে।
এ ছাড়া, সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অংশ ‘দানা’র তাণ্ডবের সাক্ষী থাকবে। ঝড়ের গতি হতে পারে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। কলকাতায় ঝড় বইতে পারে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে। সতর্কতা জারি করা হয়েছে হলদিয়া এবং কলকাতা বন্দরেও।
‘দানা’র প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। একই সম্ভাবনা রয়েছে ঝাড়গ্রামেও। তবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়াতেও শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে অতি ভারী বর্ষণের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওই সতর্কতা রয়েছে শুক্রবার ঝাড়গ্রামে। দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টি চলবে শনিবারও।